প্রয়াত হলেন নকশালবাড়ির কমরেড মুজিবর রহমান

২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যেয় নকশালবাড়িতে নিজের বাসভবনে প্রয়াত হয়েছেন কৃষক অভ্যূত্থানের অন্যতম সংগঠক, নেতা কমঃ মুজিবর রহমান। স্বজনদের হিসেবে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর।

ছাত্রাবস্থায় ১৯৪০ সালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহন করে তাঁর জন্মশহর ঢাকা জেলে বন্দী থাকেন। এরপর দেশভাগের আগে চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধে তিনি শিলিগুড়িতে চলে এসে গভর্ণমেন্ট শ’ মিলে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত থাকেন। এখানে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকা কমরেড কেশব সরকার, অনিল সাহাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ইউনিয়নের কাজের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে ওঠেন। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র তাঁর এই পর্যায়ে অক্ষুণ্ণ ছিল। এই সূত্রে তিনি ৪০-এর দশকের সূচনায় দার্জিলিং জেলায় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠার পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন। নবগঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পেয়ে তিনি চাকরী ছেড়ে মাটিগাড়া, নিশ্চিন্তপুর ইত্যাদি চা বাগানে শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত হন। ১৯৫৫ সালে পার্টির নির্দেশে তিনি নকশালবাড়ির মণিরাম এলাকায় কৃষক সভার অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন এবং কর্মচাঞ্চল্য, আলাপী স্বভাব ও বিশ্লেষনী ক্ষমতার দরুন অচিরেই কৃষক সমাজে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯৬৭ সালে ভাগচাষি বিগুল কিষানের উপর অত্যাচারী জোতদার বুদ্ধিমান তির্কীর লেঠেল বাহিনীর নির্মম হামলার বিরুদ্ধে কমরেড মুজিবরের নেতৃত্বে কৃষকেরা বুদ্ধিমানের সহোদর কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা ঈশ্বর তির্কীর বন্দুককে উপেক্ষা করে তির্কীদের বাড়িতে ঘেরাও আন্দোলন চালিয়ে যান। আবার, ২৪ মে ঝড়ুজোতে পুলিশের কুখ্যাত এস আই সোনাম ওয়াঙ্গিল কৃষক প্রতিরোধে মারা গেলে, পরবর্তী পুলিশি তান্ডবের বিরুদ্ধে  সাহসের সঙ্গে তিনি মণিরামে প্রতিরোধ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।

কমরেড মুজিবর রহমান আমৃত্যু বিপ্লবের সম্ভাবনায় আস্থা রেখেছেন। দল ছাপিয়ে তিনি সমস্ত কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের আপনজন বলে মনে করতেন। আগামী ১০ জানুয়ারী নকশালবাড়িতে তাঁর স্মরণে সভা আয়োজিত হবে। কমরেড মুজিবরদা লাল সেলাম।

খণ্ড-27
সংখ্যা-1