প্রতিবেদন
শতবর্ষে সোমনাথ হোড়
Somnath Hore

“তাঁর প্রতিটি কাজের মধ্যেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি আসলে একটা গাছের মতন যে গাছ সবাইকেই ছায়া বিলিয়ে দেয়” — চন্দনা হোড়।

একটি ছবি, চিত্রিত ভাস্কর্য, মুহূর্তেই হয়ে ওঠে বাঙ্ময়, সজীব। সে ছবি কথা বলতে থাকে, বলতে থাকে তার ইতিহাস, তার অভীপ্সা, তার স্বপ্নের কথা। আমরা শুনতে পাই না, কিন্তু অনুভব করতে পারি। আর এখানেই রচিত হয়ে যায় শিল্প আর বাস্তব জগতের মেলবন্ধনের ইতিকথা, গাথা-সঙ্গীতের মর্মকথা। একটা গ্রিসীয় পানপাত্রের গায়ে আঁকা ছবি দেখে মোহিত হয়ে পড়েছিলেন কবি কিটস। সেই ছবি কবিকে এক বাঙ্ময় কথার সরব জগতে নিয়ে গিয়েছিল। কবি লিখেছিলেন যে সঙ্গীত আমরা অহরহ শুনি তা তো মধুর, কিন্তু যে সঙ্গীত শোনা যায় না তা মধুরতর। গ্রিসীয় পানপাত্রের গায়ে আঁকা ছবি তাঁকে এতটাই মোহিত করেছিল যে তিনি যেন সেই মধুরতম অশ্রুত সঙ্গীত শুনতে পাচ্ছিলেন। সামান্য ব্যবধান বিমোচনের জন্যে এক গূঢ় ইচ্ছার অপরিতৃপ্তির যন্ত্রণা এই ছবিতে মূর্ত হয়ে উঠেছিল।

একটি ছোট্ট ঘটনা শিল্পীর কাছে তুচ্ছ বিবেচিত হয় না। শিল্পী তো কবিই। তিনি সেই তুচ্ছ ঘটনার মধ্যেই খুঁজে পান এক অনন্য দর্শন। সোমনাথ হোড়’এর ছোট্ট মেয়ে চন্দনা পড়ে গিয়েছিল। তার হাঁটুতে আঘাত লাগে, সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্তক্ষরণ নিছক রক্তক্ষরণে থেমে থাকেনি। বরং এই রক্তক্ষরণ শিল্পী সোমনাথ হোড়’কে তাঁর ‘উন্ডস’ সিরিজের ছবি নির্মাণের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল। কফি তৈরি করতে গিয়ে গরম দুধ পড়ে পুড়ে যায় তাঁর শরীরের একাংশ। এই দহন জন্ম দিয়েছিল তাঁর অসামান্য ভাস্করায়িত দ্রৌপদীর, যার শরীরের কটিদেশ থেকে নিম্নাঙ্গ দগ্ধে-যাওয়া দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অপমানাহতা, সম্মানহানির শিকার হওয়া এক নারীত্বের প্রতিমূর্তি। এখানেই শিল্পী সোমনাথ হোড়’এর বিশিষ্টতা, তাঁর স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত শিল্পকর্মের অনন্ত অনঙ্গ।

সোমনাথ হোড়ের জন্ম আজ থেকে শতবর্ষ আগে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বরমা গ্রামে। সেখানকার স্কুলের শিক্ষক দেবেন্দ্র মজুমদার সোমনাথ সহ তাঁর সতীর্থদের ড্রইং শেখাতেন। এই ড্রয়িং ক্লাসে সোমনাথ মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, তাঁর ড্রয়িং ক্লাসে তিনি খুব মন দিয়ে কাজ করতেন। এই কাজ মানে “বাজারি কপিবুক থেকে চেয়ার, টেবিল, বাড়ির গেট, গোলাপফুল প্রভৃতি। এগুলি করতে গিয়ে সোজা করে লাইন টানা, বেঁকিয়ে টানা, গোল বৃত্ত আঁকা ইত্যাদিতে আমি মজা পেতাম। মাস্টারমশাই আমাকে আঁকায় খুব উৎসাহ দিতেন।” তাঁর প্রাথমিক শিক্ষালাভ এই গ্রামেই হয়েছিল। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। এরপর তিনি কলকাতায় এসে রিপন কলেজে ভর্তি হন। এসময় প্রখ্যাত শিল্পী চিত্তপ্রসাদের সান্নিধ্যে আসেন তিনি।

বিশ শতকের চল্লিশের দশকের প্রত্যূষপর্বে সোমনাথ শিবু নামীয় তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সান্নিধ্যে আসেন এবং পরবর্তীতে পার্টির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন। পার্টির পত্রপত্রিকায় তাঁর আঁকা ছবি মুদ্রিত হতে থাকে। গত শতকের চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে পঞ্চাশের (১৩৫০/১৯৪৩) মন্বন্তরের সময় সমসময়ের মর্মান্তিক দৃশ্যপট তিনি তাঁর আঁকা ছবির পটচিত্রে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। পাশাপাশি তেভাগা আন্দোলনের পটপ্রেক্ষায় তাঁর আঁকা ছবিগুলিও তাঁর রাজনৈতিক দায়বদ্ধ মন-মনস্কতার পরিচয় বাহক।

উত্তরকালে শান্তিনিকেতনে থাকার সময় সোমনাথ রামকিঙ্কর এবং বিনোদবিহারীর সান্নিধ্যে এসে আরও সমৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং এর প্রতিফলন ঘটেছিল তাঁর শিল্পীত চিত্র-ভাস্কর্যে। আসলে বিগত শতকের চল্লিশের দশকের জনসমাজে আলোড়ন তোলা ঘটনাবলি সোমনাথের চিন্তা-চৈতন্যে নিবিড় প্রভাব ফেলেছিল। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্কময় দিনগুলি এবং অন্যদিকে মন্বন্তরের মানবতা-বিপন্নকারী আবহ তাঁকে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছিল। ১৯৪২এ তিনি তাঁর স্বভূমি চট্টগ্রামে ফিরে যান। এর অব্যবহিত পরে চট্টগ্রামে শুরু হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এসময়ে তাঁর বয়স একুশ বছর। তাঁর পরিবারও এই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল। বাবা আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন। মা’ই তাঁদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় সরাসরি ত্রাণের কাজে যুক্ত হন সোমনাথ। আর এই সূত্রেই তিনি আসেন কমিউনিস্ট পার্টির নিবিড় সান্নিধ্যে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সক্রিয় শরিক হন। এসময় তাঁর দিন অতিবাহিত হতো পার্টির কমিউনে। এই সময়েই তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছেন, সেসব ছবির প্রদর্শনীও করেছেন। তাঁর আঁকা ছবির বেশ কিছু মুদ্রিত হয়েছিল পার্টির মুখপত্র ‘জনযুদ্ধ’ এবং ‘পিপলস ওয়ার’এ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ভবানী সেন তাঁকে নিয়ে যান কলকাতায়। পরের বছর তিনি আসেন পার্টির সম্পাদক পূরণচাঁদ যোশীর সংসর্গে, পরিচিত হন পার্টি নেতা বঙ্কিম মুখার্জী এবং মুজাফ্ফর আহমেদ’এর সঙ্গেও। আর সমসময়ের পার্টি পরিচালিত আন্দোলনের আবহে তাঁর শিল্পীসত্তা নতুন এক দিগদর্শনের সন্ধান পায়। সমসময়ের প্রপীড়িত মানুষের লড়াই-সংগ্রাম আর ইতিহাস মূর্ত হতে থাকে তাঁর শিল্পকর্মের অবয়বে।

কিন্তু শুধুমাত্র প্রচার-শিল্পে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সোমনাথ। তিনি সৃজনশীল চিত্রকর হয়ে ওঠার প্রত্যাশী হয়ে ওঠেন। আর এই কারণেই তিনি ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। এখানে অধ্যয়নকালে সোমনাথ শিল্পী জয়নুল আবেদিনের সংসর্গে আসেন। তাঁর কাছ থেকে সোমনাথ শেখেন শিল্পের আঙ্গিকগত শিক্ষা। তিনি লিখেছিলেন, “আর্ট স্কুলে আবেদিন সাহেবের কাছে হাত মক্সো করার কাজ শুরু হল। প্রথম বার্ষিকে ব্ল্যাকবোর্ডে সাদা খড়ি দিয়ে রেখাপ্রধান ছবি করতাম; খুব মনোযোগ সহকারে আঁকতাম; আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা, ভালো ছবি করতে হলে করণকৌশল আয়ত্ত করতে হবে। আমাদের পূর্বসূরীদের কাজ দেখে নিজের অভাববোধ প্রকট হতো। কেবলই মনে হতো — অমন করে কবে আঁকব? আঁকতে পারব কি?” এই আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা তাঁকে তাঁর অভীষ্ট সাধনের লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিল। একজন সংবেদনশীল শিল্পী হিসেবে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন প্রপীড়িত মানুষের অন্তরের যন্ত্রণাদগ্ধ অন্তঃস্থলকে। ‘লাঞ্ছিত মানবতা’ তাঁকে যন্ত্রণাহত করেছিল। তাঁর বিবেকি শিল্পী সত্তা মানবতার এই রক্তাক্ত ক্ষরণ তাঁকে সংগ্রামী মানবতার পক্ষে অবিচল অবস্থানে আসীন করেছিল। কোনোরকম প্রলোভনের কাছে তিনি তাঁর শত প্রয়োজন সত্ত্বেও মাথা নত করেননি। একবার জনৈক বিদেশী তাঁর সামনে তাঁর অ্যাটাচি খুলে থরে থরে সাজানো ডলার দেখিয়ে প্রলুব্ধ করলে সোমনাথ তাঁর পোশাকের নিচে আবৃত পেট উন্মুক্ত করে দেখিয়ে বলেছিলেন তাঁর তো এই ছোট্ট পেট! এরজন্যে ওসবের দরকার নেই।

Somnath Hore in the centenary_0

জনৈক আলোচক তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন, “আর্ট কলেজে ভর্তির আগে এক দায়বোধ থেকে তাঁর সৃজনে প্রচারধর্মিতা প্রাধান্য পেয়েছিল। পরবর্তীকালে তাঁর কাজে শিল্পমুক্তির আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। সেজন্য বোধকরি তিনি আর কোনোদিন কোনো একটি বিশেষ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাননি। দারিদ্র্য, ক্ষুধা দেখেছিলেন পঞ্চাশ বছর আগে; এই প্রত্যক্ষণই তাঁর সৃষ্টির বিষয় হয়ে থাকে আমৃত্যু। মানবের ট্র্যাজেডি এবং ক্ষত তাঁর অন্তরে এমনভাবে প্রবেশ করে যা তাঁর জীবন, মনন ও সৃষ্টিতে ছাপ ফেলে যায়।”

উত্তরকালে সোমনাথ শান্তিনিকেতনের কলাভবনে শিক্ষকতার দায়িত্বে আসীন হয়েছিলেন। আর এই সময়েই বেশকিছু অসাধারণ শিল্পের ‘ফসল’ ফলিয়েছিলেন তিনি। এই সময়েই তিনি তাঁর ‘ক্ষত’ অর্থাৎ ‘উন্ডস’ সিরিজের ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন যা তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। বিগত শতকের একাত্তরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার দলন তাঁকে নিবিড়ভাবে স্পর্শ করেছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় তাঁর কিছু ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য এক অনুভূতিপ্রবণ আলেখ্য রচনা করেছিল।

কলকাতায় আর্ট কলেজে পড়ার সময় তিনি সমসময়ের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কুলদাচরণ দাশগুপ্তের কন্যা রেবার সঙ্গে পরিচিত হন। এই রেবাই সোমনাথের হাত ধরে তাঁর শিল্পীজীবনে পরিপূর্ণতা এনেছিলেন। রেবাও সোমনাথের পথের সওয়ারি হন কোনোরকম দ্বিধাকে প্রশ্রয় না দিয়েই। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে রেবা এবং সোমনাথ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

জীবনসঙ্গীনী রেবার বেশকিছু পেইন্টিং সম্পর্কে সোমনাথ নিজেই লিখেছিলেন, “রেবার কতগুলি পেইন্টিং এবং ড্রয়িং দেখে মনে হয় — এগুলি করা হয়নি — নিজের থেকে হয়ে গেছে। ছবিতে রংগুলি নিজেরাই যার যার জায়গা দখল করে নিয়েছে। কুকুরের ড্রয়িং দেখে মনে হয় জ্যান্ত কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করতে করতে কখন যেন কাগজে সেঁটে গিয়েছে…।’ আর এরই প্রসঙ্গে চলে আসে আমাদের আলোচনার প্রারম্ভকালীন কবি কিটসের কবিতাটির অনুষঙ্গ।

শান্তিনিকেতনে থাকার সময় সোমনাথ সপরিবারে থাকতেন লালবাঁধে। সেখানে তাঁর বাড়িতে উনুনের আগুনে একদিকে যেমন ভাস্কর্যের ব্রঞ্জগুলো পুড়তো তেমনই অন্যদিকে সন্ধ্যেবেলায় তাঁর বাড়ির আড্ডায় আসতেন সুচিত্রা মিত্র, শম্ভু মিত্রের মতো তাঁর একসময়ের ‘গণসংগ্রামের সহযোদ্ধা’রা।

কিন্তু শান্তিনিকেতনে কি এই শিল্পীকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল? ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রফেসর এমেরিটাস হিসেবে যোগ দেন। এখানে তাঁর চাকরির মেয়াদ প্রথাবিরুদ্ধভাবেই বাড়ানো হয়নি। এই অমর্যাদাকর পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে তিনি যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েছিলেন। যন্ত্রণার মূক শাসন নীরবে সহ্য করেছিলেন। অসম্মানিত এই শিল্পী যখন নতমস্তকে তাঁর বাড়ির দরজায় ফিরে এসেছেন তখন তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা দুজনে এসে দুদিক দিয়ে তাঁর হাত শক্ত করে ধরেছিলেন। তাঁর ‘মাদার অ্যান্ড দ্য চাইলড’ শীর্ষক ভিয়েতনাম বিষয়ক ভাস্কর্যটি কলাভবন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল! যন্ত্রণাহত সোমনাথ একসময় তাঁর লালবাঁধের বাড়িটি বিশ্বভারতীকে দান করে দিয়েছিলেন। অথচ এমত একজন শিল্পীর বাড়িটিও বিশ্বভারতীতে যোগ্য সম্মান পায়নি।

পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি তাঁর দিনলিপিতে লিখেছেন, “সোমনাথ হোরের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ৮৪-তে পৌঁছে তিনি অশক্ত, কিন্তু মন ও কথাবার্তা স্বচ্ছ। পোখরান-২’র ঘটনাকে স্মরণ করে তাঁর করা কালো ব্রোঞ্জের একটি ভাস্কর্য দেখালেন। একটি মানুষ, একটি কুকুর, একটি গাছ ও একটি পাখি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে — সকলেই মৃত — আণবিক শৈত্যে মৃত্যু হয়েছে ওদের। অনির্বচনীয় এর শক্তি, একটি মাস্টারপিস!… আমার মনে হয় এই কাজটি পিকাসোর গ্যের্নিকার থেকেও এগিয়ে রয়েছে। আমি মনে করি এটি জাতিপুঞ্জের সংগ্রহ করা উচিত।”

এই হলেন শিল্পী সোমনাথ হোড়। তাঁর দীক্ষিত মার্কসবাদ তাঁকে কখনো আপসের পথানুসারী করেনি। মাথা উঁচু রেখে তিনি তাঁর শিল্পীসত্তাকে সদাজাগ্রত রেখেছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি কার্যত অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় তিনি একদিন তাঁর একমাত্র কন্যা চন্দনাকে বলেছিলেন যে তিনি দেখতে পাচ্ছেন আকাশ থেকে অজস্র চিল আর শকুন নেমে আসছে। এ যেন কবি সুকান্তর মৃত্যুর অব্যবহিত আগের আর্তনাদেরই প্রতিধ্বনি। সেদিন পার্টির প্রতি কবি সুকান্ত একরাশ অভিমান মনের নিভৃতে সাজিয়ে রেখে বিদায় নিয়েছিলেন। আর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর যখন এমত পরিস্থিতিতে বিদায় নিলেন তখন এই রাজ্যের মসনদে ক্ষমতাসীন সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। তাঁর এই দুঃসহ দুর্দিনে তাঁদের কী ভূমিকা ছিল এ প্রশ্ন অত্যন্ত সঙ্গত। তবে তাঁরা তেভাগা আন্দোলনের এই ‘লো প্রোফাইল জিনিয়াস’এর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেই কর্তব্য সেরেছিলেন!

তবে তাঁর প্রয়াণের পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭এ শিল্পীকে মরণোত্তর পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছিল!

- অশোক চট্টোপাধ্যায়

খণ্ড-28
সংখ্যা-42