প্রতিবেদন
১ মে শ্রমিক দিবসকে সংগ্রামের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিন

গত ৫ নভেম্বর সিপিআই(এমএল)-এর ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান—২০১৯ এর সরকারী ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকা থেকে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসকে গত ৩ নভেম্বর বাতিল করে দিয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপি জোট সরকার। সাধারণ অর্থে একটি ছুটির দিন বাতিল করে একটি কাজের দিন বৃদ্ধির বিষয় এটি নয়। এটা মালিক তথা পুঁজিপতি শ্রেণীর প্রভুত্বের স্বার্থে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস থেকে মে দিবসকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত। এটা রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে শ্রমিক শ্রেণীর অর্জিত রাজনৈতিক অধিকারের ওপর ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক-মতাদর্শগত আক্রমণের অঙ্গ বলে মনে করে সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণীর ওপর যে বহুমাত্রিক হামলা নেমে এসেছে, তার শরিক হয়ে কর্পোরেট পুঁজিবান্ধব মোদী সরকার একটার পর একটা যে হামলাগুলি নামিয়ে আনছে এটা তারই অঙ্গ। ত্রিপুরায় বিজেপি জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালের ১ মে দিনটিতে সরকারি ভাবে কোনো অনুষ্ঠান করা তো দূরের কথা, বেসরকারি ট্রেড ইউনিয়ন স্তরেও কোথাও তা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে দেয়নি। কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় বামপন্থী দল ও ট্রেড ইউনিয়ন রাজ্য ও জেলাস্তরে বহু চাপ থাকা সত্বেও তা সাহসের সাথে পালন করে। বরং রাজ্য সরকার ও বিজেপি দল ১ মে-র পরিবর্তে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বিএমএস সমর্থিত সদ্য গজিয়ে ওঠা ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে দিয়ে মিছিল করে শ্রমিক দিবস উদযাপন করতে উৎসাহিত করেছে। আর ক্ষমতায় আসার পর ত্রিপুরায় বিজেপি জোট সরকার শ্রমিক কর্মচারীদের পেনশনের অধিকার কেড়ে নেওয়া, সপ্তম-পে কমিশন নামে জুমলা উপহার, বিভিন্ন প্রকল্পে শ্রমিক ছাঁটাই, কর্মী ছাঁটাই, কর্মসংকোচন এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকারের ওপর একের পর এক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে ।

তাই, ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ঐতিহাসিক মে দিবসকে মুছে দিয়ে আরএসএস নির্দেশিত বিশ্বকর্মা পূজোর দিন শ্রমিক দিবস পালন করার মতাদর্শ আজ রাজ্য তথা দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য থেকে এই ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে মনে করে সিপিআই(এমএল)। আরএসএস-এর মধ্যযুগীয় তথাকথিত হিন্দুত্বের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দিন হিসেবে ঐতিহাসিক ১ মে-কে কেড়ে না নিতে আবেদন জানায়। কেননা হে মার্কেটে রক্তস্নাত আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে সারা পৃথিবীতে ২০০টি দেশ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবং ৮০ টি দেশ ছুটির দিন হিসেবে এই দিনটিকে উদযাপন করে। এরই অঙ্গ হিসেবে ১৯৭৮ সালে এ রাজ্যে এই দিনটিকে সরকারি ভাবে ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।

১৮৮৬-র রক্তস্নাত শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৮ ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা বিশ্রাম, ৮ ঘন্টা বিনোদন -এর অর্জিত অধিকারগুলি ছিনিয়ে নিয়ে ১২-১৪ ঘন্টা দৈনিক কাজ চালু করে আজ মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার স্বার্থে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অস্থায়ী নিয়োগ, হায়ার এন্ড ফায়ার, শ্রম আইনের নির্বিচারে সংশোধনী বিল, সামাজিক সুরক্ষা কোড বিল ইত্যাদি চালু করার মাধ্যমে মে দিবসের তাৎপর্যকে কার্যত মুছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ত্রিপুরায় এই আক্রমণকে বৃহৎ কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে দেখতে হবে । তাই, শ্রমের ওপর পুঁজির প্রভুত্ব বৃদ্ধি ও দেশি বিদেশী পুঁজির গোলামী করার এই রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছে সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।

খণ্ড-25
সংখ্যা-35