প্রতিবেদন
কৃষক মুক্তি মোর্চার দিল্লী সংসদ মার্গ সমাবেশে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ভাষণ

পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন চলছে। এগুলো এমনই রাজ্য যেখানে কৃষকদের উপর লাগাতার দমন চলছে। রাস্তায় কৃষকরা মারা যাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষকদের উপর গুলি চলে, সেখানে কৃষক শহীদ হওয়ার পর দেশে ব্যাপক কৃষক ঐক্য গড়ে উঠেছে। কৃষকদের সমস্ত দাবি এই নির্বাচনে অগ্রাধিকারে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু মিডিয়াতে অন্য কিছু চলছে। এই রাজ্যগুলোর বেশিরভাগেই বিজেপি সরকার রয়েছে। আর কথা চলছে হনুমানের জাত কি ছিল তা নিয়ে। লোকেদের কাছে ওর গোত্র জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। এর বিপরীতে, আজ আমরা বলতে এসেছি যে, আমরা মেহনতী কৃষক, আমাদের গোত্র শ্রমিক। আর যে হিটলারশাহীকে মানুষ খারিজ করে দিয়েছে, সেই হিটলারশাহীর উত্তরসূরী আপনারা।

কৃষকদের থেকে এই শক্তি, ঐক্য আর সাহস আমরা পাই। পুরো দেশ মূল্যবৃদ্ধিতে মার খাচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের ফসলের দাম পাচ্ছি না। আমাদের জীবন সস্তা হয়ে গেছে। কৃষকদের আত্মহত্যা দেশের নীতিকে পরিবর্তন করতে পারছে না। সাথী, আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কৃষক স্বার্থে দেশের নীতি স্থির করতে হলে দলের ঘোষণাপত্রে তা করতে হবে। এর সাথে সাথে দেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন হোক যেখানে কেন্দ্রে কৃষক থাকবে, শ্রমিক থাকবে, মহিলা থাকবে এবং দেশের ভবিষ্যত নির্মাণকারী হবে ছাত্র-যুবরা। এই রাজনীতির জন্য আমাদের আন্দোলনকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। সামনে নির্বাচন আসছে। আপনারা ঠিক করেছেন যে এইবারের নির্বাচনে কৃষক-শ্রমিক কথা বলবে। দেশের সাধারণ মানুষের আওয়াজ মজবুত হবে। যারা ক্ষমতার জোরে লাগাতার কৃষক বিরোধী নীতি তৈরি করেছে ও তাকে লাগু করেছে, আজ তাদের চলে যাওয়ার সময় এসে গেছে। এই জন্য এই সভা ওদের জন্য সতর্ক বার্তা, ওদের বিদেয় করার ঘোষণাও বটে। আগামীদিনে দেশে তারাই রাজ করবে যারা মেহনতী জনতার স্বার্থে কাজ করবে।

এটা একদম ঠিকই বলা হচ্ছে যে, ওদের হারাও, ওদের ভয় পাওয়াও। দেশের শ্রমিকদের থেকে, সর্ব সাধারণ থেকে, গণতান্ত্রিক জনমত থেকে ওদের ভয় পাওয়া উচিত। এই সরকার আমাদের ভয় পাওয়াতে চাইছে, যেখানে গণতন্ত্রে সরকারেরই জনতাকে ভয় পাওয়া উচিত, সরকারের ভয় পাওয়া উচিত সত্যের আওয়াজকে, ন্যায়কে, মেহনতী জনতার আওয়াজকে, আমাদের আন্দোলন থেকে সেই ভয় তৈরি হোক। আমরা জানি যে নীতির জন্য আমাদের লড়াই তা এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের উপর বেসরকারিকরণের নীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের জল-জঙ্গল-জমি আমাদের থেকে কেড়ে নিয়ে, আমাদের রুজি-রুটি কেড়ে নিয়ে, অল্প কিছু পুঁজিপতিদের মজবুত করার জন্য নীতি চলছে। এমনটাই গত ২৫-৩০ বছর ধরে চলছে।

এই জন্য আমাদের এই লড়াইয়ে দেশের শ্রমিকরাও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আগামী ৮-৯ জানুয়ারী নতুন বছরে দেশের সংগঠিত-অসংগঠিত শ্রমিকেরা ঘোষণা করেছে যে দু-দিন সারা ভারত হরতাল করবেন। যেমনভাবে আপনারা ২৯-৩০ নভেম্বর দু-দিন ধরে দিল্লী যাত্রা করে দিল্লী থেকে গোটা দেশকে বার্তা দেওয়ার কাজ করেছেন, তেমনি ৮-৯ জানুয়ারী গোটা দেশের শ্রমিকেরা সরব হবেন। যেমন শ্রমিকেরা আপনাদের পাশে থেকেছে, তেমনি আপনাদের কাছে অনুরোধ ব্যাপক কৃষক ঐক্যকে শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতে হবে। এভাবে দেশের মেহনতী বর্গের এক ব্যাপক ঐক্য তৈরি হবে। এই ঐক্যের বিরুদ্ধে আমাদের বিভাজিত করতে চাইছে ফ্যাসিবাদীরা মন্দিরের ইস্যুতে।

দক্ষিণে ওরা একটা মন্দির পেয়েছে শবরীমালা। সুপ্রীম কোর্ট রায় দিয়েছে ওখানে মহিলাদের যাওয়ার পুরো অধিকার আছে। কিন্তু ওরা যেতে দিতে চায় না। ওরা অযোধ্যা পেয়ে গেছে। যখন যখন নির্বাচন আসে অযোধ্যার কথা বলে। ওদের এক নেতা ২১ নভেম্বর আম্বানির হাওয়াই জাহাজে মহারাষ্ট্র থেকে উড়ে অযোধ্যা পৌঁছে গেলেন মন্দির বানানোর জন্য। মহারাষ্ট্রে উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকরা যায়, গুজরাটে যখন বিহারের শ্রমিকরা যায়, তখন তাদের মেরে ধরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আজ সেই নেতা আম্বানীর প্লেনে উড়ে গিয়ে অযোধ্যায় হাঙ্গামা করতে চাইছেন। কিন্তু অযোধ্যা তাকে খারিজ করে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের গ্রাম-গ্রামান্তর ওদের খারিজ করে, ওদের অভিযান বিফল করে, দিল্লী অভিযান করে নিজেদের আওয়াজ জোরদার করেছে।

দেড় বছরে কৃষকদের এই বিশাল ঐক্য গড়ে ওঠা এক বিশাল ব্যাপার। দেশের ২০০টিরও বেশি কৃষক সংগঠনকে এক মঞ্চে আনার কাজ আপনারা করেছেন। ব্যাপকতম কৃষক ঐক্য দেশের এক রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে সামনে এসেছে, যা দেশের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচানোর লড়াইয়ে সব থেকে বড় শক্তি হবে। এই শক্তিকে তৈরি করতে, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি সমস্ত সাথীদের জয় ভীম-লাল সেলাম জানাচ্ছি।

কৃষক ঐক্য জিন্দাবাদ!

খণ্ড-25
সংখ্যা-37