প্রতিবেদন
৮-৯ জানুয়ারী সাধারণ ধর্মঘট সফল করুন মোদীর রাজের মৃত্যু পরোয়ানা সারা ভারতে লটকে দাও!

এক প্রতিস্পর্ধী পরিমণ্ডলের উপর দাঁড়িয়ে ৮-৯ জানুয়ারী, ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলোর ডাকে সাধারণ ধর্মঘট হতে চলেছে।

গত বছর ৯-১০-১১ নভেম্বর সারা ভারত দেখেছিল ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকে দিল্লীর বুকে ঐতিহাসিক 'মহাপডাও' (মহাধর্ণা)। সংগঠিত-অসংগঠিত ক্ষেত্রের পাশাপাশি অগনিত স্কীম কর্মীরা লাল ঝাণ্ডার তুফান তুলে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর আহ্বানে ১১ নভেম্বর ঘোষণা করেছিল নিজেদের অস্তিত্ব। আর এবার, ১৬ নভেম্বর এ আই সি সি টি ইউ-র নেতৃত্বে দিল্লীতে সাফাই কর্মীদের রাজনৈতিক বিক্ষোভ, ১৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর আহ্বানে মিড-ডে মিল কর্মীদের দিল্লীর বুকে প্রতিবাদী কর্মসূচী, ১ ডিসেম্বর থেকে বিহারে এ আই সি সি টি ইউ-র ডাকে আশা কর্মীদের অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট, ২৮-২৯ নভেম্বর সারা দেশের নজর কেড়ে কৃষকদের ঐতিহাসিক সমাবেশ, ২৬ ডিসেম্বর ব্যাঙ্ক কর্মী ও অফিসারদের দেশব্যাপী ব্যাঙ্ক ধর্মঘট—এরকমই এক পৃষ্ঠভূমির ওপর দাঁড়িয়ে ৮-৯ জানুয়ারীর ধর্মঘট হতে চলেছে। বলাই বাহুল্য, ৫টি রাজ্যে বিজেপির শোচনীয় পরাজয়, তিনটে হিন্দী বলয় রাজ্যে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়া সংগ্রামের অনুকূলে বিশেষ এক রাজনৈতিক মাত্রা যুক্ত করেছে।

১২ দফা দাবির ভিত্তিতে এই ধর্মঘট আসলে মোদীর আর্থিক-শিল্পনীতির বিরুদ্ধে পাল্টা এক প্রত্যাঘাত। '৯৬ সালের সময়কাল থেকে উদার আর্থিক নীতি বিরাট বৈষম্য (আয়ের ক্ষেত্রে) ডেকে এনেছে এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ থমাস পিকেটি এবং লুকাস চ্যান্সেল তাদের গবেষণা পত্র 'ইণ্ডিয়ান ইনকাম ইনইক্যুউলিটি, ১৯২২-২০১৪—ফ্রম ব্রিটিশ রাজ টু বিলিয়নেয়র রাজ'-এ দেখিয়েছেন যে ব্রিটিশ রাজের সময় আয়ের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য ছিল, বর্তমানে তাকেও ছাপিয়ে গেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে, ১৯২২ সালে ভারতে আয়কর প্রবর্তনের পর থেকে সমাজের উচ্চতম স্তরে ১ শতাংশের আয় সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ১৯৮০-র পর থেকে এই বৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।

যাক সে কথা। বিশ্বায়ন-উদারীকরণের হাত ধরে, ভারতে শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে বিরাট কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। বহুজাতিক সংস্থা-বড় বড় কর্পোরেট ঘরানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে অত্যন্ত উচ্চ বেতনভুক শ্রমিকশ্রেণীর ব-দ্বীপের চারপাশে রয়েছে বিপুল বিশাল নগণ্য মজুরি প্রাপক, নিরাপত্তাহীন কন্ট্রাক্ট, ক্যাজুয়াল, ইনফর্মাল শ্রমিক। ৯৫ শতাংশ শেষোক্ত ওই অংশের বিপরীতে পূর্বোক্ত ৬ শতাংশ স্থায়ী শ্রমিকের রয়েছে কিছু প্রশ্নে নিশ্চয়তা যেমন, মজুরি-সামাজিক সুরক্ষা-চাকরি। অত্যন্ত মুষ্ঠিমেয় এই অংশের জন্য এখনও যেটুকু শ্রম কানুনের রক্ষাকবচ রয়েছে, মোদী সেটাও হরণ করতে চান, পুঁজি ও শোষণের অবাধ চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে। ইউনিয়নভুক্ত, দরকষাকষি করার শক্তি রাখে, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংগঠিত এই শ্রমিক শ্রেণীর ওপর শ্রম কানুনের রক্ষাকবচটি কেড়ে নেওয়া, আগামী দিনে 'স্থায়ী' চরিত্রসম্পন্ন শ্রম বর্গটিকে তুলে দেওয়া মোদীর নামিয়ে আনা শ্রম সংস্কারের মূল কথা। ইতিমধ্যেই বহুজাতিক সংস্থাগুলো বর্তমান আইনকে ফাঁকি দেওয়ার একটা রাস্তা বার করে মুষ্ঠিমেয় স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি দেদার নিয়োগ করে চলেছে ঠিকা-ট্রেনি-অ্যাপ্রেন্টিস-দৈনিক মজুর-ক্যাজুয়াল শ্রমিক। এ রাজ্যের বেশ কিছু চটকলগুলোতে নাইট শিফ‌টে কর্তৃপক্ষ 'দৈনিক মজুর' নিয়োগ করে চলেছে। থোক টাকা দিয়েই তাদের বিদায় জানানো হয়। তাদের ই এস আই, পি এফ বা অন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই। কোন বেতন কাঠামো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বহুজাতিক সংস্থার প্রায় সমস্ত অটোমোবাইল শিল্পে ইনফর্মাল শ্রমিকরা স্থায়ী শ্রমিকদের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেছে। এমনিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোতেও ক্রমেই বেড়ে চলেছে ওই ধরনের শ্রমিকদের সংখ্যা। পোশাক শিল্পে স্থায়ী শ্রমিকরাও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পায় না।

ইণ্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়মেন্ট (স্ট্যাণ্ডিং অর্ডার) সেন্ট্রাল রুলসের মোদী সরকার একতরফা একটি সংশোধনী করে 'ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট' নামক নতুন এক বর্গকে সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য ঢালাও ছাড়পত্র দিয়ে বসল। এই সংশোধনীর পর আগামীদিনে স্থায়ী শ্রমিক বলে আর কিছু থাকবে না। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত এরা নিযুক্ত হবেন। সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের চলে যেতে হবে—এজন্য কোন নোটিশ বা পেমেন্ট তারা পাবেন না (বর্তমান কানুনে যেটা বাধ্যতামূলক)। অর্থাৎ 'হায়ার অ্যাণ্ড ফায়ার' এখন পেল আইনি বৈধতা। স্থায়ী শ্রমিক ও ফিক্সড টার্মের মধ্যে বিভাজন রেখাটা অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট করে দেওয়া হল।

প্রস্তাবিত নতুন আইনে ই এস আই, পি এফ নিয়োগকর্তার 'ঐচ্ছিক' বিষয় হয়ে উঠেছে। নাম-কা-ওয়াস্তে যে কোন বীমা সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তারা এই বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা থেকে পার পেতে পারেন। 'পার্মানেন্ট এমপ্লয়মেন্ট' (স্থায়ী কাজ)-র বদলে 'রেগুলার' এমপ্লয়মেন্টের সংজ্ঞা নিয়ে আসা হচ্ছে। 'ফিক্সড টার্ম' দিয়ে যা ভরাট করা হবে।

মোদী সরকার 'ন্যূনতম মজুরি'-র আইনি বাধ্যকতা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে 'ফ্লোর ওয়েজ' প্রবর্তন করতে চায়, যা ৪৫০০-৫০০০ টাকা। এইভাবে ন্যূনতম মজুরিকে 'সর্বজনীন জাতীয় মজুরি বা 'ফ্লোর ওয়েজ'-র সিলমোহর দিয়ে বাজারে ফেরি করতে চাইছে। ইতিমধ্যে, বহু বেসরকারি সংস্থায় ৮ ঘন্টার বদলে দৈনিক শ্রম সময় ১২ ঘন্টায় পরিণত হয়েছে। নতুন সংশোধনীগুলো প্রস্তাব রেখেছে যে কন্ট্রাক্ট শ্রমিকরা 'সমকাজে সমমজুরি' দাবি করতে পারবে না, বরং তারা নির্দিষ্ট রাজ্যগুলোতে স্থিরিকৃত ন্যূনতম মজুরি পেতে পারে। ক্রমে, কন্ট্রাক্ট প্রথায় শ্রমিক নিয়োগের রেওয়াজকে পেছনে ঠেলে অ্যাপ্রেন্টিস ও ট্রেনিদের বিশাল মাত্রায় নিয়োগ করাটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে। কারণ, এদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক নয়। অ্যাপ্রেন্টিসের সংখ্যা বর্তমানে ৩ লক্ষ। সরকারের প্রস্তাব, আগামী তিন বছরে ওই সংখ্যাটা ৩০ লক্ষে নিয়ে যাওয়া হবে।

৭৫ শতাংশ শিল্প সংস্থা বর্তমান শ্রম কানুনের বাইরে চলে যাবে। এতদিন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, ১০০ বা তার বেশি সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত এমন সংস্থায় ছাঁটাই করতে হলে সংশ্লিষ্ট সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হত। এখন সেটা বাড়িয়ে ৩০০ করেছে। আবার, এই ৩০০ বা তার অধিক শ্রমিক কাজ করলেই যে আগাম অনুমতি নিতে হবে,তা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যে সমস্ত সংস্থাগুলো ৫ বছরের মধ্যে গড়ে উঠেছে এবং যার অপারেটিং ক্যাপিটাল ২৫ কোটির টাকার কম, তারা 'স্টার্ট আপ'-র সংজ্ঞা পাবে। আর সমস্ত শ্রম কানুনের বাইরে তারা থাকবে।

ট্রেড ইউনিয়নের প্রক্রিয়া খুবই জটিল করা হচ্ছে। অমনিবাস ইউনিয়নের রেজিস্ট্রশন দেওয়াই হচ্ছে না। এ রাজ্য তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আশা কর্মীদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার মমতা সরকার হরণ করেছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে ধর্মঘট করার বুনিয়াদী সাংবিধানিক অধিকার। ৪৪টি কেন্দ্রীয় আইনকে ৪টি কোডে 'সংহত' করা হচ্ছে। সেগুলো হল, মজুরি—শিল্প সম্পর্ক (খেয়াল করবেন, শিল্প বিরোধ নয়) সামাজিক সুরক্ষা এবং সুরক্ষা ও কাজের অবস্থাকে কেন্দ্র করে। নীতি আয়োগ আবার ৩ বছরের জন্য একটা অ্যাকশন প্ল্যান নামিয়েছে (২০১৭১৮ থেকে ২০১৯-২০)। সেখানে, শ্রমকানুনের ঢালাও ও সার্বিক সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে। মোদী সরকারের আসল উদ্দশ্যই হল, ফর্মাল ক্ষেত্রকে ইনফর্মাল করা, সংগঠিতকে অসংগঠিত করা। ফর্মাল সেক্টরকে ইনফর্মাল করার পেছনে যে ধারণাটা রয়েছে, তা হল ফর্মাল সেক্টরের শ্রমিকদের প্রতিযোগীতায় নামতে হবে ইনফর্মাল শ্রমিকদের সঙ্গে। 'কম উৎপাদনশীলতা ও নিম্নস্তরের মজুরি ভিত্তিক পেশা'গুলোকে ঠিকঠাক করতে সরকার আদতে উচ্চ বেতনভুক শ্রমিকদের পক্ষান্তরে ঠেলে নামাচ্ছে নিম্ন মানের মজুরিতে।

শ'য়ে শ'য়ে একর জমি অধিগ্রহণ করে 'সেজ' গঠন এবং শ্রম আইনের বাইরে সেগুলোকে নিয়ে যাওয়ার কৌশল এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে। বর্তমানে, সমগ্র পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল উপকূলভূমির হাজার হাজার জমিকে কোস্টাল এমপ্লয়মেন্ট জোন (সি ই জেড) বলে ঘোষণা করে শিল্প ও ফ্রেইট করিডর করে ফেলা হচ্ছে—পরিণামে, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক সমস্ত শ্রমকানুনের বাইরে চলে যাচ্ছেন।

একশ দিনের কাজ বা 'মনরেগা'কে ন্যূনতম মজুরির আওতা থেকে বিযুক্ত করেছে মোদীর ফ্যাসিস্ট জমানা। শহরাঞ্চলে সস্তায় অফুরন্ত শ্রমশক্তি চালান করার উদ্দেশ্যে তা করা হল, ফলে মজুরিকে অনেক নিচুতে বেঁধে রাখা যাচ্ছে।

গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতের পি এফ তহবিল সবচেয়ে বিপুল বহরের। এত বিশাল পরিমাণ তহবিলকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে কর্পোরেট ঘরানা লোলুপ দৃষ্টিতে বহুদিন যাবত ওৎ পেতে রয়েছে। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য পি এফ তহবিল এবার আর সুরক্ষিত থাকবে না। 'পেনশন ফাণ্ড রেগুলেটারি অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট অর্থারটি মারফত এবার থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করবে বেসরকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা, নিশ্চিত ফেরতলাভের বিপরীতে পেনশন ফাণ্ড এখন নিয়ন্ত্রত হবে শেয়ার বাজারের ওঠা নামার ভিত্তিতে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় 'পে' কমিশনকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অস্তাচলে। প্রস্তাব এটাই যে, এরপর থেকে বাজারই নিয়ন্ত্রণ করবে বেতন-মজুরির কাঠামোকে।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আশা, মিড-ডে মিল, আই সি ডি এস কর্মীরা মধ্যযুগীয় বঞ্চনার শিকার। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া স্তর থেকে উঠে আসা মহিলারাই এই প্রকল্পভিত্তিক কাজগুলোতে প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে ৪৫-৪৬তম জাতীয় শ্রম কমিশন এই সমস্ত কর্মীদের শ্রমিক ও সরকারি কর্মচারী হিসাবে স্বীকৃতি, 'সাম্মানিকের' বদলে ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষার সুপারিশ করলেও কেন্দ্রীয় সরকার তার আমলই দিল না। একমাত্র এ রাজ্যে মিড-ডে মিল কর্মীদের স্বনিযুক্তি গ্রুপের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। ঝাড়খণ্ডে 'জল সহিয়া' গ্রুপের মাধ্যমে এরা কাজ করেন—চরম শোষণ ও বঞ্চনাই একমাত্র তাদের প্রাপ্য। ঝাড়খণ্ডে ঘরে ঘরে শৌচালয় নির্মাণ, জলের গুণাগুণ বিচার করা প্রভৃতি কাজ তাদের দিয়ে করানো হয়। প্রতিটি শৌচালয় নির্মাণের জন্য ৭৫ টাকা আর প্রতিটি জলের পরীক্ষার জন্য ১৫ টাকা তাদের প্রাপ্য যা নিয়মিতভাবে কোনদিনই তারা পান না। নামমাত্র 'সাম্মানিকের' বিনিময়ে তাদের উদয়াস্ত কাজ করতে হয়। বর্তমানে, বেসরকারি সংস্থার হাতে তা ক্রমে ক্রমে তুলে দিয়ে প্রকল্পগুলোকে গুটিয়ে আনা হচ্ছে। সারা দেশেই এই সামাজিক স্তরটি বিরাট মাত্রায় আন্দোলনে সামিল মোদীর আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ প্রকল্পভিত্তিক কর্মীরা আত্মপ্রকাশমান এক শক্তি।

১৯২০-র শেষভাগে ভারতবর্ষে একের পর এক শ্রমিক আন্দোলনের জোয়ার দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে গিরনী কামগর ইউনিয়ন ১৯২৮-১৯২৯ সালে বম্বে কটন মিলের দীর্ঘ সাত মাস লাগাতার ধর্মঘট সংগঠিত করে। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯২৯ সালে ট্রেড ডিসপিউট আইন পাশ হয়। এই আইনের মাধ্যমে শিল্প বিরোধের ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ, স্ট্রাইক ও লকআউটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি, সালিশী প্রক্রিয়ায় বিরোধ মীমাংসা এবং শ্রম আদালতের উদ্ভব সামনে আসে। ওই আইন যখন পাশ করা হয় তখন কমিউনিস্ট নেতাদের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত 'ষড়যন্ত্র ও দেশ বিরোধিতা'র মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়। এন এম যোশীর মত মধ্যপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতাও আইনের শ্রমিক বিরোধী দিকগুলোকে তীব্রভাবে বিরোধিতা করেন। ইম্পিরিয়াল বিধানসভায় ওই আইন নিয়ে যখন তীব্র বাগবিতণ্ডা হচ্ছিল, তখন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা ছোড়েন। কমিউনস্টদের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনের ফলে যে শ্রম কানুন তৈরি করতে ব্রিটিশ রাজ বাধ্য হয়, আজ সেগুলো কেড়ে নিতে মোদী সরকার বদ্ধপরিকর।

রাষ্ট্র-সরকার নিজের হাত ক্রমেই গুটিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বেসরকারি কর্পোরেটের কাছে বেচে দেওয়ার অভিযানে নেমেছে। ব্যাঙ্কগুলোকেও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে আই এম এফ বিশ্বব্যাঙ্ক ও অন্যান্য মহল থেকে চাপ বাড়ানো হচ্ছে। মোদী সাধারণ মানুষ ও শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শ্রমজীবী মানুষও তার পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্য আজ কোমর বাঁধছে।

আসুন, ৮-৯ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘটকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে পথে নামি। প্রতিটা ঘরে ঘরে মোদীর মৃত্যু পরোয়ানা ঝোলাতে ব্যাপকতম সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তুলি।

খণ্ড-25
সংখ্যা-38