খবরা-খবর
৮- ৯ জানুয়ারি ২০১৯ ধর্মঘটের সমর্থনে কনভেনশন

৯ অক্টোবর ২০১৮ মৌলালী যুব কেন্দ্র, কলকাতা, ভিড়ে ঠাসা হল, এক তলা দোতলায় বসার জায়গা নেই, অনেকেই মেঝেতে বসে পড়লেন। হলের বাইরেও প্রায় সমকক্ষ মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। উপস্থিত শ্রমিক-কর্মচারীদের শরীরের ভাষা বুঝিয়ে দিচ্ছিল যতই বাধা আসুক এবার তারা ধর্মঘটে সামিল হবেনই। অনেক দিন বাদে শ্রমিক-কর্মচারীদের উৎসাহজনক মেজাজ দেখা গেল।

কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ও ফেডারেশনগুলির ডাকে ৮-৯ জানুয়ারি ২০১৯ দুদিনের ধর্মঘটের সমর্থনে ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে রাজ্য কনভেনশন অনুষ্ঠিত হল মৌলালী যুব কেন্দ্রে। শুরুতে ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। কনভেনশনে সি আই টি ইউ নেতা অনাদি সাহু ধর্মঘটের ১২ দফা দাবিসনদ সহ প্রস্তাব পেশ করেন।

দাবি সমুহ—

(১) শ্রম আইন পরিবর্তন করা চলবে না।
(২) পেট্রোপণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা।
(৩) নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
(৪) সর্ব ক্ষেত্রে ন্যূনতম মাসিক বেতন ১৮০০০ টাকা।
(৫) সর্বজনীন পেনশন মাসে ন্যূনতম ৬০০০ টাকা।
(৬) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণ ও শেয়ার বিক্রি বন্ধ করা।
(৭) সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
(৮) সম কাজে সম বেতন চালু করা।
(৯) স্কীমকর্মী অঙ্গনওয়াড়ী, মিড-ডে-মিল, আশা, রেগা ও গৃহ পরিচারিকাদের শ্রমিক হিসাবে মর্যাদা দিতে হবে।
(১০) পরিবহন আইন পরিবর্তন করা চলবে না।
(১১) ফসলের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি।
(১২) কৃষি ঋণ মকুব।

photo৮ এবং ৯ জানুয়ারির সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শারদ উৎসবের পরেই রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচারাভিযান শুরু হবে। ২৫ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে জেলাভিত্তিক ও শিল্প ভিত্তিক যৌথ কনভেনশন সংগঠিত হবে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস জুড়ে শিল্প ক্ষেত্রে যৌথ সভা, কারখানায় গেট সভা, মহল্লায় মহল্লায় সভা হবে। ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর যৌথভাবে ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধর্মঘটের নোটিস জমা দিতে হবে। কনভেনশনের প্রস্তাব সমর্থন করে আইএনটিইউসি নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টচার্য বলেন মোদী সরকার হল উগ্র শ্রমিক বিরোধী সরকার, এই সরকারের মূল দৃষ্টিভঙ্গি হল পুরানো শ্রমনীতিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে কর্পোরেটদের সাহায্য করা। ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনই পারে মোদী সরকারকে অপসারণ করতে। এআইটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরি বলেন, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের, শ্রমজীবীদের অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। দেশজোড়া অসন্তোষকে সংগঠিত রূপ দিতে হবে। লড়াই আন্দোলন তীব্র করে ধর্মঘটকে সফল করে তুলতে হবে।

এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু বলেন, মোদী সরকারের জমানায় ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের ধর্মঘটের থেকে এবারের ৮ এবং ৯ জানুয়ারির ধর্মঘট আরও বড় চেহারা পেতে চলেছে। কারণ শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি নয় ৫০০টির বেশি বিভিন্ন পেশার স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে। বাংলায় অতীতের দুটি ধর্মঘট ভাঙতে যেভাবে এরাজ্যের সরকার কালা সার্কুলার জারি করেছে, পুলিশ নামিয়ে ধর্মঘট ভাঙতে চেয়েছে তার নজির বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও নেই। যদি এবারের ধর্মঘট ভাঙার জন্য দমনপীড়ন চালানো হয়, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় তার মোকাবিলা করে সফল করতে হবে ধর্মঘটকে।

এছাড়াও এদিনের কনভেনশনের প্রস্তাব সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন ইউটিইউসি-র পক্ষে দীপক সাহা, এআইইউটিইউসি-র পক্ষে দিলীপ ভট্টাচার্য, ১২ই জুলাই কমিটি-র পক্ষে তপন দাশগুপ্ত, এইচএমএস-র পক্ষে কুলদীপ সিং, টিইউসিসি-র পক্ষে দেবদাস চ্যাটার্জি, রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে বিজয়শংকর সিনহা, বেফি-র পক্ষে জয়দেব দাশগুপ্ত, এআইবিইএ-র পক্ষে পার্থ চন্দ্র এবং বিএসএনএল কোঅর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে শিশির রায়।

কনভেনশন পরিচালনা করে সিআইটিইউ-রপক্ষে সুভাষ মুখার্জি, এআইটিইউ-র পক্ষে তাপস ভট্টাচার্য, আইএনটিইউসি-র পক্ষে গণেশ সরকার, এআইসিসিটিইউ-র পক্ষে অতনু চক্রবর্তী, এইচএমএস-র পক্ষে ভূপেন্দ্র চন্দ্র পাল রায়, এআইইউটিইউসি-র পক্ষে শান্তি ঘোষ, ইউটিইউসি-র পক্ষে তাপস দাস চৌধুরি, ১২ই জুলাই কমিটি-র পক্ষে সমীর ভট্টাচার্য, বিএসএনএল কোঅর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে অলোক নন্দী, বেফি-র পক্ষে অশোক দাস, টিইউসিসি-র পক্ষে রাম অবতার প্রসাদ এবং মার্কেন্টাইল ফেডারেশনের পক্ষে বরেন্দ্র নাথ বসুকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।

খণ্ড-25
সংখ্যা-32