উত্তরপ্রদেশে মাদ্রাসা হস্টেলে পুলিশের কার্যকলাপে স্তম্ভিত সারা দেশ

সুযোগ সুবিধাহীন গরিব অনাথ ছাত্রদের থাকার জন্য ‘অঞ্জুমান তারাকি-এ-তালিম সাদাত বাহরা’। উত্তরপ্রদেশের মুজফরনগরের এই মাদ্রাসা এতিমখানার ৬২ বছর বয়স্ক শিক্ষক মৌলানা আসাদ রেজা হুসাইনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন একসময়। ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নামাজের পর বিশ্রামরত বৃদ্ধ মৌলানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মারতে মারতে একশজন অনাথ ছাত্রসহ তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এই ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই নাবালক। ২৪ ঘন্টা আটক রাখার পরও মৌলানা আসাদকে আদালতে হাজির করা হয়নি। সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে চাপ আসার পর ছাড়া পান, কিন্তু হাত পা ভাঙা অবস্থায়। পুলিশ বলছে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা ওই হস্টেলে লুকিয়ে ছিল বলেই পুলিশ এদিন সন্ধ্যায় হস্টেলে ঢুকেছিল। “কিন্তু যেভাবে পুলিশ ঢুকে তাণ্ডব চালাল তাতে তো মনে হয়না যে তদন্ত করতে পুলিশ হস্টেলে ঢুকেছিল। শত শত ছাত্রকে পেটানো হয়, যাকে সামনে পায় তাকেই, সবকিছু ভেঙে তছনছ করা হয়”, বলেন মুজফরনগরের পরিচিত কবি খুরশিদ হায়দার। “রবিবার রাতে এক পুলিশ আমাদের ফোন করে জানায় যে, মৌলানাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পুলিশ আমাদের বলে মৌলানার জন্য পোশাক নিয়ে যেতে। শুনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই। জামা কাপড় কেন দরকার হবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমরা”, দ্য টেলিগ্রাফের খবরে মৌলানার এক আত্মিয়কে উদ্ধৃত করে একথা লেখা হয়েছে। মৌলানা রেজা হুসাইনি এতোটাই মর্মাহত যে রাষ্ট্রপতির পদক তিনি রাষ্ট্রপতিকেই ফিরিয়ে দিতে চাইছেন। ছাত্রদের নিপীড়ন থেকে বাঁচাতে না পারার দুঃখ, নিজের মানসম্মান হারাবার দুঃখ তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

দুদিনের মাঝে আরও সত্য প্রকাশ হতে থাকে। শ’খানেক ছোটো ছোট ছাত্রকেও তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তাদের তিনদিন পর ছাড়া হয়। দেখা যায় বেশীরভাগই ঘায়েল, রক্তাক্ত, কারও কারও হাঁটু ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এবং লজ্জার কথা হল কয়েকজন বাচ্চার পায়ুদ্বার থেকে রক্ত ঝরছে। দ্য টেলিগ্রাফ সহ বেশ কিছু খবরের কাগজে ঘটনাটি সামনে আসে। পুলিশী অত্যাচারের এ কেমন নিদর্শন দেখালো বিজেপি? কেমনধারা অত্যাচার করলে “রেক্টাল ব্লিডিং” হয়? এ কি ধর্ষণ নয়? নির্ভয়ার কথা স্মরণ করায় পুলিশের এই কাজ। কোন দেশ পুলিশের এরকম কার্যকলাপ সহ্য করতে পারে?

শিশুকল্যাণের এনজিও চালানো নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থি, অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ইউনিসেফ ও নোবেল কমিটিকে ট্যাগ করে একটি টুইটে প্রশ্ন করেছেন কবিতা কৃষ্ণান, “কিছুদিন আগেও তো ভারত ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রোধে ফেটে পড়ছিল। উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা ছাত্ররা পুলিশের অত্যাচারে পায়ুর রক্তক্ষরণে ভুগছে। পায়ুর রক্তক্ষরণ কেন হচ্ছে বলে মনে করেন আপনারা? এরপরেও যদি চুপ করে থাকেন তাহলে শিশুদের হয়ে কোনও কথা বলার আর কোনও অধিকার কি আপনাদের থাকে?” আদালত পোকসো আইনে স্বতপ্রণোদিত মামলা করছেনা কেন? কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি আমাদের দেশকে? জনতার দরবারে এই শিশুধর্ষক দলটির শাস্তি কী হবে?

খণ্ড-27
সংখ্যা-2