খবরা-খবর
২৩০০ টাকা কুইন্টাল দরে সরাসরি চাষিদের থেকে ধান কেনার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান ও গ্রামে গ্রামে পদযাত্রার কর্মসূচী

ফড়ে দালালদের থেকে নয়, সরাসরি চাষিদের থেকে ধান কেনার দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করলো সারা ভারত কিষাণ মহাসভার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কাউন্সিল বৈঠক। পঞ্চায়েতে ক্যাম্প করে ধান কিনতে হবে এবং লিজ-চুক্তিবদ্ধ চাষিদের সকলের নাম নথীভূক্ত করে তাদের থেকে ধান কিনতে হবে, প্রধানত, এই দাবিতে আগামী ১২-১৭ নভেম্বর সময়কালে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হবে, তার আগে চালানো হবে কৃষকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় - বাড়ি বাড়ি ঘুরে দাবিসনদে কৃষকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। প্রধান দাবি - ফসলের ন্যায্য দাম চাই, কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে ডিজেল সরবরাহ করো। এছাড়া জমির প্রশ্নে নানাবিধ দাবি, যথা : খাস জমির তালিকা প্রকাশ করে ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টন, পাট্টা জমির দখল, দখল জমির পাট্টা, বাস্তুজমির পাট্টা প্রভৃতি। গত ২২ অক্টোবর বর্ধমানের রেল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত কাউন্সিল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উৎপাদন খরচের দেড় গুণ দাম সহায়ক মূল্য হিসাবে কৃষকদের প্রাপ্য-কৃষি কমিশনের এই রায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার হিসাবের কারচুপি করে ধানের সংগ্রহমূল্য কমিয়ে ১৭৫০ টাকা করে দিয়েছে। অথচ জমি ও যন্ত্রপাতির ভাড়া সহ খরচের সম্পূর্ণ হিসেব ধরলে দাম হওয়া উচিত কুইন্টাল পিছু ২৩০০ টাকা। তাই এই দরে ধান কেনার দাবি আমরা তুলে ধরেছি। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বিপুল হারে শুল্ক ও ভ্যাট চাপিয়ে ডিজেলের দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে। তাই কর কমাও, কৃষিতে কম দামে ডিজেল সরবরাহ কর—এই দাবিটাও আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এছাড়া দাবিসনদে ব্লকের আরও দু-একটি জ্বলন্ত বিষয় যুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে।

এ বছর বিগত খরিফ/বোরো মরসুমে ধান কেনা নিয়ে বড় মাত্রায় দুর্নীতির খবর সামনে এসেছিল।রাজ্য সরকার লক্ষ লক্ষ টন ধান কেনার কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করেছিল। কিন্তু তদন্তে ধরা পরে লক্ষ লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছে স্বল্প সংখ্যক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এছাড়া অনেক দেরীতে ধান কিনতে নামায় গরিব-প্রান্তিক চাষিরা অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যাপক মাত্রায় ভূয়া এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ধান কেনা বেচায় দুর্নীতির কারবার চলেছে। তাই এবছর ধান কাটার শুরু থেকেই আমাদের গরিব মধ্য চাষি ও লিজ- চুক্তির চাষিদের স্বার্থরক্ষায় সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। চাষির প্রাপ্য টাকা ফড়ে-মহাজন-ব্যাবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে কেন জবাব দাও—এই প্রচার গড়ে তুলতে হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ধান কেনার বিষয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর কাছে সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে ডেপুটেশন দেবে।

কাউন্সিল বৈঠকে গ্রামাঞ্চলের অন্যান্য যে দাবিগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় তা হলো, কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে ১ টাকা ইউনিট দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে; গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে মাসিক বিল চালু করো; সেচ ব্যবস্থা-খাল/জলাশয় সংস্কারে ১০০ দিনের কাজ চালু করো; ভূপৃষ্ঠ সেচের উন্নয়ন চাই; কৃষি জমিতে প্রমোটারী-সিন্ডিকেট রাজ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; ভর্তুকি দিয়ে সার-বীজ সরবরাহ করো; কৃষিতে কর্পোরেটদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করো, কৃষি বিপণন আইন বাতিল করো; প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিজ-চুক্তির চাষিদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া জমি সংক্রান্ত দাবিগুলি তুলে ধরে আগামী ডিসেম্বর মাসে গ্রামাঞ্চলে পদযাত্রা সংগঠিত করা হবে। ব্লক অথবা লাগোয়া একাধিক ব্লক ধরে পরিকল্পনা নিতে হবে।

আগামী ২৮-৩০ নভেম্বর দিল্লীতে এক লক্ষ কৃষক সমাবেশিত করে দীর্ঘ পদযাত্রা ও পার্লামেন্ট অভিযানের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সর্বভারতীয় যুক্তমঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও তাতে অংশগ্রহণ করা হবে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-33