ঘটনা ও প্রবণতা
Events and trends-0

কোভিড১৯ অতিমারীর আগেই ভারতীয় গৃহস্থরা ঋণ সংকটে জর্জরিত। এক কর্মসূচি গবেষণা সংস্থা ‘দ্বারা রিসার্চ’ তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছেন অতিমারী শুরুর অনেক আগের থেকে ভারতে গ্রামীণ এলাকায় ঋণ সংকট দ্রুতই বেড়ে হয়েছে ৮৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় হয়েছে ৪২ শতাংশ। গার্হস্থ্য ঋণ ২০২০-২১ সালে জিডিপি’র হারে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৭.৩ শতাংশ যা ২০১৯-২০ সালে ছিল ৩২.৫ শতাংশ।

দেশীয় শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ লকডাউনের সময় কোনো বেতন পাননি এবং ৩১ শতাংশ লকডাউনের ৬ মাস পরে কোনো কাজ পাননি। খুব কম শ্রমিকই তাদের মালিকের থেকে সাহায্য পেয়েছেন। পারিবারিক খরচ চালানোর জন্য তাঁরা আরও ঋণের ফাঁদে জড়িয়েছেন।

বিমুক্ত জাতি এবং যাযাবর উপজাতিদের জন্য ‘জাতীয় অ্যালায়েন্স গ্রুপ’ সহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠন একটি সমীক্ষা করে — ৯৮,০০০ দলিত, মুসলিম, আদিবাসী এবং বিমুক্ত জাতির পরিবার যারা ৪৭৬টি ছোট ছোট গ্রামে এবং শহুরে মহল্লায় থাকেন তাদের নিয়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি ৪টি দলিত এবং বিমুক্ত জাতির পরিবারের মধ্যে ৩টি পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়েছেন। কর্মহীন হয়ে তাঁরা চড়া সুদে মহাজনদের থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন।

Events and trends-1

সম্প্রতি নীতি আয়োগ একটি দারিদ্র সূচক প্রকাশ করেছে। সেই সূচক অনুযায়ী তৃতীয় স্থানে রয়েছে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। প্রথম স্থানে বিহার এবং দ্বিতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড।

নীতি আয়োগের প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক অনুযায়ী বিহারে মোট জনসংখ্যার ৫১.৯১ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে ৪২.১৬ শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশে ৩৭.৭৯ শতাংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেছেন। বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। সেখানে মোট জনসংখ্যার ৩৬.৬৫ শতাংশ গরিব।

উল্লেখযোগ্য ভাবে কেরল (০.৭১ শতাংশ), গোয়া (৩.৭৬ শতাংশ), সিকিম (৩.৮২ শতাংশ), তামিলনাড়ু (৪.৮৯ শতাংশ) পঞ্জাব (৫.৫৯ শতাংশ) এবং ছত্তীসগঢ় (৫.৯৭ শতাংশ) তালিকার নীচের দিকে রয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দাদরা এবং নাগর হাভেলি (২৭.৩৬ শতাংশ), জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ (১২.৫৮ শতাংশ), দমন এবং দিউ (৬.৮২ শতাংশ)। তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে দিল্লী। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তুলনায় সেখানে দারিদ্রের হার কিছুটা কম, ৪.৭৯ শতাংশ।

তবে, সূচকে বিহারের অবস্থা অন্য রাজ্যগুলির থেকে বেশ করুণ। এর কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জনসংখ্যার একটা বড় অংশ মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে স্কুলে না যাওয়ার ফলে রান্না করা মিড-ডে-মিল পায়নি পড়ুয়ারা। এছাড়া রান্নার জন্য জ্বালানি এবং বিদ্যুতের অভাব এর বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ নভেম্বর ২০২১

Events and trends-2

এই প্রথম দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলের উন্নতি মাপতে নেমেছিল সরকারের পরামর্শদাতা নীতি আয়োগ। সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা গেল কিছুক্ষেত্রে ভরাডুবি হয়েছে কলকাতার। ভদ্রস্থ কাজের সুযোগ এবং আর্থিক বৃদ্ধির মাপকাঠিতে এই মহানগরী সূচকটির আওতাভুক্ত ৫৬টি শহরের মধ্যে সবথেকে পেছনে চলে গিয়েছে। ক্ষুধা, দারিদ্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য, কেনাকাটা ও উৎপাদন, শিল্প-উদ্ভাবন-পরিকাঠামো, অসাম্য সহ মোট ১৫টি মাপকাঠির বিচারেও সার্বিকভাবে কলকাতা সূচকের একেবারে শেষ সারির ১০টি শহরের একটি।

এই মুহূর্তে কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে রাজ্য। শিল্পে লগ্নি টানার বার্তা দিতে একাধিক পদক্ষেপও করছে। তবে নীতি আয়োগের সূচক বলছে, ভালো কাজের সুযোগ এবং আর্থিক উন্নতির নিরিখে কলকাতার বহু পথ হাঁটা বাকি। এই মাপকাঠিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে বেকারত্ব হ্রাস, নতুন সংস্থায় কর্মসংস্থান, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, এটিএম ও ব্যাঙ্ক শাখার সংখ্যা সহ ১২টি লক্ষ্যের ভিত্তিতে।

নীতি আয়োগের এই সূচকের নাম হল ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি), আর্বান ইন্ডিয়া ইনডেক্স’। মোট ৫৬টি শহরাঞ্চল এই সূচকের আওতায়, যার একটি কলকাতা। এই সূচকে, ১৫টি মাপকাঠিতে দেশের বিভিন্ন শহরের উন্নতি যাচাই করা হয়েছে। প্রতিটি মাপকাঠিতে নম্বর ১০০।

সার্বিকভাবে ‘এসডিজি আর্বান ইন্ডিয়া ইনডেক্স’এর আওতায় সবথেকে পিছিয়ে থাকা ১০টি শহরের মধ্যে একটি কলকাতা। সঙ্গী ধানবাদ, পটনা, ইটানগর, আগ্রা ইত্যাদি। সবার সেরা শিমলা।

নাগরিকদের মোটামুটি ভদ্র কাজ দিতে পারা এবং আর্থিক বৃদ্ধির মাপকাঠিতে ৫৬টি শহরের মধ্যে কলকাতা সকলের পেছনে। ১০০-তে নম্বর মাত্র ৩। এইক্ষেত্রে সেরা বেঙ্গালুরু।

অন্যান্য মাপকাঠির মধ্যে কলকাতা ক্ষুধায় ২৭ নম্বর পেয়ে ৫৪, দারিদ্রে ৪০ পেয়ে ৫৪, শিল্প-উদ্ভাবন-পরিকাঠামোয় ৪৮ পেয়ে ৩৭, কেনাকাটা ও উৎপাদনে ৬৪ পেয়ে ৪৭।

এক একটি মাপকাঠিতে র‌্যাঙ্কিং হয়েছে ১০০ নম্বরে। কেউ ১০০ পেলে বুঝতে হবে শহরটি ২০৩০ সালের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে। শূন্য (০) পাওয়ার মানে, ওই লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে সব থেকে দূরে। ০ থেকে ৪৯’র মধ্যে নম্বর পাওয়াদের এগিয়ে যেতে আগ্রহী তকমা দেওয়া হয়েছে। কাজ এবং আর্থিক উন্নতিতে কলকাতা এই সারিতেই। সেরা বেঙ্গালুরু। তারাই শুধু ৬৪’র বেশি নম্বর পেয়েছে। এমনকি এই মাপকাঠিতে ৫০’র বেশি জুটেছে মাত্র ১৩টি শহরের।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ নভেম্বর ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-42