খবরা-খবর
কমরেড রামাকান্ত রামের হত্যার বিরুদ্ধে ভোজপুরে প্রতিবাদী জনসভা

গত ২৭ আগস্ট পূর্বতন সিপিআই(এমএল) কর্মী কমরেড রামাকান্ত রামেক ভোজপুর জেলার নাধি গ্রামে হত্যা করা হয়। বিগত ২৫ বছর ধরে এই গ্রাম সামন্ততন্ত্র-বিরোধী সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সিপিআই(এমএল) যখন রণবীর সেনার মত সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করছিল, বহুসংখ্যক দরিদ্র, দলিত এবং তরুণ কর্মী ঐ সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। সেই সময় ঐ সংগ্রামগুলির পুরোভাগে ছিলেন কমরেড রামাকান্ত রাম। তাঁর হত্যা সুস্পষ্টরূপেই দেখিয়ে দিচ্ছে যে বিজেপি জমানায় সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলো স্পর্ধিত হয়ে উঠেছে এবং দরিদ্র ও দলিতদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও হিংসার এক নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে।

কমরেড রামাকান্ত রাম সকালে মলত্যাগের জন্য যখন বনের দিকে যাচ্ছিলেন, সেই সময় সামন্ততান্ত্রিক গুণ্ডা রিতেশ রাই এবং বিকাশ রাই গুপ্তস্থান থেকে বেরিয়ে এসে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তাঁর হত্যার খবর পেয়ে সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোজ মঞ্জিল এবং অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং শত শত গ্রামবাসীও সেখানে জড়ো হন। পুলিশ এসে তাঁর দেহ নিয়ে যেতে চাইলে তাদের আটকানো হয়। অবশেষে, জেলার পুলিশ সুপার অবকাশ কুমার সেখানে পৌঁছে জনগণের দাবিগুলি মেনে নেন, যার মধ্যে অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারির দাবিও ছিল।

মাত্র কয়েক বছর আগে সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলো এই অঞ্চলের জনপ্রিয় তরুণ নেতা কমরেড সতীশ যাদবকে হত্যা করেছিল। সম্প্রতি বারুহি গ্রামে কমরেড রাজেন্দ্র সাওকে ঐ সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলোই হত্যা করে। নারায়ণপুর গ্রামে এক দলিত ছাত্র যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ''বিজেপি হঠাও, ভারত বাঁচাও'' প্রচার চালাচ্ছিল, সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলো তাকে একটা পোস্টে বেঁধে ভয়ংকরভাবে মারধোর করে। এই ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, বিজেপি-জে ডি (ইউ) শাসনে সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলোর মনোবল কি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবেই কমরেড রামাকান্ত রামের হত্যাকে দেখতে হবে। রণবীর সেনা গঠিত হয় ১৯৯৪ সালে এবং তারপর থেকে সে এমন সমস্ত গ্রামে গণহত্যা চালায় যেখানে সিপিআই(এমএল)-এর কোন কাজ ছিল না। সিপিআই(এমএল)-এর কর্মী বা সমর্থক নয়, এমন মানুষদেরও হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সবাই ছিল দরিদ্র, দলিত বা পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের জনগণ। কমরেড রামাকান্ত রামের হত্যার বিরুদ্ধেও দ্রুতই প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়।

হত্যার দিনই দরিদ্রদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার সংগঠিত হয়। গ্রামে এক সংকল্প সভা অনুষ্ঠিত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। নাধি এবং আশপাশের গ্রামগুলিতে নারী, পুরুষ, ছাত্র, যুবকদের নিয়ে সভাগুলি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সভাতে ১০০ থেকে ২০০ মানুষ অংশ নেন। ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুবক এবং নারীরা ৯ সেপ্টেম্বর লাল পতাকা এবং প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামে পৌঁছাতে থাকেন। রামাকান্ত রামের হত্যাকারী এবং তাদের রক্ষক বিজেপি-জেডি(ইউ) সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ক্রোধে ফুঁসতে থাকেন।

সংকল্প সভায় পৌরহিত্য করেন ড: জগদীশ চৌরাসিয়া এবং সেটি পরিচালনা করেন ব্লক সম্পাদক রঘুবর রাম। সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দ, বিধায়ক সুদামা প্রসাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোজ মঞ্জিল ও রাজু যাদব; এআইএসএ-র রাজ্য সম্পাদক শিবপ্রকাশ রঞ্জন ও অন্যান্যরা। বক্তারা সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলো এবং সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের এই হিংসা এবং হত্যাকাণ্ডগুলো বন্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে এই শক্তিগুলোকে যথাযোগ্য জবাব দেওয়ার আহ্বানও তাঁরা জনগণের কাছে জানান। তাঁরা আরও বলেন, সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার এক গৌরবজনক ইতিহাস নাধি গ্রামের আছে এবং কমরেড রামাকান্ত রামের হত্যার মধ্যে দিয়ে দরিদ্রদের পিছনে হটিয়ে দেওয়ার তাদের প্রচেষ্টাও সফল হবে না।

খণ্ড-25
সংখ্যা-30