বিপদের মুখে অরণ্যভূমি

নতুন করে বিপন্ন হতে চলেছে ভারতের আদিম অরণ্যভূমি। পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সংরক্ষিত অরণ্যভূমিও খুলে দিতে চায় কর্পোরেটদের জন্য। এ বিষয়ে মন্ত্রক থেকে নতুন সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, এতদিন অরণ্যভূমিকে “যাও” এবং “যেও না” এই দুই ক্যাটেগরিতে ভাগ করা ছিল যা এবারে তুলে দেওয়া হবে। “যেও না” ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভূক্ত আছে ভারতের আদিম ও বিপুল জীববৈচিত্র সম্পন্ন অরণ্য অঞ্চলগুলি। ব্রিটিশ যুগ থেকে শুরু করে স্বাধীন যুগেও ভারতে অরণ্য ক্রমাগত ধ্বংস হয়েছে উন্নয়নের নামে। সবুজ ধ্বংস এভাবে বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে যাওয়ায় ২০১০ সালে ক্যাটেগরি ভাগ করা হয়েছিল এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অরণ্যাঞ্চলকে “যেও না” পর্যায়ভূক্ত করা হয়েছিল। এর অর্থ হল কোনও বাহানাতেই ওই অরণ্য ধ্বংস করা যাবে না, সেখানে কোনও রকম উন্নয়ন ইত্যদি প্রকল্প নিয়ে যাওয়া চলবে না। এক কথায় বললে “যেও না” ছিল আমাদের প্রকৃতি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষাকবচ। বিজেপি সরকার এখন সেই রক্ষাকবচ কেড়ে নিতে চায়। অরণ্যের অধিকার আইনে যে কোন প্রকল্পে গ্রামবাসীদের অনুমতি জরুরি, এই আইনে বলীয়ান হয়ে গ্রামবাসীরা আদানি কোম্পানির একটি প্রকল্পের কাজ আটকে দেওয়ায় এই মন্ত্রকই ২০১৫ সালে সার্কুলার জারি করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল যে “অরণ্যের অধিকার আইনের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ কোনও অনুমতি ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পকে নীতিগত ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে”।

২০১৮র ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে সরকার জানায় যে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ২০,৩১৪.১২ হেক্টর বনভূমি কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে খনিজ উত্তোলনের জন্য। ২০১৯ এর মার্চ মাসে আদানি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হয় হাসদেও আরণ্ড বনভূমির এক লক্ষ সত্তর হাজার হেক্টর জমি। ভারতের মধ্যভাগের এই অঞ্চলকে ভূতাত্বিকেরা চিহ্নিত করেন গন্দোয়ানাল্যান্ড হিসেবে, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের বহু আগে যে আদি মহাদেশ থেকে ভারত ভুখন্ড তৈরি হয়েছিল সেই গন্দোয়ানাল্যাণ্ড। কিন্তু এই অঞ্চলটি “যেও না” ক্যাটেগরিভূক্ত হওয়ায় ওখানে আদানিদের লুটপাট প্রকল্প চালু করাটা আইনে আটকে যাচ্ছে। ফলত বিজেপি সরকার এখন নিয়মটাই বদলে দিতে চলেছে। এর ফলে ভারতের সমস্ত আদিম ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অরণ্য লুটেরা কর্পোরেটদের কবলে পড়বে।

forest

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-7