৩১ আগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবসের দাবি : রেশন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে খাদ্যের সুরক্ষা ও অধিকার হরণের চক্রান্ত বন্ধ কর

মোদী সরকার নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলো! নির্বাচনের আগে বাজেটে তথাকথিত “খাদ্য সুরক্ষা”র ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল মোদী সরকার। এখন আর্থিক বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে ভর্তুকির সম্পূর্ণ টাকা আদৌ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কম্প্রট্রোলার এ্যান্ড অডিটার জেনারেলের রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯ এর বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকিতে বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ ৫১ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার থেকে বেশি! কিন্তু ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে কেন্দ্রের দেয় ৭০ হাজার কোটি টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। এভাবে প্রতি বছরই মোদী সরকার প্রকৃত বরাদ্দ কমিয়ে চলেছে। অপর দিকে “পস” কার্ড চালু করে সরকার নগদে ভর্তুকি প্রথা চালু করতে চাইছে। সরকারী নির্দেশিকা হল ক্যাশ কার্ডের মতো মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে রেশনে খাদ্য দ্রব্য নিতে হবে। ইতিমধ্যে ডিলারদের কাছে মেশিন সরবরাহের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর ’১৯-এর মধ্যে নাকি এ রাজ্যের কিছু জেলায় চালু হয়ে যাবে। কিন্তু এর ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা রেশন দোকানগুলিতে যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিভ্রাটে যন্ত্র বিকল হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে গরিব মানুষকে রেশন দোকান থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হবে। অন্য দিকে তাদের বলা হবে, বাজার দরে খাদ্য দ্রব্য কিনে নিতে হবে, ভর্তুকির টাকা তাদের এ্যাকাউন্টে জমা হবে বছরের শেষে। প্রশ্ন হল, বাজার দরে মালপত্র কেনার টাকা তারা পাবে কোথায়? সারা বছর কাজ কোথায়? ন্যায্য মজুরি কোথায়? ফলে অধিকাংশ গরিব মানুষ রেশন তুলতেই পারবে না। এইভাবে রেশন ব্যবস্থা থেকে গরিব মানুষকে ক্রমশ ছিটকে দেওয়া হবে। ধাপে ধাপে রান্নার গ্যাসের মতো খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ানো হবে। খাদ্যপণ্যের বাজার একচেটিয়াভাবে দখলের জন্য কর্পোরেটদের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এই ভাবে খাদ্য সুরক্ষা আইনকে জলাঞ্জলি দেওয়ার পথে মোদী সরকার এগিয়ে চলেছে। এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার নগদে ভর্তুকি ব্যবস্থা বা ‘পস’ মেশিন চালুর কোনো নীতিগত বিরোধীতা করেনি। তারা রেশন দোকানের প্রস্তাবিত মেশিনে আঙ্গুলের টিপছাপ মেলানো বা আধার কার্ড সংযোগের ক্ষেত্রে মৌখিক বিরোধীতা করে মানুষের চোখে ধুলো দিতে চাইছে।

বর্তমানে চালু রেশন ব্যবস্থায় “খাদ্য সুরক্ষা আইন” এর নামে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের গরিবদের ধোঁকা দিচ্ছে। মোট পাঁচ রকমের কার্ড বর্তমানে চালু আছে। তিনটি কেন্দ্রের, দুটি রাজ্যের। কেন্দ্রীয় সরকার অন্ত্যোদয় প্রকল্পে ৩৫ কেজি খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে খুবই যৎসামান্য মানুষকে। যেমন এ রাজ্যে তার সংখ্যা মাত্র ৫৪ লক্ষ! রাজ্যের ১০ কোটি জনসংখ্যায় এঁদের শতাংশ কতটা তা সহজেই হিসাব করা যায়। অথচ এই সেদিন মেদিনীপুরের গ্রাম বা জলপাইগুড়ির চা বাগান থেকে অনাহার মৃত্যুর খবর উঠে এলো কেন? পিএইচএইচ (অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার), এসপিএইচএইচ (বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার) এই দুই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের ৫ কোটি ৪৭ লক্ষ মানুষ অন্তর্ভূক্ত। এদের জন্য বরাদ্দ ২ টাকার চাল গমের নানান “গল্প” বা “ব্যাখ্যা” শোনা যায়। কিন্তু ২ টাকা কেজি দরে এরা খাদ্যদ্রব্য পায় কতটা? মাসে ৫ কেজি! তাতে ক’বেলা খাবার জোটে? বাস্তবে অনাহার-অর্ধাহারের কারণটা এখানেই রয়েছে। কেবল চাল গম দিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ন্যূনতম পুষ্টি হতে পারে? অন্য অনেক খাদ্যবস্তুর কথা না হয় বাদ দেওয়া যায়, কেন ডাল-তেল সুলভে সরবরাহ করা হবে না? তাহলে খাদ্য সুরক্ষার ঢাক পেটানো হচ্ছে কেন? এদিকে এ রাজ্যের তৃণমৃল সরকার “খাদ্যসাথী” প্রকল্পের ঢাক পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাদ যাওয়া কতজন মানুষকে ঐ সুবিধা দেয়? রাজ্য খাদ্য যোজনা ১নং প্রকল্পে চিনি বাদ দিয়ে ঐ সুযোগ পায় ১ কোটি ৬২ লক্ষ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেখা যাবে রাজ্যের ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি মানুষ কেন্দ্র-রাজ্যের স্বল্পমূল্যের রেশন ব্যবস্থার বাইরে থেকে গেছে। রাজ্য খাদ্য যোজনা ২ নং প্রকল্পে যে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে সেটা বাস্তবে খুবই অকার্যকর! অত্যন্ত নিম্ন মানের চাল গম ১৩ টাকা, ৯ টাকায় সংগ্রহ করতে মানুষের বিশেষ কোনো আগ্রহই দেখা যায় না, এ প্রকল্পে মালপত্র প্রায়শ পাওয়াও যায় না। ২০০৭ সালে রেশন বিদ্রোহের পটভূমি ছিল সরকারী মদতে সীমাহীন দুর্নীতি। যার কোনো পরিবর্তন আজও হয়নি। রেশন দুর্নীতি বিষয়ে কোনো গণতদারকি ব্যবস্থা আদৌ গড়ে তোলা হয়নি। সব মিলিয়ে যৎসামান্য খাদ্য সরবরাহের মধ্য দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার মানুষকে বঞ্চনা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই দাবি উঠেছে – সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা চালু করো। মাসে ৫০ কেজি খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ কর। আসুন, আমরা খাদ্য আন্দোলনের ঐতিহ্যকে আজকের দিনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

খণ্ড-26
সংখ্যা-26