লণ্ডনে শাহীনবাগ

শত শত শাহীনবাগের প্রতিরোধে ভারতে এখন প্রতিদিনই নারী দিবস। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে লন্ডন শহরের প্রদর্শনেও বিশেষ অনুপ্ররণা হয়ে উঠল শাহীনবাগ। “শাহীনবাগ তোমার সাথে আমরাও, ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখে দাঁড়াও”, “মোদি শাহ লুকোবে কোথায়, অপরাধী তোমরা গণহত্যার”, “শাহিনবাগ এখানেও থাকবে বরাবর, যতক্ষণ না করছ সিএএ প্রত্যাহার” – দিল্লীর শাহীনবাগ গণ অবস্থানে তৈরী হওয়া চিত্রশিল্প সম্বলিত ব্যানার সামনে রেখে শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠল। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ‘লক্ষ মেয়ে উঠে দাঁড়াও’ কর্মসূচী সংগঠিত হয় লণ্ডন সহ বিভিন্ন সহরে। বহু নারীবাদী সংগঠন ও গণরাজনৈতিক গ্রুপ নেতৃত্ব দেয়। এবছরের কর্মসূচীতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ‘শাহীনবাগ ব্লক’।

saheen

 

লণ্ডনের এই কর্মসূচীর উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে “সাউথ এশিয়া সলিডারিটি গ্রুপ’-এর নেত্রী কল্পনা উইলসন বলেন, “এই দুনিয়াব্যাপী আন্দোলন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর ইজরায়েলের নেতানিয়াহু আর ইংল্যান্ডের বরিস জনসনকে এক সূত্রে গেঁথে নিশানা বানিয়েছে। কাশ্মীরের, মায়ানমারের, প্যালেস্টাইনের, ভারতের দুঃখদুর্দশার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মানুষের সংগ্রামকে একাত্ম করছে। ভারতে ফ্যাসিবাদ হিন্দু-উচ্চবর্ণের আধিপত্যবাদের রূপ নিয়েছে। ভারত সরকার দাবি করছে যে সেদেশের জনগণকে বংশপরম্পরার ডকুমেন্ট দেখিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। যদি কেউ মুসলমান হয় আর এরকম ডকুমেন্ট দেখাতে না পারে তাহলে তার পরিবার বরাবর ভারতের বাসিন্দা হওয়া সত্বেও তাকে ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী থাকতে হবে। ইতিমধ্যে বিশালাকার ডিটেনশন সেন্টারগুলি বানিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং যারা সেখানে বন্দী আছে তাদের অনেকেই মারা গেছে। নতুন নাগরিকত্ব আইন এই প্রথম ধর্মকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হল। আমাদের এই দেশে আমরা উইন্ডরাশ ও ইয়ারলস উডের ভয়ঙ্কর অন্যায় অত্যাচারের কথা জানি। এগুলো ফ্যসিবাদের লক্ষণ। ভারতে আমরা এগুলিরই পরবর্তী ধাপের আতঙ্কজনক পদক্ষেপগুলি দেখতে পাচ্ছি। হিটলারী জমানার জার্মানীতে যেমন করা হয়েছিল তেমনই এখানেও সম্ভবত লক্ষ লক্ষ মানুষে প্রথমে নাগরিকত্ব অস্বীকার করে তারপর গণহত্যা সংগঠিত করা হবে। কিন্তু এই অন্ধকার থেকেই আলোর শিখার মতো উৎসারিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিরোধের নতুন বসন্ত। মুসলমান মহিলারা, যাদের প্রতিবাদ শক্তিহীন নিষ্ক্রীয় হিসেবে তুলে ধরা হত,  হাজারে হাজারে রাস্তায় উঠে দাঁড়িয়েছে, লাগাতার ধর্ণা অবস্থান সংগঠিত করেছে, বিরুদ্ধতার প্রাচীর গড়ে রুখে দাঁড়িয়েছে এই গণহত্যার আইনের বিরুদ্ধে।” কল্পনা উইলসনের নেতৃত্বে গত ফেব্রুয়ারী মাসে এক প্রতিনিধি দল ভারতের বিভিন্ন শাহীনবাগ মঞ্চগুলিতে সংহতি জ্ঞাপন করতে আসেন। সেই সময় কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দান ও রাজাবাজার শিরীনবাগের অবস্থান মঞ্চেও এসে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা।

lon

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-8