প্রতিবেদন
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে

ভারতের প্রতিটি কম্পিউটারে নজরদারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা আর তদন্ত এজেন্সিগুলিকে -
ভারত সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের প্রতিটি কম্পিউটারে নজরদারি চালানোর ক্ষমতা দিয়েছে দশটি গোয়েন্দা ও তদন্ত এজেন্সিকে।
গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে কোনও কম্পিউটারে সংরক্ষিত বা কম্পিউটার থেকে আদান প্রদান করা যে কোনও তথ্যের ওপরে নজর রাখতে পারবে ওই দশটি এজেন্সি।

যে দশটি এজেন্সিকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা আর এ ডব্লিউ (র'), ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, সিবিআই, সন্ত্রাসদমন এজেন্সি এনআইএ, নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস, রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স এবং জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের জন্য ডিরেক্টরেট অফ সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স।

কম্পিউটারে রাখা সব তথ্য, বা সেটি থেকে আদান-প্রদান করা তথ্যগুলির ওপরে যেমন নজর রাখতে পারবে এই এজেন্সিগুলি, তেমনই ইন্টারসেপ্ট করা অর্থাৎ মাঝপথেই আটকানো এবং ডিক্রিপ্ট করা বা গোপন তথ্য উদ্ধার করারও ক্ষমতাও তাদের দেওয়া হয়েছে।
বলা হচ্ছে যে তথ্য প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারা অনুযায়ীই এজেন্সিগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হল।

তবে এই প্রজ্ঞাপন জারির পরেই বিতর্ক তৈরী হয়েছে যে তাহলে কি দেশের প্রতিটি কম্পিউটারের ওপরে সর্বক্ষণ নজর রাখতে চাইছে সরকার?
কংগ্রেস, সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে এই নিয়ম জারি করে দেশের সব মানুষের ওপরই নজর রাখতে চাইছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ীই তো অনুমতি ক্রমে কম্পিউটারে আদান প্রদান হওয়া তথ্যের ওপরে নজর রাখা বা কম্পিউটার থেকে কোনও তথ্য উদ্ধার করার ব্যবস্থা আছে।

নতুন করে কেন নিয়ম জারি করতে হল?
নতুন করে কেন এই নিয়ম করতে হল সেটা খুব স্পষ্ট নয় বলছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসেকিউটর বিভাস চ্যাটার্জী।
"যে আইন আমাদের রয়েছে, তাই দিয়ে নিয়মিতই তদন্তের প্রয়োজনে কম্পিউটারে রাখা তথ্য বা আদান প্রদান হওয়া তথ্য উদ্ধার করা হয়ে থাকে। সেগুলো আদালতে প্রমাণ হিসাবে পেশও করা হয়। তাহলে নতুন করে কেন এই নিয়ম করতে হল সেটা খুব স্পষ্ট নয়," বলছিলেন মি: চ্যাটার্জী।

তবে তার বক্তব্য মূল যে তথ্য প্রযুক্তি আইন কার্যকর রয়েছে ২০০০ সাল থেকে, সেই আইনে যেসব বিধান রয়েছে, এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে এধরনের নজরদারির ওপরে, সেগুলো আইনত ভাঙ্গা যাবে না, যতই নতুন নিয়ম করা হোক না কেন।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের একটি বেঞ্চ ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। কম্পিউটারের ওপরে নজরদারির এই নিয়ম কি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করতে পারে?

মি. চ্যাটার্জী বলছিলেন, "আইন অনুযায়ী নজরদারির যা ব্যবস্থা রয়েছে, তার বাইরে এজেন্সিগুলি যেতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু যে ক্ষমতা তাদের দেওয়া হল, তা যে অপব্যবহার করা হবে না, সেটা কি বলা যায়? ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা তাই থাকছেই।"
এই নিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।

পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কর্মী সুজাত ভদ্র জানাচ্ছিলেন, "এটা কি ব্যনানা রিপাবলিক হতে চলেছে? কেউ কোনও কথা বলতে পারবে না, কেউ কোনও তথ্য আদান প্রদান করতে গেলেই এই এজেন্সিগুলির কেউ বলতে পারে সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে—তাই ভয়ে সবাইকে চুপ করে থাকতে হবে! ভয়-ভীতির বাতাবরণ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে বলে মনে হচ্ছে ভারতে।"
সরকারের কয়েকটি সূত্র উদ্ধৃত করে এনডিটিভি বলছে, ''দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আগে শুধুমাত্র আদান প্রদান হওয়া তথ্যের ওপরেই নজর রাখা যেত, কিন্তু এখন এজেন্সিগুলি কম্পিউটারে তৈরি করা অথবা স্টোর করে রাখা তথ্যের দিকেও নজর দিতে পারবে, প্রয়োজনে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।''

(অমিতাভ ভট্টশালী বিবিসি, কলকাতা ২১ ডিসেম্বর ২০১৮)

খণ্ড-25
সংখ্যা-39