এনপিআর বয়কটের আহ্বান দিল মহিলা সমিতি

দেশজুড়ে মহিলারা আজ এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে। দিল্লির শাহিনবাগ থেকে বিহার উত্তর প্রদেশ হয়ে কলকাতার পার্ক সার্কাস-রাজাবাজার-খিদিরপুর সর্বত্রই নারীরা আজ হিংসা বিদ্বেষের রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বিজেপি আর আরএসএসের হুমকি আক্রমন প্রতিরোধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি মনে করে যে সংবিধান-বিরোধী এই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের নাগরিকত্বের উপর আক্রমণ। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মহিলা ও প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ।তাই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতেই হবে।

এই লড়াই-এর শরিক হয়ে ১৩ মার্চ দিনভর মৌলালির মোড়ে এক প্রতিবাদী কর্মসূচি সম্পাদন করে। গ্রাম, শহরের মহিলারা, শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র -ছাত্রীরা এই অবস্থানে সামিল হয়। রাজাবাজার, পার্কসার্কাস লোহাপুলের ও গার্ডেনরিচের অবস্থানমঞ্চে আন্দোলনরত মহিলারা উপস্থিত ছিলেন এবং জোরালো বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য রাখেন সমিতির জাতীয় নেত্রী কৃষ্ণা অধিকারী, গীতা মন্ডল, রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রানী দত্ত সহ রাজ্য নেত্রী অর্চনা ঘটক এবং কাজল দত্ত, কল্যাণী গোস্বামী, চান্দ্রস্মিতা; আইসার পূর্বতন সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুচেতা দে, রাজ্য নেত্রী অন্বেষা; অগ্রগামী মহিলা সমিতির ডলি রায়, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির পারমিতা দাশগুপ্ত, নিখিল বঙ্গ মহিলা সংঘের সর্বাণী ভট্টাচার্য, ডব্লিউএসএস-এর নিশা বিশ্বাস, মাইনরিটি ফোরামের নুদারাত, রাজাবাজার অবস্থান মঞ্চের নেত্রী শাহীনা জাভেদ, লোহাপুলের ফতেমা সহ বিভিন্ন বক্তা।

প্রত্যেক বক্তাই এই এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বয়কট করার আহ্বান জানান এবং ফ্যাসিস্ট হামলা প্রতিরোধে এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান। আমাদের ভাষা-ধর্ম যাই হোক না কেন, আমরা সবাই ভারতীয়।ইতিহাস দেখায় যে যত বড় ক্ষমতার অধিকারী সরকার হোক না কেন, মানুষই শেষ কথা বলে। তাই আজ দেশ বাঁচাতে, সংবিধান বাঁচাতে সবাইকে লড়াই চালাতে হবে।  বক্তারা সবাই এই ভয়ঙ্কর এনআরসি -সিএএ  আন্দোলনকে  আরো নীচু স্তর অবধি নিয়ে যাওয়ার দিকে জোর দেন।

kriসমিতির জাতীয় নেত্রী কৃষ্ণা অধিকারি বলেন বিজেপি আজ দেশকে এক মনুবাদী রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। আজ শুধু মুসলমানরা নয়, দলিত, শ্রমিক-কৃষক সকলেই লড়াই করছে।যারা ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করেছে, তাদেরই নগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে – এটা হয় না। আজ তাই আওয়াজ  উঠে আসছে মোদী-অমিত শাহ ইস্তফা দাও। সমিতির জাতীয় নেত্রী গীতা মণ্ডল বলেন যে, বিজেপির বিভেদ চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র, যুব, মহিলা মেহনতি মানুষ আজ লড়ছে। মানুষ দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে। দেশে আজ মানবতা, মনুষত্ব, আর মানবজাতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আইসার পূর্বতন সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুচেতা দে দাঙ্গা-বিধ্বস্ত দিল্লীর আহত দিল্লীর মর্মবিদারক চিত্র তুলে ধরেন তার ভাষণে। তিনি বলেন, শাহিনবাগের মহিলারা যে বীরত্ব পূর্ণ লড়াই করছেন তার বদলা নিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বহু মানুষের ঘর জ্বালানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন যে মোদী-অমিত শাহের ষড়যন্ত্র এই দেশে টিকবে না – মানুষ এর জবাব দেবে। সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন, দাঙ্গা-বিদ্বেষের হোতা বিজেপি ও সংঘ পরিবার এবং মোদী-অমিত শাহ ভারতের সম্প্রীতি, মৈত্রী ও বহুত্ববা দের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছে; দেশ বিক্রি করছে, সংবিধানকে নস্যাৎ করছে।তাই আজ দেশের গণতন্ত্রের লড়াই, এনআরসি-সিএএ বিরোধী লড়াই, এনপিআর বয়কটের আন্দোলনকে আরো নীচু স্তরে ব্যাপক ভাবে  ছড়িয়ে দিতে হবে। ডব্লিউএসএস-এর নিশা বিশ্বাস বলেন, হিন্দুত্ববাদীরা ভাবছে মনুবাদি সংস্কৃতি এনে তারা মেয়েদের সবক শেখাবে, ঘরে ঢুকিয়ে দেবে। তা হবে না। তিনি আরো বলেন এনপিআর-এর উদ্দেশ্যে এনআরসি চালু করা। তাই মিথ্যাচারে আমরা ভুলবো না।

রাজাবাজার অবস্থান মঞ্চের অন্যতম শাহীনা জাভিদ বলেন মোদী-অমিত শাহ হিন্দু মুসলিম দলিত সবার বিরোধী। বাবরি মসজিদ, তিন তালাকের পরেও আমরা অনেকে হয়ত চুপ করে ছিলাম। কিন্তু আজ বহু মানুষ রাস্তায় নামছে। লোহাপুল অবস্থান মঞ্চের মনসুর আলী এবং ফতেমা তাদের লড়াই এনআরসি-সিএএ বিরোধী লড়াইকে আরো জোরদার করার আহবান জানান। আইসা নেত্রী অন্বেষা বলেন মোদী সরকার দেশকে জ্বালাচ্ছে। এই সরকারের পরাজয় অনিবার্য। পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির পারমিতা দাশগুপ্ত এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে আরো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দুর্বার সম্মন্বয় মঞ্চের সাথীরা। বক্তব্য রাখেন সাথী পদ্ম ।

jyanti

 

এই অবস্থানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দিব্যশ্রী হাজরা ও লাবনী জঙ্গীর আঁকা চিত্র প্রদর্শনী। বিভেদ ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিপ্রতীপে প্রতিরোধের ও ভালোবাসার চিত্র। অগ্রগামী মহিলা সমিতির নেত্রী ডলি রায় এই লড়াইকে গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে দেওযার, আরো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। নিখিল বঙ্গ মহিলা সংঘের সর্বানী ভট্টাচার্য্য এনপিআর বয়কট করার এবং এনআরসি বিরোধী এই আন্দোলন আরো ব্যাপক করার কথা বলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে এই সমাবেশে স্থানীয় মানুষ, বস্তিবাসী ও মাজারের কিছু মহিলারা উপস্থিত হন। উপস্থিত ছিলেন মহিলা সমিতির নেত্রী জয়ন্তী দাশগুপ্ত। আইসার ছাত্র ছাত্রীদের সমবেত শ্লোগান ও গান সমবেতদের মধ্যে উদ্দীপনার সঞ্চার করে। শোভনা নাথের আবৃত্তি ছিল সময়োপযোগী। মিতালী বিশ্বাসের সঞ্চালনার মাঝে নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখা কবিতা আবৃত্তি ছিল সংগ্রামী মেজাজের। সমাবেশে সঙ্গীতে সুষমা ও কল্যাণী, বাবুনি মজুমদার ও মেঘনার সঙ্গীত এবং সাধনা গোলদারের মুকুন্দদাসের গান এই সমাবেশে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।

সমাবেশ শেষ হয় পরবর্তী আরো দীর্ঘ ও সমবেত লড়াইয়ের অঙ্গীকার নিয়ে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-8