আসুন পাল্টা লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়াই : তথ্যানুসন্ধানী দলের রিপোর্ট

জেএনইউ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের জিএস সতীশ চন্দ্র যাদব ও স্কুল অব ল্যাঙ্গুয়েজের কাউন্সিলর মণিকান্ত সহ সুচেতা দে, কবিতা কৃষ্ণান, প্রভাত কুমার, গিরিজা পাঠক, প্রেম সিং, দোলন সামন্ত, কৌশিক রাজ, জুনেইদ - সিপিআই(এমএল) ও আইসার এই প্রতিনিধিদল দিল্লির হিংসা-বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ঘুরে একদিকে চরম হিংস্রতার বিভীষীকা ও অন্যদিকে সেই বিপন্ন সময়ে পরম আন্তরিক মানবিকতার উদাহরণ প্রত্যক্ষ করে। প্রিতিনিধি দলের রিপোর্টে বলা হয়েছে।

team

 

মৌজপুর মেইন রোডে, যেখানে কপিল মিশ্র সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদীদের ওপর আক্রমণ চালানোর হুঙ্কার দিয়েছিল, আমরা দেখলাম মুসলমান মালিকের দোকানগুলিকেই নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করা হয়েছে। তাঁদের দোকানগুলি দুরমুশ করে দেওয়া হয়েছে, লুটে নেওয়া হয়েছে। দোকানগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসপাশের কিছু হিন্দু দোকানদার এই লুটপাট ও ধ্বংস যতদূর সাধ্য আটকাতে চেষ্টা করেছে। সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার। আমরা প্রতিটি দোকানের ডিটেইলস নিয়েছি এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণের জন্য চাপ তৈরি করব।

house

 

ভজনপুরায় বেশ কিছু মুসলমানের দোকান ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি পেট্রোল পাম্পকেও সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। এর মালিক হিন্দু। মুসলমানদের যে দোকানগুলিকে টার্গেট করা হয়েছিল ঠিক তার গায়েই এই পেট্রল পাম্পটি ছিল। সম্ভবত রক্তপিপাসু দলটি তাণ্ডব চালানো উন্মত্ত অবস্থায় হিন্দু মালিকের পাম্প কি না তা ফারাক করে উঠতে পারেনি।

riot

 

শিব বিহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢোকার মুখে প্রথমে আমরা পেলাম কিছু আগুনে পোড়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া দোকান ও বাড়ি যেগুলো হিন্দুদের। শিব বিহারের তেমাথার মন্দিরটি সম্পূর্ণ অক্ষত আছে। এরপর আমরা ঢুকে পড়লাম শিব বিহারে যেখানে অনেক বড়ো পরিধিতে মুসলমান নাগরিকদের বাড়ি দোকান ও মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপক ছবি দেখতে পেলাম। শিব বিহারের আউলিয়া মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস। মসজিদের ভেতরে অনেকগুলি গ্যাস সিলিণ্ডার বার্স্ট করানো হয়েছিল। মুসলমানদের একটার পর একটা বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন দুর্বল বৃদ্ধার সাথে দেখা হল যার বাড়ি সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়েছে। পাশের একটি এলাকায় আত্মীয়দের সাথে এখন আছেন তিনি। তিনি শুনেছেন যে সরকার নাকি ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু তাঁর যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সে তুলনায় ওই টাকা কিছুই না। আমরা খুব গরিব এক হিন্দু পরিবারের সাথে দেখা করেছিলাম যাদের বাড়ির চারপাশেই মুসলমানদের ঘর। এই পরিবারের লোকেরা আমাদের সামনে বর্ণনা দিলেন কীভাবে তাঁদের মুসলমান প্রতিবেশীদের ওপর সেদিন আক্রমণ হয়েছিল। তাঁরা আক্রান্তদের বাড়ির মহিষগুলোকে রক্ষা করে। হিন্দু ও মুসলমানে দাঙ্গা বাঁধিয়ে ফায়দা লোটার রাজনীতিকে তাঁরা অভিশাপ দিতে থাকেন। তাঁরা আমাদের কাছে এই আবেদনও জানান যে ধ্বংস হওয়া দোকানের মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সাথে সাথে ওইসব দোকানের কর্মচারিদেরও যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় কেননা ওরাও ওদের জীবিকা হারিয়েছে। সুতরাং ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ তাঁদের কাছেও পৌঁছানো দরকার। দাঙ্গার কর্মসূচী সাজানো হয়ছিল হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে চিরস্থায়ী বিভেদ তৈরি করার জন্য। এমনভাবে তা সাজানো হয়েছিল যাতে মুসলমানদের জীবনহানি ও সম্পত্তিহানি সুনিশ্চিত হয়। দাঙ্গায় মুসলমান ও হিন্দু সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

team2

 

আরএসএস-বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রকল্পকে ধ্বস্ত করার অঙ্গীকার নিয়েছে সিপিআই(এমএল) ও আইসা। যারা আক্রমণ সয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা যাতে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে আবার তাঁদের জীবনকে দাঁড় করাতে পারেন তা নিশ্চিত করতে যা যা সম্ভব তা করব আমরা। সুবিচার পাওয়া ও অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লক্ষ্যে যথাসম্ভব করব আমরা। প্রতিটি ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যই হিসেব করে নথিভূক্ত রাখতে হবে। সরকারকে অবশ্যই চাপ দিতে হবে আমাদের। সরকার যদি জীবন আবার গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণই তা করবে।আসুন পাল্টা লড়াই দিতে ঘুরে দাঁড়াই।

- ৫ মার্চ ২০২০

mustafabad

মুস্তাফাবাদ ইদগাহর ত্রাণ শিবির পরিদর্শন রিপোর্ট

প্রায় ৫ হাজার মানুষ এই ত্রাণ শিবিরে আছেন। ওয়াকফ বোর্ড এই ত্রাণ শিবির চালাচ্ছে।

ত্রাণ শিবিরের অধিকাংশ মানুষই গরিব শ্রমজীবি শ্রেণীর। ২৪ ফেব্রুয়ারীর সেই ভয়ঙ্কর দিনে ও রাতে এবং পরের দুদিনে তাঁরা কোনোক্রমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

এঁদের বেশিরভাগই ভাড়া ঘরে থাকতেন। সেসব বাড়ির কিছু কিছু জ্বলেপুড়ে গেছে। এঁদের মধ্যে যাঁরা হিন্দু মালিকের বাড়িতে থাকতেন তাঁরা এখন আর সেখানে ফিরে যেতে পারছেন না, তাঁদের যা কিছু ছিল তা লুট হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

এখন তাঁদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, কিন্তু বেশিরভাগই অভিযোগ জানালেন যে পরিধানের বস্ত্রও নাই তাঁদের, যা পেয়েছেন তার সবই পুরনো পোশাক। টয়লেট ভ্যান দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেগুলি চরম অস্বাস্থ্যকর।

দিল্লি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রাথমিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে যে ২৫ হাজার টাকা করে হাতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল তা এখনও কেউই পাননি, যদিও প্রায় সকলেই ফর্ম ফিলাপ করেছেন। তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় ত্রাণ হিসেবে যা ঘোষণা করা হল তা তৎক্ষণাৎ কেন দেওয়া হল না এবং হচ্ছে না?গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। অস্থায়ি তাঁবুগুলি জলনিরোধক নয়। মাদুরগুলি সব ভিজে সপসপে।

ত্রাণ কার্যে অংশ নিতে এগিয়ে আসুন। সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো সহযোগিতা আদায় করার জন্য সক্রিয় হোন।

খণ্ড-27
সংখ্যা-7