জমির লড়াই পশ্চিম চম্পারণে

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বিহারের নীতীশকুমার সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে জমি পুনর্বণ্টনের প্রশ্নে বিহার বিধানসভার সপ্তাহব্যাপী অধিবেশন ডাকা উচিত। সরকার তার বদলে ‘ভূমি রাজস্ব ও ভূমি সংস্কারে’র নামে একটা সাদামাটা অধিবেশন করে। আর কোনো উদ্দেশ্যে নয়, বিষয়টা যতটা পারা যায় ধামাচাপা দিয়ে চলতে এবং জমি মাফিয়া, দুর্বৃত্ত ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলিকে বিভিন্নভাবে সুরক্ষা দিতে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এমএল) গত ৯ জুলাই পশ্চিম চম্পারণের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উপরোক্ত দাবিতে প্রতিবাদ সংগঠিত করে এবং বিহার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠায়। বিহারের এই অংশে গরিব মানুষেরা প্রায় তিন দশকের বেশি তাদের দখলে থাকা জমিজমা থেকে এখন উচ্ছেদের হুমকির সম্মুখীন। এই ধরনের জমিগুলির মধ্যে রয়েছে যেমন ঊর্দ্ধসীমার নিচে থাকা জমি, বেনামী জমি, সরকার বণ্টিত জমি। জমি মাফিয়ারা জেলা প্রশাসন, বিচারালয় ও সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে গরিব চাষি ও ভূমিহীনদের তাদের বাস্তু ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।

বিহার সরকার যখন ৯ জুলাই বিধানসভার এক সাধারণ সভা ডেকে জমির প্রশ্নে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার দাবিকে লঘু করে দিতে চেয়েছে, তখন গরিব চাষি ও সাধারণ গ্রামবাসীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের জমির অধিকার রক্ষায় জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ফেটে পড়ে হাজারো সংখ্যায়, ভূমি অধিকার যাত্রায় সামিল হয় সরকারকে তাদের দাবি শুনতে বাধ্য করতে। বিহারে ল্যান্ড কমিশনের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ১ লক্ষ ৩৭ হাজার একর জমি কুক্ষিগত রয়েছে জমি মাফিয়া ও সামন্ত শক্তিগুলির বেআইনি কব্জায়। তাছাড়াও এমন অনেক সামন্ত তালুক রয়েছে যেখানে হাজার হাজার একর জমির বেআইনি ভোগদখল চলে আসছে। যেমন হরিনগর চিনি কল বেআইনি দখলে রেখেছে ৫০০০ একর জমি। বিহার সরকারের এই প্রশ্নে অবস্থান বরাবরই জনবিরোধী ও মাফিয়ামুখী। এর বহু নজির রয়েছে। যেমন ইতিপূর্বে রামনগরের কায়েমী স্বার্থের শাসকদের বিরুদ্ধে পাটনা হাইকোর্ট রায় দিয়ে সরকারকে আদেশ করেছিল ওখানে গরিব ভূমিহীনদের হকের জমিগুলি বেআইনি দখলমুক্ত করে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসন দীর্ঘ টালবাহানা চালিয়ে পার করে দেয় ছ’মাসের বেশি। সেই একই প্রশাসন অথচ গরিবরা যখন তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হয় তখন চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকে না। তার জঘন্য নজির হল যেমন, জেলার মৈনাতাঁদ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত চুইনতহা নামে একটি গ্রামে ব্লক প্রশাসন ও মাফিয়ারা যোগসাজশ করে গরিব পরিবারগুলিকে তাদের হকের জমি থেকে উচ্ছেদ করে। ব্লক আধিকারিকরা জমি মাফিয়াদের ভূয়ো দলিল জোগার করে দিয়ে, জমির বেআইনি নথিভুক্তকরণে, আদালতের আদেশনামাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে, ভূমিহীন গরিবদেরকে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে যথেচ্ছ রসদ জুগিয়েছে। প্রশাসন বাঘা ব্লকে পারস মাহাতো নামে গরিব কৃষক ও আদিবাসীদের এক জনপ্রিয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এই এলাকায় বন সংরক্ষণ প্রকল্পের নামে অরণ্য অধিকার আইন যাচ্ছেতাই ভাবে প্রয়োগ হয়ে আসছে, আদিবাসীরা তাদের চিরাচরিত ভূমি থেকে হাজারে হাজারে উচ্ছেদ হচ্ছেন। এছাড়া প্রশাসন বাল্মীকিনগরের শিবপুরী মহল্লায় অধিবাসীদের উচ্ছেদের নোটিশ ধরাচ্ছে কোনোরকম পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে। সরকার কিন্তু সহজেই এদের বাস্তু জমির বিকল্প বন্দোবস্ত করতে পারে সদিচ্ছা থাকলে। তেমনি বেতিয়ায় যে জমিতে সহস্রাধিক বসবাসরত গরিব পরিবারগুলি রয়েছে, সেগুলোর আগের মালিকানা স্বত্ব ছিল অন্য, তারপরে বর্তমান অধিবাসী পরিবারগুলি রয়েছে কয়েক প্রজন্ম ধরে, তবু তাদের জমির স্বত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এর ফলে তাদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

সিপিআই(এমএল) ভূমি অধিকার যাত্রার মধ্য দিয়ে দাবি তুলেছে, গরিব ও চিরাচরিত অধিবাসীদের সমূহ জমির অধিকারের প্রশ্ন ফয়সালা করতে চম্পারণ ল্যান্ড ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-22