খবরা-খবর
গাড়োয়ায় ধর্ষণে অভিযুক্তকে সুরক্ষা যোগাচ্ছে স্থানীয় বিধায়ক

গাড়োয়া জেলার মেরাল ব্লকে ধর্ষণের শিকার এক দলিত মহিলা ন্যায় বিচারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেড়ালেন, কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগী ঐ মহিলার পরিবারের সদস্যদের এবং তাদের পক্ষে দাঁড়ানো লোকজনদের বিরুদ্ধেই এফ আই আর দায়ের করল। তারা এটা করল অভিযুক্ত আশিষ দুবেকে রক্ষার জন্য। ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কারকোমা গ্রামে। গ্রাম পঞ্চায়েত ধর্ষণের শিকার মহিলার পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে একটা সভা ডেকে ঘটনাটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর ঐ মহিলা ১৭ সেপ্টেম্বর মেরাল থানায় অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করতে গেলে পুলিশ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং এফআইআর না করেই তাকে ফিরে আসতে হয় অভিযুক্তর পরিবারের লোকজন এবং তাদের উচ্চবর্ণের সহযোগীরা প্রকাশ্যেই পুলিশ এবং বিধায়কের সমর্থনের কথা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা এতটাই দু:সাহসী হয়ে ওঠে যে ঘটনার এক সাক্ষী চন্দ্রাবলী চৌধুরিকে মারধোর করতেও পিছপা হয় না। অন্যায়ের শিকার ঐ পরিবার এরপর গাড়োয়ার এস পি-র কাছে একটা স্মারকলিপি দেয় এবং একই সঙ্গে আদালতেও মামলা করে। ফলে এফ আই আর দায়ের করা সম্ভব হয়, যদিও ডাক্তারি পরীক্ষা করা সম্ভব হয় ৫ অক্টোবর, ঘটনার ২২ দিন পর। কিন্তু ন্যায়বিচারের আশা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়েই দেখা দিচ্ছে।

মেরাল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়ায় ধর্ষণের সাক্ষী চন্দ্রাবলী চৌধুরী এবং ধর্ষিতার শ্বশুর দশরথ চৌধুরি, এক প্রতিবন্ধী চন্দ্রিকা চৌধুরী এবং শিক্ষক অর্জুন রামের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঐ নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে এই চার ব্যক্তিই সোচ্চার হয়েছেন। উচ্চবর্ণের অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাঁরা এবং সিপিআই(এমএল) প্রতিবাদে অনমনীয় রয়েছে এবং পুলিশের করা এফআইআর-এ সিপিআই(এমএল)-কেও জড়ানো হয়েছে। বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডের অবস্থা এমনই হয়েছে যে, ধর্ষণের শিকার মহিলার জন্য ন্যায়বিচার চাওয়াটাকেও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান উচ্চবর্ণের আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ বলেই গণ্য করছে। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্র নাথ তিওয়ারি দুর্গা পূজার সময় ঐ এলাকা পরিদর্শন করেন এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টির অভিযোগে সিপিআই(এমএল)-কে অভিযুক্ত করেন।

ধর্ষণে অভিযুক্তকে স্থানীয় বিধায়কের মদত দেওয়ার প্রতিবাদে সিপিআই(এমএল) ৪ নভেম্বর কারকোমা গ্রামের হরিজন টোলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এক প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। ঐ সভা পরিচালনা করেন রহমতুল্লা আনসারি এবং সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির গাড়োয়া জেলা সম্পাদক কালিচরণ মাহাতো এবং সুষমা মেহতা, বীরেন্দ্র চৌধুরি, রামনরেশ চৌধুরি, ভরদুল ভুইঞাঁ ও আরো অনেকে। বক্তারা ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হওয়ায় ধর্ষণের শিকার মহিলা এবং তার পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদেরই বিপদে ফেলার চেষ্টার জন্য বিজেপি বিধায়ক, রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ধিক্কার জানান। তাঁরা আরো বলেন, যতদিন না ধর্ষক এবং তার মদতকারীরা শাস্তি পাচ্ছে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁরা জানান, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক জাতপাতবাদী বিজেপি শাসনাধীনে দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং নারীদের উপর নিপীড়ন বেড়ে চলেছে আর অপরাধীরা বিজেপির মদত পেয়ে শাস্তিকে এড়িয়ে চলেছে। এই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাড়হাওতা ডাণ্ডার কুলদীপ চৌধুরি, ডুমারিয়ার অমিত তিওয়ারি, তিলদাগের সত্যেন্দ্র, গাড়োয়া- জোবারাইয়ার রবিরঞ্জন, বউরাহার রামজি মাহাতোর মেয়ে ডেন্টাল কলেজের ছাত্রী সোনালির হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডগুলি নিয়ে বিজেপি বিধায়ক মুখে কুলুপ এঁটেছেন আর হত্যাকারীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

খণ্ড-25
সংখ্যা-35