মোদীর কাছে কিষাণ মোর্চার খোলা চিঠি : জাতির উদ্দেশে আপনার বার্তা এবং আপনার উদ্দেশ্যে কৃষকের বার্তা
open letter to Modi

(প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার এই খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয় গত ২১ নভেম্বর ২০২১)

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

১৯ নভেম্বর ২০২১ সকালে জাতির উদ্দেশে আপনার দেওয়া বার্তা দেশের কোটি কোটি কৃষক শুনেছে। আমরা লক্ষ করেছি যে ১১ দফা আলোচনার পরে দ্বিপাক্ষিক সমাধানের পরিবর্তে আপনি একতরফা ঘোষণার পথ বেছে নিয়েছেন, তবে আমরা আনন্দিত যে আপনি তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা করেছেন। আমরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি আপনার সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী, আপনি ভালো করেই জানেন তিনটি জনবিরোধী আইন বাতিলই এই আন্দোলনের একমাত্র দাবি নয়। প্রথম থেকেই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা আরও তিনটি দাবি তুলে এসেছে।

১) সব কৃষককে তাদের সব কৃষিজাত পণ্যের জন্য চাষের সম্পূর্ণ খরচের উপর ভিত্তি করে (সি২+৫০%) ন্যূনতম সমর্থন মূল্য পাওয়ার একটি আইনি অধিকার দিতে হবে, যাতে দেশের প্রতিটি কৃষক তাদের সব ফসল কমপক্ষে সরকার দ্বারা ঘোষিত ন্যূনতম সমর্থন মুল্যে বিক্রি হওয়ার নিশ্চয়তা পায় (আপনারই সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে এই সুপারিশ করেছিল এবং আপনার সরকারই সংসদে এটি ঘোষণা করেছিল)।

২) সরকারের প্রস্তাবিত ‘বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল, ২০২০/২০২১’র খসড়া প্রত্যাহার করুন (আলোচনার সময়, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এটি প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু তারপরে তা অমান্য করে সংসদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়)।

৩) ‘কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ইন ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন এ্যান্ড অ্যাডজয়েনিং এরিয়াস বিল ২০২১’এ রাখা কৃষকদের জন্য শাস্তির বিধানগুলি সরান (এই বছর সরকার কিছু কৃষক-বিরোধী বিধান সরিয়ে দিয়েছে তবে ১৫ ধারার মাধ্যমে আবার কৃষকদের জন্য কিছু শাস্তির প্রস্তাবও রেখে দিয়েছে)।

আপনার বক্তব্যে এই বড় দাবিগুলির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও ঘোষণা না থাকায় কৃষক হতাশ হয়েছে। শুধুমাত্র তিনটি আইন ঠেকানোর জন্যেই নয়, তার পরিশ্রমের মূল্যের আইনি গ্যারান্টি পাওয়ার আশা নিয়েও কৃষক এই ঐতিহাসিক আন্দোলন চালাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গত একবছরে এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় আরও কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, অবিলম্বে যার সমাধান করাও প্রয়োজন।

৪) দিল্লী, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্যান্য অনেক রাজ্যে এই আন্দোলনের সময় (জুন ২০২০ থেকে এখন পর্যন্ত) হাজার হাজার কৃষককে শত শত মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই মামলাগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৫) লখিমপুর খেরি হত্যা মামলার নেপথ্যনায়ক এবং ১২০বি ধারার অভিযুক্ত অজয় মিশ্র টেনি এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং আপনার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী রয়েছেন। তিনি আপনার এবং অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথেও একই মঞ্চে থাকছেন, তাকে বরখাস্ত করে গ্রেফতার করতে হবে।

৬) এই আন্দোলনে এপর্যন্ত প্রায় ৭০০ কৃষক শহীদ হয়েছেন। তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শহীদ কৃষকদের স্মরণে শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার জন্য সিংঘু সীমান্তে জমি দিতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কৃষকদের কাছে আবেদন করেছেন যে, আমরা যেন ঘরে ফিরে যাই। আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা এই রাস্তায় বসে থাকা পছন্দ করি না। আমরাও চাই যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অন্যান্য সমস্যাগুলির সমাধান হয়ে যাক আর আমরা আমাদের বাড়ি, পরিবারের কাছে এবং কৃষিকাজে ফিরে যাই। আপনিও যদি তাই চান, তাহলে সরকারের উচিত অবিলম্বে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সাথে উপরের ছয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করা। ততদিন পর্যন্ত সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-41