বিবৃতি
অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে সিপিআই(এম এল) পলিটব্যুরোর বিবৃতি

এটা মনে রাখা দরকার যে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের রায় ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের গর্হিত অপরাধমূলক কার্যকে কোনভাবে বৈধতা দেয়নি। কিন্তু বিরোধ নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে এই রায় একটি যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত হাজির করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যে তার্কিক ভিত্তি বর্ণনা করা হয়েছে আর যে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে তাদের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নাই। ফলত রায়টি অসঙ্গতিপূর্ণ ও প্রত্যয়হীন হয়ে পড়েছে।

সর্বোচ্চ আদালত সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছে যে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করাটা স্পষ্টতই আইন ভাঙা কাজ এবং মালিকানা মামলার সিদ্ধান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হওয়া দরকার। কিন্তু, রাম মন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে পুরো জমিটি কেন্দ্র সরকারের হাতে তুলে দিয়ে এবং ধ্বংস করা মসজিদের বিকল্প হিসেবে কাছাকাছি কোথাও নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি ধার্য করে এই রায় নিজের পর্যবেক্ষণের সাথেই অবিচার করেছে। লেখকের নামবিহীন এই রায়টির অসঙ্গতি আরও প্রকট হয়ে পড়ে শেষে জুড়ে দেওয়া সংযোজনীতে। সেখানে পাঁচ বিচারকের কোনও একজন বিতর্কিত জমিটিকে হিন্দু বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে রামের জন্মভূমি বলে প্রমাণ করবার চেষ্টা চালাচ্ছেন, অথচ রায়ে একথা বলা হচ্ছে যে বিশ্বাস নয় প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হবে!

শীর্ষ আদালত যে গোটা জমিটাই মন্দির নির্মাণের জন্য হস্তান্তরিত করার নির্দেশ দিল আর সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে অন্যত্র মসজিদ স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দিল তা তথ্যপ্রমাণ ও সুবিচারের নীতির উর্ধ্বে বিশ্বাসের দাবিকে স্থাপন করার নজির তৈরী করল। এবং আগামী দিনে অন্যান্য সৌধ --এমনকি তাজমহল, যাকে সঙ্ঘ পরিবার মন্দিরের ওপর নির্মিত বলে দাবি করে থাকে-- ধ্বংস করার সাম্প্রদায়িক অভিযানকে উৎসাহিত করতে পারে। আমরা তাই মসজিদ ধ্বংসকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। আর সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনকে এটাও সুনিশ্চিত করতে হবে যে এই রায়কে যেন ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে, যেখানে ইতিমধ্যেই আচরণবিধি লাগু হয়ে গেছে এবং মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে, রাজনৈতিক ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করা না হয়।

শান্তি ও সুবিচারের পক্ষে থাকা সমস্ত মানুষের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি যে সৌহার্দ্য ও সংহতি সুরক্ষিত রাখুন। অযোধ্যায় রাম মন্দির স্থাপনার নামে নব্বইএর দশকে যেমন সাম্প্রদায়িক রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হয়েছিল তেমনটি যেন দেশকে আর দেখতে না হয়। মন্দিরের নামে উল্লসিত উন্মাদনা তৈরী করে সঙ্ঘ-বিজেপি যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরও আতঙ্কিত ও বিচ্ছিন্ন না করতে পারে, যাতে জীবিকা, কর্মনিযুক্তি ও অন্যান্য অধিকারের এজেন্ডা থেকে জনতাকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে তা সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ সকল গণতন্ত্র ও সুবিচারকামী শক্তিকে অবশ্যই নিতে হবে। স্বাধীনতা, সমতা, সৌভ্রাতৃত্ব ও সুবিচার আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মূল চারটি স্তম্ভ। এবং আমরা কিছুতেই সঙ্ঘ-বিজেপিকে সে সুযোগ দেবনা যাতে তারা এই রায়ের বলে বলীয়ান হয়ে আমাদের প্রজাতন্ত্রের সাংবিধানিক ভিত্তিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

প্রভাত কুমার
(পলিট ব্যুরোর পক্ষে)

খণ্ড-26
সংখ্যা-36