কুবালাপুরমের বিচিত্র অতিথিশালা

এই অতিথিশালার অতিথিরা হলেন ঋতুমতি মহিলারা। অবশ্য এখানে তাঁদের নিমন্ত্রণ করে আনা হয়নি। নিজের ইচ্ছায়ও এখানে থাকতে আসেননি তাঁরা। তিন হাজার বাসিন্দার গ্রাম কুবালাপুরমের সকল মেয়েকেই ঋতুস্রাব চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামের উপকন্ঠের এই অতিথিশালায় এসে থাকতে হয়। তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই শহর থেকে মোটামূটি পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। মাদুরাই জেলার এরকম আরও চারটি গ্রামে একই ব্যবস্থা। ঋতুকালীন গড়পরতা পাঁচ দিন থাকতে হয় মহিলাদের। বয়ঃসন্ধির সময় প্রথম ঋতুকালে টানা এক মাস। আর সন্তান জন্ম দেওয়ার পর সদ্যজাতকে নিয়ে সাত দিন। এরকম নিয়মই চালু হয়েছে। নিজেদের বাসনপত্র নিয়ে আসতে হয়। এইসব বাসনই ঋতুকালে ব্যবহার করতে বাধ্য মেয়েরা। এখানে রান্না হয় না, খাবার দিয়ে যায় প্রতিবেশিরা, ওই বাসনগুলিতে। শরীরের ছোঁয়া যাতে না লাগে তার জন্য বাইরের একটা নিম গাছে ঝোলানো থাকে বাসনপত্র। সবার জন্য আলাদা আলাদা বাসন। কিন্তু অতিথিশালায় ঘর মাত্র দুটি, এবং কখনও কখনও আট নয় জনকে এই দুই ঘরে এক সাথে থাকতে হয়। আগে একটাই রুম ছিল। গাঁয়ের সদাশয় প্রবীণ পিতারা আরেকটি ঘর স্যাংশন করে এবং গাঁয়ের যুব কল্যাণ সংগঠন চাঁদা তুলে দ্বিতীয় ঘরটি বানিয়ে দেওয়া ২০১৯-এর অক্টোবরে।

kubala

 

স্থানীয় ভাষায় এই অতিথিশালাগুলির নাম ‘মুত্তিত্থুরাই’, যার অর্থ অপবিত্র মেয়েদের জায়গা। “আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সামনে বলি অতিথিশালা, যাতে তারা সত্যিটা না জানতে পারে। আমাদের খুব লজ্জা হয়। বিশেষত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাইরে থেকে যখন আত্মীয়বান্ধবরা আসে যারা এরকম প্রথার সাথে অপরিচিত”, বলেন অতিথিশালার এক অতিথি। এই প্রথা অন্য যে চারটি গ্রামেও চালু হয়েছে সেগুলি হল, পুড়ুপাত্তি, গোবিন্দনাল্লুর, সাপ্তুর ও চিন্নাইয়াপুরম। অবিবাহিত তরুণীরা নির্দিষ্ট সময়ে অতিথিশালায় না এলেই গঞ্জনা শুরু হয়ে যায়। “ওরা বোঝেই না কতগুলি ঋতুচক্র হয়, কিন্তু যদি আমি ৩০ দিন পরপর মুত্তুথুরাই না যাই তাহলে তাহলেই লোকে বলতে শুরু করবে যে আমার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ”, বলে গ্রামের এক ১৪ বছর বয়সী ক্লাস নাইনের ছাত্রী। “আমি এতে অবাক হচ্ছি না”, জানান সালাই সেলবাম, পুদুচেরির এক নারীবাদী কর্মী যিনি ঋতুস্রাবকে ঘিরে চলা অচ্ছুৎপনার বিরুদ্ধে সরব, “এই সমাজ নারীকে নিরন্তর নীচু করতে চায়, নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রাখতে চায়। সংস্কৃতি বা প্রথার নামে এইসব অনুশাসন আসলে মেয়েদের মূল অধিকারগুলি হরণ করারই আরেক কৌশল মাত্র।”

মূল রিপোর্টঃ কবিতা মূরলীধরণ, অঙ্কন প্রিয়াঙ্কা বরার,
সূত্রঃ  https://ruralindiaonline.org/articles/koovalapurams-curious-guesthouse/

খণ্ড-27
সংখ্যা-6