ঘটনা ও প্রবণতা
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁর আমলে যথেষ্ট চাকরি হলেও তার সঠিক হিসেবটা কষা নেই। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা সরকারি তথ্য থেকেই হিসেব কষে দেখিয়ে দিলেন, আর্থিক বৃদ্ধির হারে তাঁর জমানায় ভারত বিশ্বসেরা বলে মোদী সরকার যতই ঢাক পেটাক, আর্থিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন চাকরি কিন্তু হচ্ছে না। উল্টে ২০১৩ থেকে ২০১৫-র মধ্যে মোট চাকরির সংখ্যা ৭০ লক্ষ কমেছে। এবং ক্রমশ কমেই যাচ্ছে।

মোদী ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বছরে ১ কোটি নতুন চাকরি দেবে তাঁর সরকার। কিন্তু শ্রম মন্ত্রকের পরিসংখ্যানেই অনেক কম চাকরির হিসেব দেওয়ায়, ২০১৫-র পর থেকে সেই সমীক্ষা প্রকাশই বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার।

আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর সাস্টেনেবল এমপ্লয়মেন্ট'-এর দেশের চাকরির অবস্থা নিয়ে রিপোর্টে জানাল, ১০ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি হলে নতুন চাকরির সংখ্যা ১ শতাংশ বাড়ছে। এখন আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ঘরেই ঘোরাফেরা করছে। ফলে নতুন চাকরির সংখ্যা বাড়ছে ১ শতাংশেরও কম হারে। রিপোর্টে উল্লেখ্য, ''২০১১ থেকে ২০১৫-য় আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ। চাকরি বেড়েছে মাত্র ০.৬ শতাংশ। তার পরের বছরেও এই ছবিটা বদলায়নি।''

বিভিন্ন সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তৈরি ওই রিপোর্ট বলছে, চাকরি হলেও বেতন মিলছে নামমাত্র। গত এক দশকে সামগ্রিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বছরে ৩ শতাংশ হারে বাড়লেও এখনও ৮২ শতাংশ পুরুষ কর্মী, ৯২ শতাংশ মহিলা কর্মীর মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকারও কম। অথচ কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী, ন্যূনতম বেতন হল মাসে ১৮ হাজার টাকা।

লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকারের জন্য এর থেকেও বেশি চিন্তার কারণ হল, তফসিলি জাতি, জনজাতির মানুষদেরই কম বেতনের চাকরিতে ভিড় বেশি। ২০১১ থেকে ২০১৫-র মধ্যে গ্রামে কৃষিজীবী মানুষের আয় অনেকখানি কমেছে। পরের তিন বছরেও বিশেষ উন্নতি হয়নি। দেশ জুড়ে কৃষক, দলিতদের ক্ষোভ-প্রতিবাদের পিছনে এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

কাজ কই!

(১) ২০১১-২০১৫—আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ, নতুন চাকরি হয়েছে ০.৬ শতাংশ।

(২) ২০১৩-১৫—মোট চাকরির সংখ্যা কমেছে।

(৩) স্নাতক, স্নাতকোত্তরদের মধ্যে বেকারির হার ১৬ শতাংশ, যাঁরা নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও কাজ পাচ্ছেন না।

(৪) ৮২ শতাংশ পুরুষ ও ৯২ শতাংশ মহিলার মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকার কম।

(৫) কারখানায় ঠিকা কর্মী, অ্যাপ্রেন্টিস, ট্রেনিদের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের দিয়ে স্থায়ী কর্মীদের কাজ করানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে না সামাজিক সুরক্ষা।

(৬) কারখানার কর্মীদের ৩০ শতাংশই ঠিকা কর্মী।

(৭) কম বেতনের কাজে দলিতদের সংখ্যা বেশি। বেশি বেতনের কাজে উচ্চবর্ণের ভিড় বেশি।

(৮) পুরুষদের তুলনায় মহিলা কর্মীর সংখ্যা কমছে। উত্তরপ্রদেশে প্রতি ১০০ জন পুরুষে মাত্র ২০ জন মহিলা কর্মী।

খণ্ড-25
সংখ্যা-37