আজাদী? কীসের আজাদী?

বিজেপি আরএসএসের হামলাকারীরা হোক বা ইউপি-দিল্লী পুলিশ, প্রতিবাদীদের ওপর জিঘাংসায় আক্রমণ হানার সময় আক্রোশভরে বলছে “ইয়ে লো আজাদী, আসো তোমাদের আজাদী দিচ্ছি”! সাধারণ মানুষকেও তারা এই লাইনেই ভাবাতে চায়। সত্যিই তো, কীসের আজাদী? দেশ কি আজাদ নয়? তবু ‘আজাদী’ শ্লোগান দিচ্ছে মানে তো আসলে দেশ থেকেই মুক্তি চাইছে এরা। এরা দেশদ্রোহী, জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতক। সারা দেশে গণ আলোড়নে লক্ষ লক্ষ কন্ঠে কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘আজাদী’ ধ্বনি? ২০১২ সালে দিল্লী থেকে শুরু হওয়া নির্ভয়া আন্দলনে “বেখৌফ আজাদী” শ্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। শ্লোগান উঠেছিল “খাপ সে ভি আজাদী, বাপ সে ভি আজাদী”। কুখ্যাত খাপ পঞ্চায়েতের নিপীড়ন আর পিতৃতান্ত্রিক দমনের কবল থেকে মুক্তির আকাঙ্খা ভাষা পেয়েছিল এই শ্লোগানে। লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক বৈষম্য থেকে আজাদী। বর্তমান আন্দোলনে আরও বৃহৎ, ব্যাপক, গভীর ও মৌলিক মূর্ছনা সহ “আজাদী” শ্লোগান উঠে এসেছে মুখে মুখে। ভুখমারি সে আজাদী, ক্ষুধা ও অনাহার থেকে মুক্তি। বাস্তবে দেশে কত কোটি মানুষ এক বেলা আধ বেলা খাবার খেয়ে ঘুমোতে যায়? এই সহজ জিজ্ঞাসা মূর্ত হয় আজাদীর এই শ্লোগানে। সেরকমই উঠে আসে, স্বৈরাচার থেকে আজাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদ থেকে আজাদী, বেরোজগারি বেকারত্ব থেকে আজাদী, ঘৃণা-বিদ্বেষ-বিভাজন থেকে আজাদী ইত্যাদি ইত্যাদি।

india

 

অন্যভাবে বললে আজ ‘আজাদী’ এক চলমান ও ক্রম প্রসারমান শ্লোগানধারা বা ধারণা। ক্রমাগত আরও আরও মানুষকে কাছে টেনে নেয় এই শ্লোগান। কাছে এসে তাঁরাও যুক্ত করেন তাঁদের আজাদীর ধারণা, ব্যক্ত করেন নিজেদের মুক্তির আকঙ্খা। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার যে ছাত্রী পুলিশের নৃশংসতার হাত থেকে সহপাঠিকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই আইসা কর্মী আখতারিস্তা আনসারি ক্যারাভান পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকারে বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আজাদী’ এমন স্বাধীনতার নাম যা বহু কিছুকে ধারণ করে — কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন থেকে শুরু করে প্রকাশ্য পরিসরে নারীর শারীরিক স্বায়ত্ততা, ক্যুইয়ার যৌনতার সামাজিক অধিকার, দলিত মানুষের মর্যাদা, নর্থ-ইস্টের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জাত বিদ্বেষ থেকে মুক্তি, পুলিশের দেওয়া তকমা থেকে মুসলমান যুবসমাজের মুক্তি ও আত্মসম্মান অর্জন, সকল শিক্ষার্থীর সহজলভ্য শিক্ষা পাওয়ার স্বাধীনতা এবং সমস্ত মজুরের ন্যায্য মজুরি পাওয়ার স্বাধীনতা। তেমনই, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মজুরি পাওয়া আর ঋণ থেকে মুক্তি, ভিন্ন-সক্ষমতার মানুষদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের স্বাধীনতা ইত্যাদি — যে কেউ আরও আরও নিপীড়ন থেকে সর্বৈব মুক্তি ও স্বাধিনতার কথা যুক্ত করতে পারেন। আর, প্রতিবাদী জনতার বিশ্বাস, এই সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব একমাত্র বিপ্লব বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে — ইনকিলাব জিন্দাবাদ শ্লোগানে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-4