খবরা-খবর
পার্টির উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্মেলন
District Conference

২৮ নভেম্বর পার্টির উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্মেলনে নানাবিধ শ্রেণী-স্তরের এক ব্যপ্ত পরিসর থেকে প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। রেল, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের শ্রমিক-জুট মজদুর-রন্ধনকর্মী-নির্মাণ শ্রমিকের-গ্রামীণ শ্রমজীবী থেকে শুরু করে এক ঝাঁক ছাত্র-যুব, সাংস্কৃতিক কর্মী, মহিলা আন্দোলনের কর্মী ও নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে ১৫৫ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। যারমধ্যে মহিলা ৩২ জন, শ্রমিক ৬৪ জন (শহর ও গ্রাম মিলিয়ে), কৃষিফ্রন্টে ১৮ জন, ছাত্র ১৭ জন। বারাসাতের সুভাষ হলে আয়োজিত এই সম্মেলন নিশ্চিতভাবে সমগ্র পার্টি সংগঠনে এক নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও তার পাশাপাশি এরাজ্যের শাসকের বঞ্চনা প্রতারণা দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী জনগণকে বামপন্থী আন্দোলনে সামিল করার লক্ষ্য সম্মেলন তুলে ধরেছে। জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে গিয়ে কৃষিক্ষেত্রের কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, জুট শিল্প সহ শ্রমিকদের উপর শাসকদল ও মালিকপক্ষের মদতপুষ্ট সমাজবিরোধীদের হামলা মোকাবিলায় নতুন করে ঐক্যবদ্ধ ট্রেড ইউনিয়ন কাজের ধারা গড়ে তোলা, এপ্রশ্নে ধাপে ধাপে স্থিতাবস্থা কাটিয়ে ওঠা, নতুনভাবে এগিয়ে আসা ছাত্র যুবদের সংগঠনের সর্বস্তরে অগ্রণী দায়দায়িত্বে নিয়ে আসা, মহিলাদের আন্দোলনে তাঁদের কাজের দাবিকে গুরুত্বের সাথে সামনে আনা, ছাত্রফ্রন্টের সক্রিয়তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দেওয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নানাবিধ শক্তির সাথে ঐক্যবদ্ধ কাজের এক নতুন পরিসর গড়ে তোলা, এই সমস্ত দিকগুলি আলাপ আলোচনায় গুরুত্ব পায়। মোট ২৮ জন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।

Conference of the party

সম্মেলনে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল বলেন, রাজ্যে আমাদের পার্টির প্রোফাইল বেড়েছে, কিন্তু গণভিত্তি বাড়ানোর কাজে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পুনর্গঠন করতে হবো, নবীন শক্তিকে সাহসের সাথে দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। রাজ্য পর্যবেক্ষক জয়তু দেশমুখ বলেন, রাজ্য পার্টির অগ্রগতিতে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা অগ্রণী ভূমিকা নেবে, এই জেলায় শ্রমিক ফ্রন্টের কাজ নতুন রাস্তা দেখাবে, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে কার্যকরি ভুমিকা গ্রহণ করবে এই বিশ্বাস রাজ্য কমিটির রয়েছে। জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কৃষক ও কৃষি মজুররা নিশ্চিতভাবেই নানারকম ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে রয়েছেন, সেখানে আমাদের অংশ নেওয়া প্রয়োজন।

বিদায়ী জেলা সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্ত বলেন, নীচুতলায় পার্টি ব্রাঞ্চগুলিকে সক্রিয় না করতে পারলে সমস্ত পার্টি সদস্যদের পার্টি ও গণকাজে সামিল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এপ্রশ্নে আমাদের অগ্রাধিকার দিতেই হবে। সীমিত একটা শক্তিকে নিয়ে চলতে আমরা যেন অভ্যস্ত না হয়ে পড়ি এবিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। সমস্ত পার্টি সদস্যদের উপযোগী কাজের বৈচিত্র গড়ে তোলা — এটাও একটা সৃজন, দায়িত্বশীলদের এবিষয়ে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে। সম্মেলনের শুরুতে জেলায় ’৭০ দশকের সমস্ত শহীদের তালিকা তৈরি করা, তাঁদের জীবনী ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রকাশনা করে নতুন প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন জেলা কমিটির সদস্য নবেন্দু দাশগুপ্ত। জেলা কমিটি সদস্য নির্মল ঘোষ আর্থিক বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। ২৬ জনের জেলা কমিটি নির্বাচিত হয়। সুব্রত সেনগুপ্ত জেলা সম্পাদক রূপে পুর্ননির্বাচিত হন। তিনি বলেন,‌‌ এই জেলায় তিতুমীরের সামন্তবাদ বিরোধী লড়াই, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ, যাকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা হয় তার প্রথম শহীদ মঙ্গল পান্ডের আত্মবলিদানের ঐতিহ্য রয়েছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনে সেই গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা হবে৷ এ জেলার বরানগর, কাশীপুর, বারাসাতে গণহত্যা চালিয়ে একটা প্রজন্মকে শেষ করে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল। বিপ্লবী যুব ছাত্রদের সেই বিপ্লবী ঐতিহ্যকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-42