আগ্রায় দলিত মেয়েকে পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে প্রতিবাদ

দশম শ্রেণীতে পড়ত দলিত মেয়ে সঞ্জলি, আগ্রায় তাকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারল দুর্বৃত্তরা। হৃদয় বিদারক এই ঘটনা সারা উত্তরপ্রদেশে এবং দেশে প্রতিবাদের জন্ম দিল। এই পাশবিক ঘটনায় বেশ কয়েকটি গণ সংগঠন সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার ডাক দিল ২৫ ডিসেম্বর। এআইএসএ এবং এআইপিডব্লিউএ-ও ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশে প্রতিবাদ সংগঠনের আহ্বান জানাল। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে রাজ্যের নানা স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, জনসভা ও মিছিল সংগঠিত হয়। রাজ্য কমিটির কিছু সদস্য, মথুরায় পার্টির দায়িত্বশীল নাসির শাহ, সুরজ দীপ ও অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত একটি দল আগ্রায় গিয়ে সঞ্জলির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সঞ্জলির হত্যায় তাঁরা গভীর দু:খ প্রকাশ করেন এবং পরিবারের প্রতি পার্টির সংহতি জানান।

বেনারসে বেশ কিছু প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী ব্যক্তি ও সংগঠন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে রবিদাস গেট পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করেন এবং সঞ্জলির স্মৃতিতে একটি শোক সভাও হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিংসা ও খুন বন্ধে এবং নারী-বিরোধী পাশবিকতা বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান। সভার সঞ্চালক অধ্যাপক চৌথিরাম বলেন, রাজ্যে আতঙ্কের একটা পরিমণ্ডল বিরাজ করছে। কুসুম ভার্মা বলেন, বিজেপি বেটি বাঁচাও—বেটি পড়াও শ্লোগান দিলেও রাজ্যে মেয়েরা অবাধে পড়াশোনা করতে বা নিরাপদ থাকতে পারছে না। যোগী জমানায় দলিত ও উপজাতি মেয়েদের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। নারী একতার সম্পাদক অধ্যাপক স্বাতী সিং এই অভিমত প্রকাশ করলেন যে, সংঘ-বিজেপির ফ্যাসিবাদী চরিত্র সাধারণ জনগণ, বিশেষভাবে নারীদের কাছে ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

গোরখপুরেও বিশাল প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয় এবং ‘সঞ্জলির জন্য ন্যায়বিচার চাই’ দাবি শহর জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। এআইপিডব্লিউএ, আরওয়াইএ এবং জসম এখানে প্রতিবাদে অংশ নেয়। এই সমস্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদী জনসভায় তাঁদের বক্তব্যে জানান—বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারী, দলিত, সংখ্যালঘু, কৃষক এবং সমস্ত নিপীড়িত অংশ ক্রমবর্ধমানভাবে আক্রমণের মুখে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর অধীনে পুলিশ বাহিনী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার বদলে প্রায়শই হিংসার শিকার পরিবারগুলোর হেনস্থা ঘটাতেই সক্রিয় হয়েছে। রায়বেরিলি, মোরাদাবাদ, মথুরা, গাজিপুর, দেওরিয়া, লখিমপুর খেরি ও সিতাপুরেও প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।

সিপিআই(এমএল) তথ্যানুসন্ধানী দলের রিপোর্ট

সিপিআই(এমএল)-এর তথ্যানুসন্ধানী দল মালপুরা আগ্রায় সঞ্জলির গ্রাম লালৌ পরিদর্শন করে। দলের সদস্যরা সঞ্জলির দিদি বিএসসি পাঠরত অঞ্জলির সঙ্গে কথা বলেন। অঞ্জলি জানান, সঞ্জলি গান ভালোবাসত আর ভালো নর্তকীও ছিল। কারুর ওপরই তাদের সন্দেহ ছিল না। পুলিশ ওদের জ্ঞাতি ভাইয়ের ছেলে যোগেশকে ১৮ ডিসেম্বর তুলে নিয়ে যায়। ওর ওপর নির্মম অত্যাচার চালানোর পর ১৯ ডিসেম্বর মধ্য রাতে ওকে ছাড়ে। এরপর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে ও বিষ খায় এবং মারা যায়। পুলিশ যোগেশের মামাতো ভাইকেও তুলে নিয়ে যায় এবং যোগেশের ওপর দোষ চাপানোর জন্য তাকে চাপ দেয়। তথ্যানুসন্ধানী দলের সদস্যরা সঞ্জলির কাকা সৌদন সিং এবং গ্রামের অন্যান্য লোকজনের সঙ্গেও (যাদের মধ্যে ছিলেন কল্যাণ সিং ও সোরেন সিং) কথা বলেন। তাঁরা জানান, পুলিশ সঞ্জলির জন্য ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের ওপরই দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃত অপরাধীদের ধরার পরিবর্তে পুলিশ ওদের আড়াল করছে এবং এই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-3