সার্বজনীন গণ-টিকাকরণ সুনিশ্চিত কর
mass vaccination

দেশে দ্রুত সার্বজনীন গণ-টিকাকরণ সুনিশ্চিত করা এবং একে জাতীয় টিকা-নীতির মূল অভিমুখ করার জন্য প্রচারাভিযান সংগঠিত করবে সিপিআই(এমএল)। প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন কল্যাণ যোজনায় মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল ও এক কেজি চানা-বুটের সাথে প্রয়োজন মতো ডাল, ভোজ্য তেল ও মশলা দিতে হবে।

কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ এবং অর্থনৈতিক মন্দার তান্ডবে দেশজুড়ে জনজীবনে এক বিপর্যয় নেমে এসেছে। মোদী সরকারের চরম অবহেলা ও অপদার্থতা, অস্বচ্ছ, স্বৈরাচারী ও অযৌক্তিক টিকানীতির ফলে এই অতিমারীতে ভারতই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে এবং হচ্ছে। পবিত্র গঙ্গা শববাহিনী গঙ্গায় পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। এমতাবস্থায় দেশের শীর্ষ আদালত এই অযৌক্তিক, স্বৈরাচারী টিকা-নীতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভৎসনা করে কঠোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। জবাবদিহি করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। আর তাই চাপে পড়ে সাত দিনের মধ্যে জাতীয় টিকানীতি বদলাতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। এরজন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন দেশবাসী।

গত সাত জুন প্রধানমন্ত্রী মূলত তিনটি ঘোষণা করেছেন এবং ত্রিশ মিনিট ভাষণ দিয়েছেন। (ক) একুশে জুন থেকে কেন্দ্র পচাত্তর শতাংশ টিকা কিনে রাজ্য সরকারগুলিকে সরবরাহ করবে এবং ১৮-৪৪ বছর পর্যন্ত সবার জন্য মুক্ত টিকাকরন সুনিশ্চিত করবে। (খ) পঁচিশ শতাংশ টিকা উৎপাদক সংস্থার কাছ থেকে বেসরকারী হাসপাতাল সংগ্রহ করতে পারবে এবং প্রতি ডোজ টিকার দামের বাইরে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকার বেশি সার্ভিস চার্জ নিতে পারবেনা। (গ) আগামী নভেম্বর মাস অর্থাৎ দিপাবলী উৎসব পর্যন্ত গরিবদের বিনামূল্যে খাদ্যশষ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এরমধ্যে কিছু নির্দিষ্ট ইস্যু এখনো গোপন ও বিমুর্ত হিসাবে রেখে দিয়েছেন। যেমন কোভিডে মৃত্যুর তথ্যের সংখ্যা এড়িয়ে শতাংশের হিসাব তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি এই সত্যিটাই গোপন করেছেন যে, গত পাঁচ মাসে ৪% ভারতবাসীকে টিকাকরণ করা যায়নি। এক্ষেত্রে বেসরকারী দরজা বেশি করে রাজ্যে রাজ্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। যারফলে কোভিড চিকিৎসা, অক্সিজেন ও টিকাদান নিয়ে দেশবাসী বেশি করে লুটতরাজের শিকার হয়েছেন। সরকারী ব্যবস্থা লাটে উঠেছে। তাই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নূন্যতম নির্ভরতা ত্যাগ করতে হবে। একটি যুক্তিপূর্ণ টিকা-নীতি তৈরি করা এবং জোরালোভাবে একে বাস্তবায়ন করার জন্য মোদী সরকার এখনো পর্যন্ত দেশবাসীর মধ্যে কোন আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে পারেনি।

আমরা এখনো পর্যন্ত জানিনা গুজরাট কেন তামিলনাড়ু থেকে বেশি ভ্যাক্সিন পায়। কিসের ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে টিকা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত আট জুন টিকা প্রদানের গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যা, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং ভ্যাক্সিন প্রদান কর্মসূচীর প্রবণতার ভিত্তিতে বন্টন করা হবে ভ্যাক্সিন। এখানে সময়ের দাবি অনুসারে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় টিকাকরণ করার নীতি গ্রহণ করা হয়নি। রাজ্যগুলিকে দাবিয়ে রাখার, খুশীমতো যেকোন অজুহাতে বঞ্চিত করার কৌশল চতুরভাবে হাতে রাখা হয়েছে। রাজ্যগুলিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকার দাবি উপস্থাপিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সরাসরি টিকা সরবরাহ করার জন্য নীতি গ্রহণ করা হয়নি। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোনভাবেই তা স্বচ্ছ নয়। কাজেই দ্রুত সার্বজনীন গণ-টিকাকরণ সুনিশ্চিত করার জন্য দেশব্যাপী প্রচারাভিযান সংগঠিত করবে সিপিআই(এমএল)। এটাই সময়ের দাবি। মোদীর টিকা-নীতি ও ভাষণ এই দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা আগামী দীপাবলী উৎসব পর্যন্ত অব্যাহত রাখার বড় কথা বাস্তবে কতটা সত্য। পিএমজিকেএওয়াই-এর অর্থ মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল বা আটার সাথে এক কেজি চানাবুট (যা বেশিরভাগ সময়ে সরবরাহ করা হয় না) রেশনে গরিবদের জন্য বরাদ্দ করা। আমাদের রাজ্যে সবার জন্য এক কেজি করে ডাল বরাদ্দ অনিয়মিত ও কার্যত বন্ধ অবস্থায় আছে। বাস্তবে পাঁচ কেজি করে মাথাপিছু চাল বা আটা দেওয়া হয় মাত্র। আমরা কি একে গরিবদের সমগ্র খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলতে পারি? প্রয়োজনমতো ডাল, ভোজ্য তেল ও মশলা ছাড়া তা কি করে সম্ভব। তাছাড়া মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল বা আটা যথেষ্ট নয়। তাই মাথাপিছু পাঁচ কেজির পরিবর্তে দশ কেজি করে চাল বা আটা এবং এরসাথে প্রয়োজন মতো ডাল, ভোজ্যতেল ও মশলা সরবরাহ করতে হবে। এই দাবিতে প্রচারাভিযান সংগঠিত করবে সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি।

পার্থ কর্মকার,
রাজ্য সম্পাদক, সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি,

৯ জুন ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-21