খবরা-খবর
তিস্তা শীতলবাদ’দের গ্রেপ্তার ও হিমাংশু কুমারের ওপর জরিমানা চাপানোর প্রতিবাদে এআইএলএজে ও পিইউসিএল
PUCL in protest

২০০২ সালের গুজরাটের গণহত্যার সুবিচার প্রার্থনা করার ‘অপরাধে’ সমাজকর্মী আইনজীবী তিস্তা শেতলবাদকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ২০০৯ সালে ছত্তিশগড়ে ১৭জন আদিবাসীদের মিথ্যা এনকাউন্টারের নামে হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন গান্ধীবাদী সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার। তার আবেদন শুধু খারিজই করা হল না, উপরন্তু তাঁকে ৫লক্ষ টাকা জরিমানা করা হল। এই দুই ক্ষেত্রেই যে ভয়ঙ্করতা লক্ষ্যনীয় তা হল রায়দানের সময় জানিয়ে দেওয়া হল যে এই দুজনের বিরুদ্ধেই রাজ্য প্রশাসন ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করতে পারবে। যার ভিত্তিতে রায়দানের পরেরদিনই গুজরাটের পুলিশ মুম্বই গিয়ে তিস্তা শীতলবাদকে গ্রেফতার করল এবং মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠিয়ে দিল। মহম্মদ জুবেরকে গ্রেপ্তার করে হাজতে ফেলে রাখা হয়েছিল কেবলমাত্র সত‍্য সাংবাদিকতার জন‍্য। তাঁর সংবাদ সংস্থাকেও এখন টার্গেট করা হচ্ছে বিদেশি ফাণ্ডের ষড়যন্ত্র তকমা দিয়ে। অন্যদিকে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের মেধা পাটকার সহ অন্যান্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁরা নাকি নিজেদের তহবিল তছরুপ করে দেশবিরোধী কার্যকলাপে খরচ করেছে! এই পরিস্থিতিতে হিমাংশু কুমারের উপর থেকে জরিমানা প্রত্যাহার ও তিস্তা শীতলবাদ সহ প্রতিটি রাজ্যে মিথ্যা মামলায় বন্দী সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এআইএলএজে এবং পিইউসিএল গত ২২ জুলাই প্রতিবাদ সভা করে যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ডে। শুরুতে গণসঙ্গীত গেয়ে শোনান নীতীশ রায়। সভায় বক্তব্য রাখেন ডাঃ বিনায়ক সেন, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, প্রাক্তন বিচারক মাননীয় শ্রী তপন দাস, আইনজীবী পার্থ ব্যানার্জী, আইনজীবী অভিজিৎ দত্ত, পিইউসিএল অম্লান ভট্টাচার্য, অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী প্রমুখ।

ডাঃ বিনায়ক সেন বক্তব্যে বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের মধ্যে বর্তমান সময়ে চলেছি। উদ্বেগের কারণ, পূর্বের ভারতীয় বিচার-ব্যবস্থার যে ঐতিহ্যময় দিনগুলি স্মরণে আসে তার সাথে আজকের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝের ৭৫সনের ২১ মাসের জরুরি অবস্থা বাদ দিলে, ভারতীয় বিচার-ব্যবস্থাই মানুষের শেষ ভরসা। ৮০র দশকে প্রসার ভারতী প্রতিষ্ঠা, নাগরিকের জনস্বার্থ মামলা করার অধিকার, জনগনের খাদ্যের অধিকার, নাগরিকের ভোটাধিকারের প্রশ্নে নোটার অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভারতীয় বিচার-ব্যবস্থার যে সহযোগিতা ও সুদৃঢ মতামত আমরা পেয়েছি, আজ সেই বিচার বিভাগের অন্য ভূমিকা দেখছি। আজ নাগরিক-অধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রই শেষ কথা বলছে। বর্তমানে তিস্তা শীতলবাদ, হিমাংশু কুমার, মেধা পাটেকর, ফাদার স্ট্যান স্বামী সহ আরো অনেক সমাজকর্মীর প্রশ্নে সুপ্রীম কোর্টের রায় আমাদের মনে প্রশ্ন তুলেছে। নাগরিক সমাজের মনে বিচার বিভাগ সম্পর্কে এই প্রশ্ন দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করবে বলে আমরা মনে করি। ইতিমধ্যে বহু সমাজ-কর্মী গণতান্ত্রাতিক মানূষকে নানা মামলায় হয়রানি হতে হয়েছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, বিচারের প্রার্থীকেই বিচারক দোষী সাব্যস্ত করছে, যা এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ভয়ঙ্কর। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাই আজকের এই সভা।” আইনজীবী লিটন ভাদুড়ি, আইনজীবী মালা সেন চৌধুরী সহ বুদ্ধিজীবীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন এবং বক্তব্য রাখেন এআইএলএজে-র সর্বভারতীয় সহসভাপতি আইনজীবী দিবাকর ভট্টাচার্য।

খণ্ড-29
সংখ্যা-29