কেন্দ্রীয় সরকার “শিক্ষার অধিকার আইন” অকেজো করে দিচ্ছে

দেশে কোটি কোটি শিশু এখনও স্কুল-শিক্ষার সুযোগ পায় না অথচ হাজার হাজার স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। গত ২ ডিসেম্বর ২০১৯ দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী (এক কথায় শিক্ষামন্ত্রী বলা হয়ে থাকে) রমেশ পোখরিয়াল লোকসভায় জানান যে নিতি (NITI) আয়োগের উদ্যোগে মধ্য প্রদেশে ৩৫,৯৯৬টি, ঝাড়খণ্ডে ৪,৩১২টি এবং ওড়িশায় ১,৮০৩টি স্কুলকে একত্রে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। “একত্রে মিলিয়ে দেওয়া” বা মার্জ করে দেওয়ার অর্থ হল বিভিন্ন স্তরের ওই স্কুলগুলির পৃথক অস্তিত্ব না রেখে কয়েকটি বড়ো স্কুলের মাধ্যমে কাজ চালানো। এর কার্যকরী অর্থ, বলাই বাহুল্য, ওই সংখ্যক স্কুলের বিলুপ্তি। শিক্ষার অধিকার রক্ষার একটি ফোরামের হিসেবে দেশে ইতিমধ্যেই ১,৩০,০০০ স্কুলের অস্তিত্ব বিলোপ হয়েছে। এগুলির প্রায় সবই প্রান্তিক এলাকায়, এগুলির সবই দলিত, আদিবাসী ও গ্রামীন গরীব ঘরের ছেলেমেয়েদের নাগালের মধ্যে থাকা স্কুল।

৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত ছেলেমেয়েকে বাধ্যতামূলকভাবে উন্নত মানের সহজলভ্য অবৈতনিক স্কুল শিক্ষার আওতায় আনার জন্য ২০০৯ সালে “শিক্ষার অধিকার আইন” পাশ হয়েছিল। সেই অনুযায়ি বাজেটেও বরাদ্দ বেড়েছিল, সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে কাজ এগোচ্ছিল। এখন বিজেপি সরকার তার ‘নয়া শিক্ষা নীতি’-তে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায় আনার কথা বলে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ করার বদলে বিশ্বমানের শিক্ষা চালু করার নামে ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযান’ নাম দিয়ে প্রান্তিক স্কুলগুলিকেই তুলে দিচ্ছে। সরকার অন-লাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সমগ্র শিক্ষা অভিযানকে ঠেলে দিতে চাইছে। বলাই বাহুল্য এর ফলে খাতায় কলমের সরকার শিক্ষার বিস্তার ঘটাচ্ছে বলে দেখাতে পারবে আর বাস্তবে সাধারণ গরিব দলিত মানুষকে শিক্ষার কার্যকরী অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে পারবে। আমাদের দেশে যত রকম সামাজিক বৈষম্য আছে তার মধ্যে সব চেয়ে আদি ও গভীর বৈষম্য হল শিক্ষার অধিকারে বৈষম্য। এই বৈষম্যের মাধ্যমেই গুটিকয় উচ্চকোটির মানুষ ব্যাপক সাধারণকে নিজেদের অনুগত করে রেখে দেশে ব্রাহ্মণ্যবাদ কায়েম রেখেছিল। আজ নতুন করে দেশে সেই ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যের বিভিন্নরূপ প্রবলতা দেখা যাচ্ছে, সর্বসাধারণের মধ্যে শিক্ষার প্রসারকে আটকে দেওয়া যার অন্যতম মাধ্যম।

খণ্ড-27
সংখ্যা-6