খবরা-খবর
গ্রামবাংলায় সর্বাত্মক ধর্মঘট

কৃষক বিরোধী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ৮ জানুয়ারী গ্রামীণ ভারত বনধ এই রাজ্যে তথা গ্রাম বাংলায় বুকে সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে। গ্রামের মানুষ কেউই এদিন শহরমুখী হননি। ফলে সমস্ত জেলা শহর বা গঞ্জগুলি ছিলো শুনশান। বহু জায়গায় গ্রাম্য হাটগুলিও বসেনি। গ্রামীণ মজুর বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে যে শ্রমজীবীরা কাজ করেন তারাও কর্মবিরতি পালন করেছেন। কেন্দ্রের মোদী সরকার যে চরম কৃষি সংকটের বোঝা মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে বনধের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ জনগণ তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। বর্তমান সময়কালে দেখা যাচ্ছে একদিকে বাজারে জিনিসের দাম অগ্নিমূল্য, অপরদিকে কৃষকরা কিন্তু তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বিরাটভাবে বঞ্চিত। যেমন, চাষিরা মাঠে আলুর দাম পেয়েছে কেজিতে ৫-৬ টাকা,আজ বাজারে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। চাষিরা ৮-৯ টাকায় পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তার দাম এখন ১০০-১৫০ টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন কম বা বেশি হয়ে যাওয়া কিংবা চাহিদা যোগানের কারণে দামের ওঠা নামার যুক্তিতে চাষিরা আজ আর ভুলতে রাজি নয়।

pbs

 

Bankura

 

কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার যে ফড়ে দালাল ব্যাবসায়ী তথা পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করে চলেছে, চাষির রক্তজল করা শ্রমে তৈরি কৃষিপণ্যের ফাটকা বানিজ্যের মুনাফা পুঁজিপতিদের পকেটে ঢুকছে এটা গ্রামীণ জনগণের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। অথচ কেন্দ্রীয় নীতির কারণে সার, বীজ, ডিজেল তথা কৃষি উৎপাদনের খরচ বিপুল পরিমাণে বেড়ে চলেছে। আগেকার যে কোনো সময়ের তুলনায় গ্রামীণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ব্যাপক হারে কমে গেছে। সমগ্র গ্রামীণ অর্থনীতি আজ বেনজির সংকটে। কিন্তু বিপুল লোকসান সত্বেও বিকল্প না থাকায় গ্রামীণ জনগণ চাষাবাদ আঁকড়ে ধরে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় মোদী সরকারের “কৃষক সম্মান প্রকল্প”র গালভরা কথাবার্তা চাষিদের কাছে চরম অপমান হিসাবেই প্রতিপন্ন হয়েছে। অপরদিকে এনআরসি-নাগরিক আইন সংশোধন গ্রামীণ গরিবদের মধ্যে সীমাহীন আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। এসব কিছুর ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ বনধের আহ্বানে গ্রামের মানুষেরা ব্যাপকভাবেই সাড়া দিয়েছেন। গ্রামীণ এলাকার সংলগ্ন গঞ্জগুলিতে বা জেলা সদরে বনধে্র প্রভাব ছিলো সর্বাত্মক। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবরে দেখা যাচ্ছে কৃষকরা বনধ সফল করতে বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে নানাবিধ কর্মসূচীতে সামিল হয়েছেন।

Bardha

 

বর্ধমান জেলার কুসুমগ্রামে বনধ বিরোধীতায় তৃণমূলের প্রবল সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে এক দৃপ্ত মিছিল গোটা গঞ্জে পরিক্রমা করে যানচলাচল স্তব্ধ করে দেয়। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম নেতা আনসারুল আমান মন্ডল। কালনার বৈদ্যপুরে দীর্ঘ সময় রাস্তা অবরোধ হয়। এআইকেএম নেতা অন্নদা প্রসাদ ভট্টাচার্য, সলিল দত্ত প্রমুখেরা ছিলেন বর্ধমান শহরে, সেখানে রাস্তা অবরোধ পিকেটিং এর ফলে জেলার প্রাণকেন্দ্র সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়।

dhubu

 

নদীয়া জেলার ধুবুলিয়ায়  কৃষকদের অংশগ্রহণে বেশ কয়েক দফায় জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। ব্লক দপ্তরে পিকেটিং হয়। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম নেতা সুবিমল সেনগুপ্ত, ফরোজ সেখ, কলম বিশ্বাস প্রমূখ। বেথুয়া ডহরী, দেবগ্রাম ও পলাশীতে মিছিল এবং পথ অবরোধ সংগঠিত হয়। এর সামনের সারিতে ছিলেন এআইকেএম নেতা কৃষ্ণ প্রামাণিক, আলতাফ হোসেন, আয়ারলার কাজল দত্তগুপ্ত, ইয়াদ আলি প্রমূখ। তাহেরপুরে রেল অবরোধ ও এলাকা জুড়ে মিছিল সংগঠিত হয়, নেতৃত্ব দেন জীবন কবিরাজ।

krish

 

কৃষ্ণনগর শহরে দফায় দফায় পথ অবরোধ ও দীর্ঘ মিছিল জেলা সদরকে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দেয়, নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, ট্রেড ইউনিয়ন জেলা নেতা অমল তরফদার, নিহার ব্যানার্জী প্রমুখ। নবদ্বীপে মিছিল শহর পরিক্রমা করে,এতে ছিলেন জেলা শ্রমিক নেতা পরিক্ষিত পাল। চাকদায় অনুরূপ কর্মসূচীতে ছিলেন লিটন কর্মকার, মল্লার মৈত্র প্রমুখ।

bainchi

 

হুগলীর বৈচীতে কয়েক দফায় রেল অবরোধ-জিটি রোড অবরোধ ও মিছিলে গ্রামের কৃষক ও গ্রামীণ মেহনতি মানুষেরা অংশ নেয়। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম রাজ্য নেতা মুকুল কুমার। মহিপালপুরেও অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে মিছিল ও পথ অবরোধ সংগঠিত হয়। বনধ ব্যর্থ করতে তৃণমূলীরা পথে নামলে সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তক্ষনাৎ প্রতিরোধের মুখে ওরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এখানে কৃষকদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম নেতা তসলিম আলি, জগদীশ রাজভর।

মালদা জেলার কালিয়াচকে জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে যায়, বনধ সফল করতে বড় সংখ্যায় মানুষ পথে নামে, দীর্ঘ সময় ধরে মিছিল হয়। নেতৃত্বে ছিলেন ইব্রাহিম সেখ, লুৎফর রহমান। পার্শ্ববর্তী এলাকা সুজাপুরে পুলিশ বিনা প্ররোচনায় বনধ সমর্থকদের উপর বেধরক লাঠি চালায়। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। “পোশাক দেখে মারো” এই জায়গা থেকেই তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশী বাহিনী বনধকারীদের বেপরোয়াভাবে মারধোর করে। জনগণ পাল্টা প্রতিরোধ করে। অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বনধের নেতৃত্বে থাকা ইব্রাহিম সেখ রাতে ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয় মানুষ এর পেছনে শাসক দলের চক্রান্তের কথা বলছেন। তৃণমূলের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে সেখানে ব্যাপক মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন।

s24

 

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাখরাহাটে এআইকেএমের উদ্যোগে ভোর থেকেই রাস্তা অবরোধ শুরু হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় অবরোধ হয়। উস্থিতেও অনুরুপ কর্মসূচি সংগঠিত হয়। বাস গ্যারেজে পিকেটিং করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই দুই এলাকাতেই  দোকানপাট যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। নেতৃত্বে ছিলেন এআইকেএম নেতা দিলীপ পাল, আয়ারলার নবকুমার বিশ্বাস।

naxal

 

উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার রাঙ্গাপানিতে কিষাণ মহাসভার পক্ষ থেকে মিছিল, অবরোধ ও পিকেটিং করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন পবিত্র সিং, নেমু সিং প্রমূখ। জলপাইগুড়ি জেলার সদরে মিছিল পিকেটিং এর সামনের সারিতে ছিলেন এআইকেএম নেতা ভাস্কর দত্ত, সেখানে সর্বাত্মক বনধ হয়। ময়নাগুড়ি গঞ্জে অবরোধ ও মিছিলের ফলে দোকানপাট হাট বাজার সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। এখানে নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলার শ্যামল ভৌমিক।

Jalpai

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-2