খবরা-খবর
নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার বার্তা দিল সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একাদশ রাজ্য সম্মেলন

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একাদশ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন ২৪-২৬ নভেম্বর সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হল কৃষ্ণনগরে। সম্মেলন স্থল হিসেবে নগরের নামাঙ্কন করা হয় “গৌরী লঙ্কেশ নগর”, সভাগৃহ ও সভামঞ্চ উৎসর্গ করা হয় ক্রমানুসারে প্রয়াত কমরেড ডি পি বক্সী ও কমরেড মৃত্যুঞ্জয় হালদার স্মরণে। প্রকাশ্য কর্মসূচীতে ছিল কৃষ্ণনগর রেল স্টেশন থেকে সম্মেলনস্থল রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়া, তারপরে “আজকের চ্যালেঞ্জসমূহ : বামপন্থীদের ভূমিকা” বিষয়ভিত্তিক এক আলোচনা সভা। আজকের চ্যালেঞ্জ যে মূলত বিজেপির ফ্যাসিবাদ ও তৃণমূলের স্বৈরাচারকে যেকোনো মূল্যে ময়দানে মোকাবিলার বিষয়, এই নির্যাসই সভার আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে। বক্তব্য রাখেন উজ্জ্বল চৌধুরী (সিপিআই), মনোজ ভট্টাচার্য (আরএসপি), সূর্যকান্ত মিশ্র (সিপিএম) ও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (সিপিআইএমএল)। শ্রোতার আসনে ছিলেন সম্মেলনে আসা প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও অতিথিবর্গ সহ পার্টি কর্মী-সমর্থক এবং বহু বামমনস্ক মানুষজন। সব মিলিয়ে হয়ে উঠেছিল এক উল্লেখযোগ্য সমাবেশ।

তারপর তিনদিন ধরে চলে এক প্রাণবন্ত সম্মেলন। পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছিলেন পর্যবেক্ষক কবিতা কৃষ্ণাণ, সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্যদ্বয় স্বদেশ ভট্টাচার্য ও অরিন্দম সেন। সম্মেলন পরিচালনার সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন অভিজিৎ মজুমদার, সুবিমল সেনগুপ্ত, অতনু চক্রবর্তী, মীনা পাল, কাজল দত্ত, সুধীর মুর্মু ও তসলিম আলি। সভাপতিমন্ডলীকে সহযোগিতার আসনে ছিলেন জয়তু দেশমুখ, বাসুদেব বসু, সুব্রত সেনগুপ্ত, অপূর্ব ঘোষ ও বাবলু ব্যানার্জী।

অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্বাগত ভাষণ দেন কৃষ্ণনগরের প্রবীণ পার্টি নেতা বিপ্লব বাগচী। সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে উদ্বোধনী বক্তব্য পেশ করেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণাণ।

রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলা থেকে সব মিলিয়ে সাড়ে তিন শতাধিক সাথী সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন। ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী, অংশ, স্তর, সম্প্রদায় ও বর্গ থেকে আসা প্রতিনিধিরা। যেমন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র- যুব-মহিলা-সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী ও কর্মচারিবর্গের প্রতিনিধি, তেমনই এসেছিলেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধিরা, বয়সের বিচারে প্রবীণ, মাঝবয়সী ও নবীনেরা।

প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য বিদায়ী রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ। তারপর প্রতিনিধিদের সমস্ত অংশের মধ্য থেকে দু-চারজন পর্যবেক্ষক সহ মতামত রাখেন সর্বমোট ৮২ জন। প্রতিনিধিদের বক্তব্যপর্ব সম্পন্নের পর জবাবী ভাষণ রাখেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ। অবশেষে বেশ কিছু সংশোধনী-সংযোজনী সহ প্রতিবেদনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

এরাজ্যের পার্টি সংগঠনকে সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সবদিক থেকে তৈরি হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা স্বদেশ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

সবশেষে বিদায়ী রাজ্য কমিটির প্রস্তাব অনুসারে ৪৯ সদস্যের নতুন রাজ্য কমিটিকে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত করেন। আর, নবনির্বাচিত কমিটি পার্থ ঘোষকে রাজ্য সম্পাদক পুন:নির্বাচিত করেছে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সম্মেলন গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি মেনে সফল হওয়ার কথা বলেন। কিছু প্রস্তাবও গৃহীত হয়। প্রকাশ্য অধিবেশন থেকে মূল অধিবেশন পর্যন্ত নতুন প্রজন্মের সুমেলী চক্রবর্তী সহ সরিৎ চক্রবর্তী, নীতীশ রায়, বাবুনী মজুমদার, মল্লিকা সরকার প্রমুখ আরও অনেকে গণসঙ্গীতে প্রাণ ভরিয়ে দিশা দেখিয়ে টানটান রাখেন। অভিনন্দন পার্টির নদীয়া জেলা সংগঠনকে, বিশেষত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীকে, যারা অক্লান্ত পরিশ্রমে ও সৃজনী উদ্যোগে সম্মেলনের আয়োজনকে সফল করে তুলতে সহযোগিতা করেছেন। অভিনন্দন সম্মেলন চত্বরে যারা প্রগতিশীল পুস্তক কেন্দ্র চালিয়েছেন, অভিনন্দন নতুন ছাত্র প্রতিনিধিদের, যারা সম্মেলন চলাকালীন “প্রতিরোধের আমার দেশ” পত্রিকা প্রকাশ করার সাফল্য অর্জন করলেন। সবশেষে, আন্তর্জাতিক সর্বহারার সঙ্গীতে মুখর হয়ে, আর ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শক্তিসমূহকে প্রতিহত করার রণধ্বনি তুলে সম্মেলনের পরিসমাপ্তি হয়। সারা হল নির্দ্ধারিত সম্মেলন, আবার নতুন করে লাগতে হবে সংগঠনকে সর্বস্তরে শক্তিশালী করে তোলার কাজে, এগিয়ে যেতে হবে ঘোষিত লক্ষ্যাভিমুখী নির্দ্ধারক সংগ্রামের দিকে।


পার্টির ৪৯ সদস্যের নব নির্বাচিত রাজ্য কমিটি

পার্থ ঘোষ, কার্তিক পাল, অভিজিৎ মজুমদার, প্রবীর হালদার, সলিল দত্ত, জয়তু দেশমুখ, কল্যাণ গোস্বামী, অনিমেষ চক্রবর্তী, বাসুদেব বসু, মীনা পাল, সজল পাল, সুবিমল সেনগুপ্ত, সুব্রত সেনগুপ্ত, অতনু চক্রবর্তী, সজল অধিকারী, বাবলু ব্যানার্জী, সুধীর মুর্মু, তপন বটব্যাল, কাজল দত্তগুপ্ত, পবিত্র সিং, বিমান বিশ্বাস, দিবাকর ভট্টাচার্য, কিশোর সরকার, কাজল দত্ত, নবেন্দু দাশগুপ্ত, কৃষ্ণ প্রামাণিক, চৈতালী সেন, ভাস্কর দত্ত, অর্চনা ঘটক, নবকুমার বিশ্বাস, মলয় তেওয়ারী, অমিত দাশগুপ্ত, অপূর্ব ঘোষ, তসলিম আলি, সুরিন্দর কুমার, চঞ্চল দাস, মুকুল কুমার, নীলাশীষ বসু, আনসারুল আমান মণ্ডল, জয়শ্রী দাস, প্রবীর দাস, অন্নদা প্রসাদ ভট্টাচার্য, ইব্রাহিম সেখ, কল্যাণী গোস্বামী, নীতীশ রায়, রণজয় সেনগুপ্ত, পরিতোষ ব্যানার্জী।

খণ্ড-25
সংখ্যা-36