৮-৯ জানুয়ারি ২০১৯ রন্ধনকর্মী সহ সমস্ত প্রকল্পকর্মীরা সাধারণ ধর্মঘটে সামিল হচ্ছেন

'মিড-ডে মিল' কেন্দ্রীয় সরকারের 'জাতীয় পুষ্টি সহায়তা প্রকল্প'-র অধীনে ১৯৯৫ সালে চালু হয়। সেই সময় রান্না করা খাবার দেওয়ার পরিবর্তে বেশির ভাগ রাজ্যে শিশুদের মাথা পিছু মাসে তিন কেজি চাল ও তিন কেজি গম দেওয়া হত। ২০০১ সালে পি ইউ সি এল-এর মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট রান্না করা খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পশ্চিমবঙ্গে মিড-ডে মিল চালু হয় ২০০৩ সালে, তাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী।

আগের কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করত। কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর লাগাতার মিড-ডে মিলের বরাদ্দ কমিয়ে চলেছে। বহু সমালোচনার পর প্রাথমিকে ২২ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৪.৩৫ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৩৩ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৬.৫১ টাকা। মাথা পিছু এই সামান্য বরাদ্দে শিশুদের পুষ্টির নামে তাদের প্রতারণা করা হচ্ছে। যেখানে এখন একটা ডিমের দামই ৫-৬ টাকা। কর্মীদের সারাদিন পরিশ্রম করিয়ে মাসে মাত্র ১৫০০ টাকা সাম্মানিক ভাতা দেওয়া হয়। আবার যেখানে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে এই কাজে মহিলারা নিযুক্ত হয়েছেন, তাদের মাসিক আয় ২৫০-৩০০ টাকা হয় মাত্র। সাম্মানিক ভাতার নামে মহিলাকর্মীরা চূড়ান্ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন এবং তাদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার চলছে।

আগে এই প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক দায়ের অনুপাত ছিল ৭৫:২৫। বর্তমানে তা ৬০:৪০ হয়েছে। এই ভাবে মোদী সরকার ক্রমশ মিড-ডে মিল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে।

৪৫ ও ৪৬ তম শ্রম সম্মেলনের সুপারিশ অনুযায়ী শ্রমিকের মর্যদা, মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষার মতো বিষয়গুলির কোনটিই কার্যকরী করা হল না। উলটে আমরা দেখলাম ৪৭ তম শ্রম সম্মেলনকে স্থগিত করে দেওয়া হল। এর প্রতিবাদে ১৭ জানুয়ারি ২০১৮- তে ৬০ লক্ষ স্কীমকর্মী দেশব্যাপী ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন।

আই সি ডি এস কর্মীদের সঙ্গে চলছে একই ধরনের বঞ্চনা। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির বসার জন্য নেই কোন ঘর ও শৌচাগার। আশাকর্মীরা ছুটিহীন, নিরাপত্তাহীন এবং নামমাত্র সাম্মানিকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তার পরও এক নজিরবিহীন ঘটনা রাজ্য সরকার ঘটাল। আশাকর্মীদের ঘোষিত বর্ধিতসাম্মানিক দেওয়ার পর তা আবার কেটে নেওয়া হল।

কেন্দ্রীয় সরকারের আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এআইসিসিটিইউ গড়ে তুলেছে স্কীমকর্মীদের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন মঞ্চ 'অল ইন্ডিয়া স্কীম ওয়ার্কার্স ফেডারেশন'। পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে মিল) ইউনিয়ন এই ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের হামলার বিরুদ্ধে এআইসিসিটিইউ সহ ১০ টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ৮-৯ জানুয়ারি ২০১৯ দেশব্যাপী যে ধর্মঘট ডেকেছে, এআইএসডব্লুএফ এই ধর্মঘটে সক্রিয় ভাবে সামিল হবে। পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে মিল) ইউনিয়ন এই ধর্মঘটকে সফল করার জন্য সার্বিক উদ্যোগ নিয়েছে।

দাবি সমুহ

১) প্রকল্পকর্মীদের কর্মচারি হিসাবে স্বীকৃতি ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে।

২) মাসে ন্যূনতম মজুরি ১৮০০০ টাকা এবং ন্যূনতম পেনশন ৬০০০ টাকা দিতে হবে।

৩) মিড-ডে মিল কর্মীদের ১২ মাসের বেতন, বোনাস, চিকিৎসা বীমা ও ১৮০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে।

৪) মিড-ডে মিল প্রকল্পকে বেসরকারিকরণ ও এনজিও-দের হাতে দেওয়া চলবে না।

৫) মিড-ডে মিল কর্মীদের রান্না ছাড়া সাফাই বা অন্য কোনো কাজে লাগানো চলবে না।

৬) শিশুদের খাদ্যের জন্য ন্যূনতম মাথা পিছু ১০ টাকা বরাদ্দ করতে হবে।

৭) অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের স্থায়ী ঘর ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) আশা কর্মীদের সাপ্তাহিক ছুটি দিতে হবে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-37