খবরা-খবর
পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ইসলামপুর চৌরাস্তায় গ্রাম সভা

গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে ইসলামপুর, গহক, জিওলগেডিয়া, মহেশগেড়ীয়া ও শাঁকড়া গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে ইসলামপুর চৌরাস্তায় গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রস্তুতি হিসেবে গ্রামগুলোতে আয়ারলার (সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ সমিতি) কর্মীরা যতদূর সম্ভব মানুষের মধ্যে জনে জনে প্রচার করে। ঐদিন সকাল থেকে মাইক দিয়ে প্রচার করা হয়। বলা হয় সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি এবং সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে এলাকার সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে যে, পঞ্চায়েতের তরফ থেকে দীর্ঘদিন কোনো গ্রাম সংসদ ডাকা হচ্ছে না, জনগণের কোন মতামত নেওয়া হচ্ছে না, তাই সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে ইসলামপুর চৌরাস্তায় গ্রাম সভার আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার সমস্ত মানুষকে এই সভায় উপস্থিত হয়ে তাদের মতামত ও এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে।

islampurএই সভায় অংশ গ্রহণ করার জন্য সিপিআই(এমএল)-এর পলিটবুরোর সদস্য এবং সারা ভারত কৃষক মহাসভার রাজ্য সহ সভাপতি কার্তিক পাল ও আয়ারলার রাজ্য সভাপতি সজল পাল উপস্থিত হন। সেই সময় কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা যারা আবার রন্ধনকর্মী মিটিংয়ে স্থলে উপস্থিত হন এবং তারা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু সাধারণ মানুষের সামনে তারা বসতে রাজি নন। তখন একটি বাড়িতে মহিলাদের সাথে কার্তিক পাল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ৮টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বসেন। তারা বলেন প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে মুলত ১০ জন করে মহিলা আছেন, এলাকার হাইস্কুল এবং প্রাইমারি স্কুলে রান্নার কাজ করেন। ১০ জনে মিলে মাসে ৩০০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। বেশিরভাগ গোষ্ঠী ১০ বছরের বেশি কাজ করছে। অতীতে গোষ্ঠীগুলো ঋণ ও অনুদান পেত। বর্তমানে কিছুই পায় না। তাদের দাবি মজুরি বাড়ানোর এবং কাজের নিশ্চয়তার। যেহেতু সবাই মুসলিম ধর্মের মানুষ তাই সাধারণ মানুষের সামনে বৈঠকে বসতে রাজি হননি। কিন্তু আলোচনার পর তাঁরা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তাদের সাথে আরও দুটি গোষ্ঠীর লোকজন আছেন যারা এদিন আসতে পারেননি। আগামীদিনে বিডিও ডেপুটেশনে মহিলারা অংশ গ্রহণ করবেন বলে বৈঠক শেষ হয়।

অন্যদিকে গ্রাম সভার কাজ শুরু হয়। সজল পাল সভার উদ্বোধন করেন। দেশের পরিস্থিতি বিশেষ করে কাশ্মীরে সৈন্য বাহিনী নামিয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকার ভেঙে দেওয়া বিরোধী নেতা ও ব্যাপক লোককে গ্রেফতার করে কাশ্মীরী জনগণের উপর দমন পীড়ন নামানোর বিরুদ্ধে এবং এনআরসি করে আসামে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা ও এখন সারা দেশে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এন আর সি করার বিজেপি নেতাদের হুমকির বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল)-এর অবস্থান ঘোষণা করার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল শাসনে পঞ্চায়েতের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাম সংসদে বসে জনগণের মতামত নেওয়ার যে বাধ্যতা রয়েছে তা না করে ও বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা ঠিক না করে নিজেদের মতো করে দুর্নীতি দলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে এই গ্রাম সভার আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তাদের নিজেদের মতামত ও সমস্যাগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়। ৪জন তাদের বক্তব্য রাখেন। গ্রামের রাস্তা সংস্কার, ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর নিয়ে দলবাজী দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। বার্ধক্য ভাতা, কাজ মজুরী আন্দোলন এইসব প্রশ্ন তুলে ধরেন। তারপর সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন কার্তিক পাল। তিনি মহিলাদের সাথে বৈঠকের অভিজ্ঞতা, জাতীয় ও রাজ্য পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করার সাথে সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নামিয়ে আনা দমন পীড়ন আদিবাসী ও দলিত জনগণের উপর বিজেপি সরকারের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। উপস্থিত গ্রামীণ মানুষের তুলে ধরা দাবিতে এবং মহিলাদের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান রাখেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশনে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

খণ্ড-26
সংখ্যা-29