বিবৃতি
জাতীয় সম্পদ পুনর্গঠন
National resource

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অনাদায়ী ঋণের সমাধান হিসেবে জাতীয় সম্পদ পুনর্গঠন (ন্যাশনাল এ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন) কোম্পানি লিমিটেড (এনএআরসিএল) কর্তৃক ইস্যুকৃত ৩০,৬০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণপত্রের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক দেয় নিশ্চয়তার (গ্যারান্টির) মন্ত্রীসভার অনুমোদন আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে কতিপয় পুঁজিপতিদের তল্পিবাহক সরকারের স্যাঙাতদের সুবিধা প্রদানের নীতির একটি মুখোশ এবং আমানতকারী ও করদাতাদের অর্থের অপব্যয়।

সরকার দাবি করছে যে ব্যাঙ্ক সমূহের উদ্বর্ত্য পত্র (ব্যালান্স শিট)কে পরিচ্ছন্ন করার জন্য স্বীকৃতি (রেকগনিশন), সমাধান (রেজোলিউশন), পুনর্মূলধনীকরণ (রিক্যাপিটালাইজেশন) এবং সংস্কার (রিফর্ম) এর “চার র রণনীতি” প্রয়োগ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, ওই পরিকল্পনার ফলে ব্যাঙ্কগুলি গত ৬টি অর্থ বছরে ৫,০১,৪৭৯ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করেছে। সরকার যে বিষয়ে নিশ্চুপ তা হল যে, ওই ৬ বছরে ১৮,২৮,৫৬৪ কোটি টাকার বিপুল অর্থ অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ও ৬,৮৩,৩৮৮ কোটি টাকা অশোধ্য ঋণ হিসেবে খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। ঋণের “দ্রুত পুনরুদ্ধার”এর পরিবর্তে আমরা যা পেয়েছি তা হল দ্রুত ঋণ মুছে দেওয়ার নীতি। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকার মূলধন যোগান দেওয়া হয়েছে ওই সময়কালে। যদি মোদি জমানার প্রথম ৬ বছরের মোট অনুৎপাদক ঋণের বার্ষিক সংযুক্তি, ঋণ মুছে দেওয়া, এবং পুনর্মূলধনীকরণের পরিমাণ একত্রে যোগ করা হয় তাহলে আমানতকারী ও করদাতাদের অর্থের অপব্যয় দাঁড়াবে ২৮ লক্ষ কোটি টাকার বিপুল অঙ্কে যা আমাদের জিডিপির ১৪ শতাংশের মতো।

প্রদেয় ঋণ বকেয়া রাখার জন্য কোনও রকম সাজা না দিয়ে বকেয়া ঋণের বোঝা বহন করতে জনগণকে বাধ্য করার আশ্বাস দিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের প্রতি সরকার কী ধরনের বার্তা দিতে চাইছে ও কী ধরনের ঋণ-সংস্কৃতিকে লালন করতে চাইছে? মনে রাখুন, সাধারণ কৃষক, নারী ও গরিবরা ক্ষুদ্র ঋণ বকেয়া রাখলে কীরকম গণ-অপমান ও হয়রানির শিকার হয় – যেখানে অতিধনী ঋণখেলাপিদের পরিচয় গোপন রাখা হয় ও তাদের বকেয়া ঋণের দায় জনগণকে বহন করতে হয়।

ওই সমস্ত ঋণ-দায় থেকে মুক্তি প্রাপ্ত সুবিধেভোগীরা হয় সরকারের প্রিয সাঙাত বা অসাধু ঋণগ্রহীতা যাদের পরিচয় সরকার লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এটি পরিষ্কার যে যখন আন্তর্জাতিক বেসেল মান অনুযায়ী যথোপযুক্ত মূলধন বজায় রাখার জন্য মূলধন ঢালতে হয়, ব্যাঙ্কের সাধারণ আমানতকারী ও সাধারণ করদাতাদের সেই ভার বহন করতে হয়।

তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেওয়া যায় যে জনগণের অর্থ ব্যবহার করে ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শীট পরিস্কার করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল জনস্বার্থে অতীতের খারাপ ঋণপ্রদানকে শুধরে নেওয়া, তাহলে সরকার কেন পরিষ্কারভাবে অনেকের আশঙ্কাকে নাকচ করতে এটা জানাচ্ছে না যে, চলমান সংযুক্তির পরে ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারিকরণ করা হবে না? অনুরূপ সরাসরি বক্তব্য ব্যতীত এটি সন্দেহ করা যথাযথ যে ব্যালান্স শীট পরিষ্কার করার পিছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য হল সরকারের প্রিয় সাঙাতদের কাছে ওই সমস্ত ব্যাঙ্ককে “পরিচ্ছন্ন অবস্থা”য় বিক্রি করে দেওয়া।

উপরন্তু, এনএআরসিএল কর্তৃক ইস্যুকৃত ৩০,৬০০ কোটি টাকার ঋণপত্রকে নিশ্চয়তা প্রদানের সরকারি সিদ্ধান্ত আসলে ব্যালান্স শীট বহির্ভুত একটি সাঙাত পুঁজির তল্পিবহনের বন্দোবস্ত কারণ এই নিশ্চয়তাগুলি বাজেটের “সারির নীচে থাকা” বিষয় যা রাজকোষ ঘাটতিকে বাড়াবে না।

আপাতভাবে, বেসরকারি লগ্নিপুঁজির মালিকানাধীন সম্পদ পুনর্গঠন সংস্থাগুলি (এআরসি) “খারাপ ঋণ”কে ব্যাঙ্কগুলির ব্যালান্স শীট পরিচ্ছন্ন করার জন্য কিনে নেয়। কিন্তু সেগুলি রদ্দি মালের দরে কেনা হয়। ফলে সেগুলির ব্যয়ভার ব্যাঙ্কগুলির (যাদের খারাপ ঋণ কেনা হয়) উপরে পড়ে এবং শেষমেশ তা সাধারণ আমানতকারীর ঘাড়ে চাপে। এমনকি এআরসিগুলির ইস্যুকৃত ঋণপত্রের জন্যও ‘সার্বভৌম নিশ্চয়তা’ দেওয়ার জন্য সরকারের অস্বাভাবিক প্রকরণ গ্রহণের ফলে অনাদায়ের ক্ষেত্রে সরকারি কোষাগারের উপরেই দায় চাপবে।

সিপিআই (এম-এল) কেন্দ্রীয় কমিটি

খণ্ড-28
সংখ্যা-34