ধনীদের জন্য স্বল্প ও গরিবের জন্য চড়া সুদে ঋণ, অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলির সরকার পোষিত নব্য মহাজনী ব্যবসায়
cce

যদি আপনি ধনী হন ও গাড়ি কিনতে চান, স্টেট ব্যাঙ্ক আপনাকে ঋণ দেওয়ার জন্য উন্মুখ, অন্য ব্যাঙ্ক বা অব্যাঙ্ক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও। সুদের হার বার্ষিক ৭.৫% থেকে ৯%-এর মধ্যে থাকবে। যদি আপনি ধনী চাষি হন, আপনার বন্ধকযোগ্য জমি জমা থাকে তাহলেও আপনি অনায়াসে কৃষিকাজের জন্য ঋণ পাবেন, কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক ১০.২৫% হারে। যদি আপনার সোনা থাকে তাহলে সেটি বন্ধক দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে স্টেট ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে ৭.২৫% হারে। সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিতে চাইলে কৃষকেরা ঋণ পাবেন ৯% হারে। যদি কেউ বাড়ি করতে ঋণ চান, শহরাঞ্চলে, স্টেট ব্যাঙ্ক ৭.৫% হারেও ঋণ দিতে ইচ্ছুক। ব্যবসায় ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম হার বার্ষিক ১১%। ফলে যাদের নিয়মিত আয় আছে বা সম্পত্তি আছে তাদের জন্য ঋণের যোগান আছে সহজ ও স্বল্প সুদে।

কিন্তু যাদের বন্ধক দেওয়ার মতো জমি নেই, নিয়মিত আয় নেই, বাপকেলে পুঁজি ও ব্যবসায় নেই। নেই রাজ্যের বাসিন্দে যারা, তাদের কী হবে? কী হবে ভাগচাষিদের? অর্থাৎ যাদের অর্থের বেশি প্রয়োজন তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বন্দোবস্ত কোথায়? তেমনটা মুখে বলা হলেও কাজে কিছুই করা হয়নি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পথনির্দেশিকাতেও প্রান্তিক চাষি অবধি ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ভূমিহীন কৃষক বা তাদের পরিবারদের ঋণ যে প্রয়োজন তেমনটা মনে করা হয়নি। কিন্তু হুজুর সরকার মা বাপ! তেনারা কি প্রজাদের ভুলে যেতে পারেন? তাই ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থানের বন্দোবস্ত করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য জাতীয় কৃষি ব্যাঙ্ক (নাবার্ড)কে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। ইত্যবসরে অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুস নোবেল পেয়েছেন বাংলাদেশে গ্রামীণ-এর মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র কৃষকদের ঋণের বন্দোবস্ত করে। তবে তিনি দারিদ্র দূরীকরণের জন্য অতিক্ষুদ্র ঋণের একটি অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করলেও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর অতিক্ষুদ্র ঋণের মডেল প্রয়োগের ৪ দশক পরেও বাংলাদেশে গণদারিদ্র রয়েছে। দারিদ্রসীমার নিচে রয়ে গেছে প্রায় ৪ কোটি (২০.৫%) মানুষ যার মধ্যে ২ কোটি (১০.৫%) হতদরিদ্র।  

অতিক্ষুদ্র ঋণের মডেলটি পরবর্তীতে অনেক উন্নয়নশীল দেশ গ্রহণ করেছে। মূলত ব্যাঙ্কের নিয়মমাফিক ঋণ পাওয়ার অযোগ্য গ্রামীণ (শহুরেও) দরিদ্র মানুষকে সুদখোর মহাজনের মাত্রাতিরিক্ত সুদের ঋণ থেকে বাঁচাতে স্বল্প পরিমাণের ঋন কম সুদের হারে প্রদান করাই মহ: ইউনুসের অতিক্ষুদ্র ঋণের মডেলের অন্তর্বস্তু ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা ঋণ দিয়ে মুনাফা করার জন্য অর্থলগ্নিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বহু দেশেই সরকার দারিদ্র দূরীকরণে নিজের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দিতে অতিক্ষুদ্র ঋণের মডেলটির রূপায়ণের বন্দোবস্ত করেছে। ভারতেও নাবার্ডের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা সরকার গ্রহণ করেছে, ও ঋণের পরিমাণকে সাফল্যের নজির হিসেবে উপস্থাপন করছে।

অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মূলত দুটি মডেল রয়েছে। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ঋণ প্রদান। যেক্ষেত্রে সেই গোষ্ঠীর সঞ্চয় ব্যাঙ্কে থাকে এবং তার বিপরীতে সঞ্চয়ের কয়েক গুণ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। নাবার্ডের ২০১৮-১৯ সালের অতিক্ষুদ্র ঋণের উপরে প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে ১ কোটির উপরে স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে যার সঙ্গে ১২ কোটি পরিবার যুক্ত হয়ে রয়েছে। ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি টাকা, সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং ওই গোষ্ঠীগুলি বছরে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছে। ঋণী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির গড় ঋণের পরিমাণ ১৭২ হাজার টাকা ও ২০১৮-১৯ সালে ঋণ গ্রহণকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে প্রদত্ত গড় ঋণের পরিমাণ ২১৬ হাজার টাকা। অপরদিকে যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠীর সংখ্যা ৫১ লক্ষ ও মোট ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকা। ফলে যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠীগুলির প্রতিটির গড় দায়ের পরিমাণ ১৪১ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ সালে ১৬ লক্ষ নুতন যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি করা হযেছে। যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠি কেবল ঋণ গ্রহণ করে, এবং তা ব্যক্তিগত চুক্তির ভিত্তিতে ব্যক্তিকে প্রদান করা হলেও গোষ্ঠীর সমস্ত সদস্য ওই ঋণ আদায়ের জন্য দায়বদ্ধ থাকে।

অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী শিল্পের তথ্য অনুসারে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ মোট ঋণের পরিমাণ ১৮৭ হাজার কোটি টাকা, যা ৩১ মার্চ ২০১৮-র তুলনায় ৩৮% বেশি। ওই মোট ঋণের মধ্যে ব্যাঙ্ক প্রদত্ত ঋণ ৬১ হাজার কোটি টাকা (৩৩%), অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি অতিক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা প্রদত্ত ঋণ ৬৯ হজার কোটি টাকা (৩৭%), ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাঙ্ক দিয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা (১৮%), অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা (১১%), অন্যান্যরা ২ হাজার কোটি টাকা (১%)। গত বছরের তুলনায় অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি অতিক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা, ব্যাঙ্ক, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাঙ্ক, অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্যদের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে যথাক্রমে ৪২%, ৩৬%, ২৫%, ৫৯% ও ৩০%। অন্যদিকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা সামগ্রিক ব্যাঙ্ক ঋণের বৃদ্ধি ভারতীয় অর্থনীতির দুর্দশাকেই দেখিয়ে দিচ্ছে। ২০১৮-১৯ সালে সামগ্রিক ব্যাঙ্ক ঋণের বৃদ্ধি ঘটেছিল ১১%। ২০১৯-২০ সালে তার বৃদ্ধি ৩%-এর মতো। ফলে ব্যাঙ্কগুলি তাদের ব্যবসায় বৃদ্ধির জন্যই অতিক্ষুদ্র ঋণের খাতক বাড়াচ্ছে, অনেক সময়ই ঋণ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন প্রকারের অনৈতিক উৎসাহও দিচ্ছে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতের ১২%-এর বেশি পশ্চিমবঙ্গের খাতে রয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে মোট প্রদত্ত ঋণের ১২% এই রাজ্যেই বন্টিত হয়েছে। তবে মোট ঋণের ১০%-এর কম এই রাজ্যে স্বিনর্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছে পাওনা। ফলে ধরাই যেতে পারে এরাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির নিয়মিত ঋণ পরিশোধের ইতিহাস রয়েছে, এবং তা এনপিএ বা অকার্যকরী সম্পদের অনুপাতের মধ্য দিয়েও প্রকট। সারা ভারতে সেই হার ৫.১৯% হলেও এরাজ্যে তা ২.৭৮%। ৩১ মার্চ ২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গে যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৫৬৮ হাজার যার মধ্যে ২০২ হাজার তৈরি হয়েছিল ২০১৮-১৯ সালে। সারা ভারতের তুলনায় ওই দুটি সংখ্যা যথাক্রমে ১১% ও ১৪%। ২০১৮-১৯ সালে যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৯০৯ কোটি টাকা (সারা ভারতের ৬%) ও ৩১ মার্চ ২০১৯এ তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪,২৫২ কোটি টাকা (সারা ভারতের ৬%)। ফলে যৌথ দায়বদ্ধ গোষ্ঠীগুলিকে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সামনের সারিতে নেই।

nir

 

উপরের পরিসংখ্যানগুলি দেখিয়ে দিচ্ছে যে সারা ভারতেই অতিক্ষুদ্র ঋণের চাহিদা রয়েছে। যে ঋণ মূলত গ্রামীণ মহাজনেরা চড়া সুদে দিয়ে থাকত। এও জানা যায় যে, এখনো মহাজন কর্তৃক প্রদেয় অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ৬৫% বাজারে অতিক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলি পৌঁছতে পারেনি। ফলে তাদের জন্য অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র পড়ে রয়েছে। মহাজনী সুদ না নিলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলির সুদের হার উপরের প্রথম অনুচ্ছেদে বিবৃত সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি। ঋণগুলি সাধরাণত কোনো বন্ধক ছাড়াই দেওয়া হয়। তবে গোষ্ঠীর কেউ ঋণ শোধ না করতে পারলে তার উপরে গোষ্ঠীর অন্য সদস্যরা চাপ তৈরি করে। ফলে খাতক তাঁর প্রতিবেশে প্রায় প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে। যেহেতু অতিক্ষুদ্র ঋণের খাতকের প্রতারণার কোনো উদ্দেশ্য থাকে না তাই প্রতারক হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হলে বহুক্ষেত্রেই মানসিক অবসাদের স্বীকার হয়ে আত্মহত্যাও করে থাকে। ২০১০ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে অনুরূপ ঋণ সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মুনাফার লোভে ঋণ দাতারা খাতকদের চড়া সুদে উপর্যুপরি ঋণ দিয়ে একধরনের ঋণ ফাঁদে জড়িয়ে ফেলে। ওই সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার সুদের হার বেঁধে দিয়ে আইন করেছিল। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় স্তরে একবার ২০১১-১২ সালে ও পরে ২০১৬ সালে অতিক্ষুদ্র ঋণপ্রদান (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) সংক্রান্ত বিল আনা হলেও আজ অবধি সেগুলি আইনে পরিণত হয়নি।

অতিক্ষুদ্র ঋণের বাজারটি ব্যাঙ্ক, অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, অতিক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান বা ক্ষুদ্র অর্থলগ্নি ব্যাঙ্ক সকলের কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ঋণের উপর সুদ গ্রহণের হারের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। ফলে যে যেমন পারে সুদ নিয়ে থাকে। সেই সুদের হার বার্ষিক ২০% থেকে ৪৫% পর্যন্ত হয়, তারও বেশি হতে পারে। যে অঞ্চলে যেমন ভাবে পারা যায় তেমনি সুদ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধে গাফিলতি হলে পাড়া প্রতিবেশি গোষ্ঠী সদস্যের চাপ যেমন থাকে, আদায় করার জন্য গুণ্ডা বা বাউন্সারও পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে এক ভীতিপ্রদ পরিবেশ তৈরি করে ঋণের কিস্তি আদায় করার বন্দোবস্ত চালু আছে। আগেই বলেছি, খাতকের সাধারণতঃ প্রতারণার কোন ইচ্ছেই থাকে না, তাই সাধারণ অবস্থায় কোনো বিপাকে না পড়লে নিয়মিত কিস্তি শোধ করে থাকে। কিন্তু বিপদে পড়লেও ঋণদাতারা ছাড় দেয় না।

এমনকি এই কোভিড-১৯ মহামারীর সময়েও ঋণগ্রহিতাদের উপরে প্রবল চাপ দিচ্ছে ঋণদাতারা। মূলত গ্রামীণ মহাজনের চরিত্রই ওই সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণদাতাদের আচরণে ফুটে বেরুচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কেন চুপ করে রয়েছে? কেন এত চড়া হারের সুদে ঋণ দিয়ে ওই সমস্ত ব্যাঙ্ক ও অন্যন্য সংস্থা অস্বাভাবিক মুমনাফা করছে? লক্ষ্যণীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি বাণিজ্যিক কর্পোরেটগুলিকে কম সুদে ঋণ দেয়। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি যথেষ্টই বেশি ও বহু ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের ব্যয় অনেক বেশি হয়, আইনি ব্যয়ের জন্য, তা সত্বেও সুদের হার কম। অন্যদিকে সাধারভাবেই অতিক্ষুদ্র ঋণ গ্রহিতারা প্রতারণা করে না, তবুও তাদের ঋণের উপর সুদের হার অন্যত্র সুদের হারের ২ থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত হয়। এই সুদের হারকে কমানোর জন্য কোনো প্রকল্প সরকার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে নেই। যেহেতু, অতিক্ষুদ্র ঋণে মুনাফা বেশি তাই সমস্ত ব্যাঙ্ক এই ঋণের দিকে ঝুঁকছে। তাছাড়া, কৃষি ঋণ বা গৃহ ঋণের মতো এই ঋণগুলিকেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অগ্রাধিকার প্রদানকারী ক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করলে ব্যাঙ্কগুলি ৪০% অগ্রাধিকারী ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের বিধিটিও পরিপূর্ণ করতে পারে। সব মিলিয়ে সমাজের সব থেকে পিছিয়ে পড়া দরিদ্রজনেরা প্রাতিষ্ঠানিক সুদের ব্যবসার খাতক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। যারা সব থেকে গরিব তারা সব থেকে বেশি সুদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার, নাবার্ড, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক, অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান সকলেই এমন ভান করছে যে তারা না থাকলে তো গ্রামীণ মহাজনের খপ্পরে পড়বে গ্রামীণ গরিব তাই খাতকের সুবিধের জন্যই এই কাঠামো। কিন্তু আদতে অতিক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলি নব্য কলেবরে মহাজনী ব্যবসায় শুরু করেছে। যার ফলে ঋণগ্রহিতাদের একদিকে ঋণের ফাঁদে ঢুকতে প্রলুব্ধ ও বাধ্য করা হচ্ছে। অপরদিকে ঋণ পরিশোধে অপারগ হলে তাদের জীবন দুঃসহ করে তুলছে প্রতিষ্ঠানগুলি।

ফলে সমাজের সর্বস্তর থেকে দাবি করতে হবে যে, সরকারকে অতিক্ষুদ্র ঋণের উপরে সুদের হার কমাতে হবে। যেহেতু এই ঋণগুলিকে অগ্রাধিকারী ক্ষেত্রের ঋণ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে তাই এই সমস্ত ঋণের উপর সুদের হার কৃষি সমেত অন্যান্য অগ্রাধিকারী ক্ষেত্রের ঋণের হারের থেকে বেশি করা চলবে না। দ্বিতীয়ত, ঋণ আদায়ের জন্য গুণ্ডা প্রেরণের সংস্কৃতিকে বন্ধ করতে হবে, তৃতীয়ত, কোভিড-১৯ ও তজ্জনিত লকডাউনের ফলে গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে যে বিপুল অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সেই জন্য যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সমস্ত ঋণকে মকুব করতে হবে।

- অমিত দাশগুপ্ত  

খণ্ড-27
সংখ্যা-27