প্রতিরক্ষা শ্রমিকরা পুনরায় ধর্মঘটের পথে
Defense workers are on strike again

২০১৯ সালে গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকার আরও দ্রুততার সাথে OFB এর কর্পোরেশনের প্রক্রিয়া তরান্বিত করে। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ফেডারেশন ও স্বাধীন ইউনিয়নগুলো, এ্যাসোশিয়েশন গুলোকে সঙ্গে নিয়ে ২৩, ২৪ ও ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯ তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়। তিন দিনের ধর্মঘটের জেরে সরকার কর্পোরেশন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে এবং ফেডারেশনের সাথে আলোচনা করেই যাকিছু হবে বলেই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু সরকার আদতে কর্পোরেশনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেনি। শ্রমিক কর্মচারীরাও এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়।

পরবর্তী কালে ফেডারেশনগুলো বাধ্য হয়ে ২০ আগষ্ট ২০১৯ থেকে প্রতিরক্ষা শিল্পে এক মাসের ধর্মঘটের ডাক দেয়। সমস্ত স্বাধীন ইউনিয়ন ও এ্যাসোশিয়েশন গুলোও এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানায়। ধর্মঘট চলাকালীন গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরী কাশীপুরে জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বিশেষ ভুমিকা পালন করে যা এই ফ্যাক্টরীর শ্রমিক আন্দোলনে ছাপ ফেলে। ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন প্রথমে এআইসিসিটিইউ-র অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ ও টিইউসিসি মিলিতভাবে ন্যাশানাল প্রোগ্রেসিভ ডিফেন্স এমপ্লয়ীজ ফেডারেশন (এনপিডিইএফ) গঠন করে। ধর্মঘট চলাকালীন চীফ লেবার কমিশনার (সেন্ট্রাল)-এর উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সরকার পক্ষ কর্পোরেশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু করার  আগে পর্যালোচনার জন্য ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি High Level Official Committee (HLOC) গঠনে সম্মত হয়। এই প্রতিশ্রুতি মতো ফেডারেশান গুলো পাঁচদিন পর ঘর্মঘট প্রত্যাহার করে। পরবর্তী পর্যায়ে এই কমিটির তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।

১৬ মে অর্থমন্ত্রী কোভিড-১৯ অতিমারীর জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজ থেকে বেরলো প্রতিরক্ষা উৎপাদনে কর্পোরাটাইজেশন ও ৭৪ শতাংশ FDI করার সিদ্ধান্ত। শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ফেডারেশনগুলি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করে। NPDEF, AIDEF, INDWF ও BPMS চারটি ফেডারেশনের উদ্যোগে ৪১টি ফ্যাক্টরীতে স্ট্রাইক ব্যালট নেওয়া হয়। ৯০ শতাংশ শ্রমিক ধর্মঘটের সমর্থনে রায় দানের ফলে AIDEF, INDWF ও BPMS যৌথভাবে এবং NPDEF আলাদাভাবে ৪ আগষ্ট, ২০২০ স্ট্রাইক নোটিস প্রদান করে, ১২ অক্টোবর ২০২০ থেকে প্রতিরক্ষা উৎপাদন কারখানায় অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের জন্য। চীফ লেবার কমিশনার (কেন্দ্রীয়)এর উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রীয়াল ডিসপিউট এ্যাক্ট-১৯৪৭ অনুযায়ী সরকার ও ইউনিয়ন নেতৃত্বের মধ্যে কনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৯ অক্টোবর, ২০২০ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ডি পি এস নেগি, চীফ লেবার কমিশনার উপস্থিতিতে বৈঠক হয় উনি বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারকে ইউনিয়ন নেতৃত্বের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কথা বলেন।

ফলসরূপ ইউনিয়ন নেতৃত্বও এই সমাধান সূত্রে রাজি হয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিদ রাখতে সম্মত হন ।

প্রসঙ্গত এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় ভাবে দিল্লিতে যখন ফেডারেশন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছিল, কলকাতাতে নিজামপ্যালেসে ডেপুটি লেবার কমিশনার(সেন্ট্রাল)এর উপস্ফিতিতে গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জি এস এফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ঘোষিত ধর্মঘট নিয়ে কনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া জারি ছিল।

৯ অক্টোবর, ২০২০ মিটিং-এর শর্ত অনুযায়ী চারটি ফেডারেশনের সঙ্গেই সরকারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা, কিন্তু সরকার পক্ষ ও NPDEF এর সঙ্গে কোন বৈঠক হয়নি। শোনা যায় রেকগনাইজড ফেডারেশন গুলির বাধা দানে, NPDEF আন-রেককগনাইজড হওয়ার জন্য সরকার পক্ষ NPDEF-কে দ্বিপাক্ষিক মিটিং-এ ডাকতে পারেনি। শ্রমিক শ্রেণীর ওপর চলমান আক্রমনের মুখে ফেডারেশনগুলোর এই সংকীর্ণ মনোভাব শ্রমিক ঐক্যকে দূ্র্বল করে।  

১১ জুন, ২০২১ পরবর্তী মিটিং হয়। এই পরিস্থিতিতেও একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করতে হচ্ছে, CLC(C)-এর এই Conciliation Meeting-এ NPDEF থাকুক এটা AIDEF মেনে নিতে পারছে না। ঐ দিনও এক সঙ্গে মিটিং-এ থাকার জন্য অসম্মতি প্রকাশ করে। যদিও বাকি দুটি ফেডারেশনের মনোভাব এব্যপারে ইতিবাচক। এ দিনের মিটিং-এও কোনও সমাধান সূত্র না বোরোনোয় ১৫ জুন, ২০২১ পরবর্তী মিটিং-এর দিন ধার্য হয়।

১৫ জুন, ২০২১ NPDEF ছাড়া বাকি তিনটি ফেডারেশন অনুপস্থিত থাকে। দুঃখে বিষয় এই দিনের মিটিং-এ অনুপস্থিত থাকবে এই কথাটা NPDEF-কে জানানোর প্রয়োজনটুকও বোধ করে না। এতে কি সরকারের সামনে ফেডারেশনগুলোর অনৈক্যের চেহারাটা ফুটে উঠল না?

চীফ লেবার কমিশনার কনসিলিয়েশন প্রসিডিংস ফেল্ড ঘোষণা করলেন। সরকার যেন ওত পেতে ছিল, এই অতিমারির পরিস্থিতিতেও “Conciliation Proceedings Failed” এই রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ১৬ জুন,২০২১ OFB-কে ভেঙে সাতটি কর্পোরেশনে ( DPSU) পরিণত করার সিদ্ধান্ত ক্যাবিনেট অনুমোদন করে।

এবারও তিনটি রেকগনাইজজড ফেডারেশন AIDEF, INDWF ও BPMS যৌথভাবে NPDEF-কে বাদ দিয়ে ১৯ জুলাই থেকে অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের ডাক দেয় ও NPDEF-কে সমর্থনের অনুরোধ জানায়। সিদ্ধান্তের গ্রহনে সময়ে কেন্দরীয় স্তরে JAC গঠনে অনিহা, রেকগনাইজড আনরেকগনাইজড-এর বিভাজন আর লড়াইয়ের ময়দানে পাশে ডাকা তিনটি ফেডারেশনের পুরনো অভ্যাস। এ বিষয়ে NPDEF পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় JAC-এ সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যুক্ত সমস্ত ইউনিয়নকে বৃহত্তর স্বার্থে। INDWF-এর পক্ষ থেকেও আলাদা ভাবে এই দাবি তোলা হয়। তিনটি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে যক্ত সমস্ত ইউনিয়নকে নিয়ে আগামী ২৭ জুন, ২০২১ বিকেল ৪টায় ভার্চুয়াল মিটিংএর আয়োজন করা হয়েছে। এই মিটিং এর সিদ্ধান্ত নিয়ে OFB কর্পোরাটাজেশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পূর্বের ঘোষণা মতো NPDEF ও AICCTU-এর নেওয়া সারা দেশে প্রতিবাদ দিবস পালিত হবে শ্লোগান সাউটিং, ডেমনস্ট্রেশন ও কালো পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে।

সমস্ত সংকীর্ণতা কে সরিয়ে রেখে সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তবেই দীর্ঘস্থাই লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়া যাবে এবং সাফল্যও পাওয়া যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক নয়, রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা, স্টীল, কৃষি সমস্ত স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস কে প্রতিহত করতে হবে।

-- জয়দেব দে 

খণ্ড-28
সংখ্যা-23