প্রতিবেদন
প্রতিনিধিদের সম্বোধিত করে বিদায়ী রাজ্য সম্পাদকের ভাষণ

সম্মেলনে প্রতিনিধিদের আলোচনা পর্ব শেষ হওয়ার পর বিদায়ী রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সম্পাদক পার্থ ঘোষ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, এই সম্মেলনকে ঘিরে যে প্রচার কাজ চলেছে সারা বাংলা জুড়ে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিজেপির ফ্যাসিবাদ ও তৃণমূলের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচার কাজ চলেছে যথেষ্ট সাহসের সঙ্গে এবং তা ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছে। করন্দার মহিলা কমরেড যেটা বলেছেন, এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য যে তৎপর, গণ উদ্যোগে সাবলীল ক্যাডারদের ও নেতৃত্বের প্রয়োজন, যেন জং না ধরে সেটা দেখা প্রয়োজন — সেই স্পিরিটটাই আমাদের সার্বিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ভাঙড় আন্দোলন ২০১৩/১৪ সাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আমরা বারবার সেখানে গেছি। সাধারণ সম্পাদক কলকাতা ও ভাঙরের কর্মসূচীতে বারবার সামিল হয়েছেন। ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক কর্মীরা এতে সাধ্যমত অংশগ্রহণ করেছেন। যারাই আন্দোলন সংগঠিত করবেন মানুষের স্বার্থে, কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থে—আমরা তাকেই স্বাগত জানাই। কারণ “জনগণের স্বার্থই পার্টির স্বার্থ”। ক্ষমতার অধিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত নামীদামী মানুষেরা কীভাবে যৌন হেনস্থা করেন, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে মি টু আন্দোলন। অভিযোগ জানানোর কোনও সময়সীমা থাকতে পারে না। সেটা তিরিশ বছর যন্ত্রণাভোগের পরও জানানো যেতে পারে। এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি সমগ্র পার্টিকে বুঝতে হবে। বিশেষ করে পুরুষ কমরেডদের বিশেষ করে বুঝতে হবে।। জেন্ডার সেন্সিটাইজেশনের কাজটা ধারাবাহিকভাবে করে যেতে হবে। গণ অধ্যয়নের বিষয়টিকে প্রসারিত করার জন্য আমরা ‘মার্কস ২০০’ নিয়ে অনেক জায়গায় আলোচনা করেছি। আদিবাসী সমাজ প্রতিদিন নানা ধরনের হামলার মুখোমুখি হন। কঠিন রুক্ষ জমিতে চাষবাস করা, বনের ওপর অধিকার কমে যাওয়া, নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় দমন, অনাহারের সমস্যা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় তাদের জীবন জর্জরিত। এই মানুষদের সাথে আমাদের পার্টির সম্পর্ককে নিবিড় করার জন্য এবং তাদের অধিকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কিছু সচেতন উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি সারা ভারতে দলিত আন্দোলনে নতুন ঢেউ দেখা যাচ্ছে। দলিতদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে, মতুয়াদের একাংশকে হাত করে দলিত মুক্তি হবে না। তাদের আন্দোলনের সাথে বাম আন্দোলনের সম্পর্ককে মেলানোর চেষ্টার কিছু উল্লেখ আছে। একে উন্নত করার অবকাশ আছে। এই প্রশ্নেই আম্বেদকর নিয়ে আমরা নতুন অধ্যয়ন শুরু করেছি। কোনও আইকনকে আমরা সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে খোলাভাবে তুলে দিতে রাজি নই। সমস্ত দক্ষিণপন্থী শক্তি কোনওমতেই ফ্যাসিস্ট নয়। এটা না বুঝলে লেনিন কথিত চোখ বুজে শত্রুকে গুলি করার অবস্থা হবে। স্বৈরতন্ত্রের অনেক কার্যকলাপ ফ্যাসিস্টদের সাথে মেলে, কিন্তু তাদের মধ্যে গুণগত ও মাত্রাগত তফাৎ আছে। অ্যাগ্রেসিভ ইউনাইটেড ফ্রন্ট পলিসি আমাদের জন্য জরুরী। ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার জন্য গোটা পার্টিকে সব জায়গায় উদ্যোগ নিতে হবে। এরই পাশাপাশি ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানো দরকার। সেটা সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য দরকার। বৌদ্ধিক স্তরে যে হামলা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কমরেডদের তলা থেকে তাকে প্রতিরোধ করা এই সময়ের বিশেষ কাজ। ব্রাঞ্চ স্তর পর্যন্ত পড়াশুনো করার কাজে, রাজনৈতিক মান বাড়ানোর কাজে আমাদের উদ্যোগ বাড়ানো দরকার। আইনজীবীদের নিয়ে আমাদের উদ্যোগ তৈরি হয়েছে। সংগঠনটি সম্মেলনের দিকে যাচ্ছে।

পার্টি কংগ্রেসের দলিল আগামী নির্বাচন বিষয়ে দিশা দিয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্টদের হারাতে চাই। কোনও মহাজোটের মধ্যে সামিল হব না, কিন্তু তাই বলে কোনও আলাপ আলোচনার মধ্যে সামিল হব না, তা নয়।

খণ্ড-25
সংখ্যা-36