খবরা-খবর
কৃষি ও কৃষক বিরোধী কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে

নদীয়ায় বিক্ষোভ সভা

সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারী কৃষি ও কৃষক বিরোধী কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলো। ঐ দিন নদীয়ার ধুবুলিয়া ও বেথুয়াডহরীতে এআইকেএম সহ বিভিন্ন বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি যৌথ ভাবে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত করে। একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়। সভা থেকে যে দাবিগুলি তুলে ধরা হয় তা হলোঃ

  • এনআরসি, এনপিআর, নয়া নাগরিক আইনের মধ্য দিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া চলবে না, দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করা এবং কৃষক ঐক্যে ফাটল ধরানোর চক্রান্ত ব্যর্থ করুন।
  • ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুন দাম ও ঋণমুক্তি চাই।
  • ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এনপিআর চাই না। চাষির ফসল কেনা, ১০০ দিনের কাজ, সার-সেচ-বিদ্যুত-রেশন – প্রভৃতির জন্য অর্থবরাদ্দ বাড়াও।
nadia

 

বিক্ষোভ সভায় কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছর বাজেটের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে নিয়ে চলেছে সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে। কৃষি ও কৃষক সমাজ আজ যখন সীমাহীন সংকটে, ফসলের ন্যয্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত, তখন কৃষি সংকটকে অজুহাত বানিয়ে সরকার কৃষিকে তুলে দিচ্ছে কর্পোরেট তথা দেশী বিদেশী পুঁজিপতিদের হাতে। চুক্তিচাষের নামে পুঁজিপতিদের অবাধে কৃষিজমি গ্রাস করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ওরাই কৃষিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করবে। জল জঙ্গল জমি থেকে লক্ষ লক্ষ আদিবাসীদের উচ্ছেদের অভিযান শুরু হয়েছে। কৃষকদের এমনই দুরবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা বিপুল লোকসানে জর্জরিত হয়ে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। অথচ চাষিরা মাঠে ফসলের যে দাম পায়,বাজারে সেই ফসলই বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ গুণ বেশি দামে। চাষির রক্ত ঘামে তৈরি ফসল থেকে বিপুল মুনাফা লূঠে নিচ্ছে ফড়ে মহাজন পুঁজিপতিরা।

গ্রামীণ বেকারত্ব ৪৫ বছরে রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। গ্রামীণ গরিবদের কাজ ও মজুরি বাড়িয়ে তাঁদের জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা বাড়ানো যেতো। এর ফলে অর্থনীতি-ব্যবসা বানিজ্যের উন্নতি ঘটতো। কিন্তু সরকার চলেছে উল্টোপথে। বাজেটে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ পুজিপতিদের প্রায় ১৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব, কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। কৃষক ও গ্রামীণ গরিবদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে ঋণফাঁদে, আত্মহত্যা-অনাহার-অর্ধাহার — এক ভয়াবহ দুর্দিনের মধ্যে। এবারের বাজেটে খাদ্য, সার, সেচ প্রকল্প সহ সমগ্র গ্রামোন্নয়নে সরকারী অর্থ বরাদ্দ ৭৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার যেন কৃষক ও গ্রামীণ গরিবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। ধান-পাট কেনার সরকারী সংস্থা এফসিআই, জেসিআই-কে দেওয়া টাকার পরিমান ব্যাপক ভাবে কমিয়ে তাদের পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। খরচের দেড়গুণ দাম তো সরকার দিলই না, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা রেশন ব্যবস্থা সীমিত ভাবে যতটুকু রয়েছে তাকে প্রায় তুলে দেওয়ার পথে সরকার এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রের “কৃষক সন্মান” প্রকল্প বাস্তবে হয়ে উঠেছে কৃষকের অপমান। চাষে বিরাট লোকসান করে যৎসামান্য অনুদানের টাকা শতকরা ১০ ভাগ চাষিও পায়নি। শস্যবীমা থেকে মুনাফা করে নিচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলি। ক্ষুদ্রচাষি-ভাগচাষি-চুক্তিচাষিরা কোনোরকম সরকারী সুযোগসুবিধাই পাচ্ছে না। মহাজনী ঋণের ফাঁদে তারা আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা।

কেন্দ্রের সরকার একদিকে এনআরসি-এনপিআর-সংশোধিত নাগরিক আইনের নামে নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে, অপরদিকে কৃষক-ভাগচাষি-চুক্তিচাষি-গ্রামীণ শ্রমজীবীদের অধিকারগুলি পায়ের তলায় পিষে মারছে। আসলে এদুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সরকারের এই সার্বিক হামলার বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জনগণের এক সংগ্রামী ঐক্য। গত ৮ জানুয়ারী সফল গ্রামীণ ভারত বনধের মধ্য দিয়ে সেটা দেখা গেছে।

নেতৃবৃন্দ এ রাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার কেন্দ্রীয় কৃষিনীতির অনুসারী পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিপনন আইন পাশ করে পুজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করছে। কৃষকদের ফসলের দাম থেকে বঞ্চিত করে রাজ্যের বুকে কায়েম করেছে মধ্যসত্বভোগীদের দাপট। যে কোনো গণআন্দোলনের উপর নামিয়ে আনছে হামলা-সন্ত্রাস। সরকারী প্রকল্প নিয়ে চলছে সীমাহীন লুঠের কারবার। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় এদের বিরুদ্ধেও আজ রুখে দাঁড়াতে হবে।

স্লোগান তোলা হয় –

  • কৃষিতে কর্পোরেট অনুপ্রবেশ বন্ধ করো, কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে।
  • ২০০ দিনের কাজ, ৬০০টাকা মজুরি ও সকলের জন্য ১০ হাজার টাকা পেনশন ঘোষণা করো।
  • কাজ-খাদ্য-সেচ ও ফসল সংগ্রহের সরকারী বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
  • আদিবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।
  • এ রাজ্যে কৃষকরা ফসলের সরকারী দাম পাচ্ছে না কেন রাজ্য সরকার জবাব দাও। গ্রামাঞ্চলে ক্যাম্প করে সরকারকে ধান-পাট-আলু সহ সমস্ত ফসল কিনতে হবে।
  • ভাগে-চুক্তিতে চাষ করা গরিব মাানুষদের নথীভুক্ত করে সরকারী সুযোগ সুুবিধা দিতে হবে।

এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন এআইকেএম নেতা কার্তিক পাল, জয়তু দেশমুখ, সুবিমল সেনগুপ্ত, কৃষ্ণ প্রামানিক, আয়ারলার নেতা কাজল দত্তগুপ্ত প্রমুখ।

দার্জিলিং-এ বিক্ষোভ কর্মসূচী

১০০ দিনের কাজ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া, কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে একটি কৃষক-বিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে কৃষক সমন্বয়ের আহ্বানে এআইকেএম এবং আয়ারলা-র দার্জিলিং জেলা কমিটির পক্ষ থেকে রাঙাপাণি বাজারে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়। পোড়ানো হয় বাজেটের প্রতিলিপি। উপস্থিত ছিলেন নেমু সিংহ, পবিত্র সিংহ, শরৎ সিংহ, পঞ্চা বর্মণ, পৈষানজু সিংহ প্রমুখ।

 

24ps

ব্লক ডেপুটেশন দক্ষিণ ২৪ পরগণায়

সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় সমিতির ডাকে রাজ্যের সব ব্লকে বাজেট বিরোধী ডেপুটেশন, অবস্থান কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর ২নং ব্লক ও মগরাহাট ১নং ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। দুই ব্লকের সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ হয়। বিষ্ণুপুর ২নং ব্লকের সামনে অবস্থানে বক্তব্য রাখেন সারাভারত কিষাণ মহাসভার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক দিলীপ পাল ও সারাভারত কিষাণ সভার নেতা সুফল পাল। মগরাহাট ১নং ব্লকের সামনে অবস্থানে বক্তব্য রাখেন আয়রালার রাজ্য নেতা নবকুমার বিশ্বাস, উপস্থিত ছিলেন সারাভারত কিষাণ মহাসভার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কমিটির সদস্য জগদীশ মন্ডল। অবস্থান শেষে দুই ব্লকের সামনেই কৃষি ও কৃষক বিরোধী বাজেটের প্রতিলিপি পোড়ানো হয়।

1 bloc

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-4