কোভিডের আর্শিতে সরকারের শ্রমিক দরদী ভূমিকা
The worker-tender role of the government

এ রাজ্যে ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হল লকডাউন। থুড়ি, এই ভীতিপ্রদ শব্দবন্ধটির গায়ে এখন পরানো হয়েছে নতুন এক জামা – ‘নিয়ন্ত্রণ বিধি’! দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা থেকে সরে এসে রাজ্যগুলোর ঘাড়ে কোভিড নিয়ন্ত্রণের সব দায় এখন চাপিয়ে দিয়েছে মোদী। ঠিক যেমন, টিকাকরণের সব দায় এখন রাজ্যের। খোলা বাজার থেকে টিকা খরিদ করা, ইত্যাদি সব কিছুই এখন কর‍বে রাজ্যগুলো, কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্যই বা কি পদক্ষেপ হবে নেবে সেটাও রাজ্যগুলো ঠিক করবে। আর এটা করতে গিয়ে প্রায় গোটা দেশ জুড়েই এখন চলছে লকডাউন। আজ এই রাজ্য তার মেয়াদ বাড়াচ্ছে, তো কাল ফের অন্য রাজ্য, আর দেশবাসীর কাছে এটাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ললাট লিখন। সংবিধানে স্বাস্থ্য রাজ্য এক্তিয়ার ভুক্ত, তাই নাকি স্বাস্থ্য বিষয়ক পদক্ষেপ রাজ্য নেবে - যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর অনবরত আঘাত হানা মোদীর মুখে যুক্তরাষ্ট্রিয়তার কথা শুনলে শিয়ালের যুক্তিই মনে পড়ে।

কত গরিব মানুষ আবার কর্মচ্যুত হলেন, কত মানুষ নতুন করে আবার তলিয়ে গেলেন দারিদ্রের অতল গহ্বরে, কত অযুত নিযুত দেশবাসী আবার নিক্ষিপ্ত হলেন অনাহার-অর্ধাহারে, তার হিসেব কি আর রাখছেন রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা? সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) তার সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে জানিয়েছে, কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ কর্মহীনতাকে আরও অনেক বাড়িয়ে দিল। এ বছর জানুয়ারিতে মাসিক কর্মহীনতার হার ছিল ৬.৬২ শতাংশ, যা এপ্রিলে বৃদ্ধি পেয়ে হল ৭.৯৭ শতাংশ। বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন ও পরিযানে বিধিনিষেধের জন্য ১৬ মে সপ্তাহান্তে কর্মহীনতার হার বেড়ে হয় ১৪.৫ শতাংশ, আবার পরের সপ্তাহ, যেটি শেষ হচ্ছে ২৩ মে, এই হার আরও বেড়ে হল ১৪.৭ শতাংশ। বোঝাই যাচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে, বেকারত্ব ততই বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আতংকজনক হারে।

গত বছর দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটা নির্দেশিকা জারি করে নিয়োগকর্তাদের জানায়, নেমে আসা এই মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকট কে মোকাবিলা করতে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকার দরুণ যেন কারুর বেতন/মজুরি হ্রাস করা না হয়, যেন ছাঁটাই না করা হয় কোনো কর্মীকে। একই ভাবে রাজ্য সরকার ও ওই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে। এর বিরুদ্ধে মালিকপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে গেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তা প্রত্যাহার করে নেয়। বেতন, মজুরি ও চাকরির প্রশ্নে কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়। এতোদিন একটা ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, সুরক্ষিত চাকুরি ও নিশ্চিত বেতনের ক্ষেত্রে বেতনভুক কর্মীরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কিন্তু কোভিড সেই ফানুসটাকে চুপসে দিল। গত বছর প্রায় ৯৫ লক্ষ বেতনভুক কর্মী কাজ হারায়। আরবিআই-এর খুব সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে রীতিমতো আশংকা জাগিয়ে বলা হয়েছে যে বিপুল হারে অতিমারী কেড়ে নিল কোটি কোটি মানুষের কাজ, তার প্রভাব হবে দীর্ঘস্থায়ী আর ফলাফল ও হবে নেতিবাচক। সিএমআইই-এর কর্ণধার মহেশ ব্যাস জানিয়েছেন, গত একবছরের মধ্যে দেশের ৯৭ শতাংশ জনতা আরও বেশি গরিব হয়েছেন, যা দেশের অর্থনীতির পক্ষে সবচেয়ে উদ্বেগজনক। গভীর বিপর্যয়ের মধ্যেও চরম নির্বিকার ও নির্লিপ্ত মোদী সরকার। কাজ হারানোর এই সুনামি যখন সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে, কাজ টিকিয়ে রাখাটাই যখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতীয় রেল অবলুপ্ত করল ১৩,৪৫০ পদ। রেলের বেসরকারীকরণের পথে এগুলোই হচ্ছে কয়েকটি ধাপ।

দিন কয়েক আগে, কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের সিইও এবং কর্পোরেট জগতের কর্ণধার, সিআইআই-এর সভাপতি উদয় কোটাক কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন অর্থনীতিতে আরও অনেক বেশি টাকার জোগান দিতে। শীর্ষ ব্যাঙ্ককে টাকা ছাপানোর পরামর্শের সাথে দেশের সবচেয়ে নীচুতলার মানুষদের হাতে নগদ টাকার জোগান, খাদ্য সুনিশ্চিত করা, সরকারী উদ্যোগে তাঁদের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার সাথে মনরেগার কাজকে আরও সম্প্রসারিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। চরম সংকটগ্রস্থ ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য প্যাকেজের পরামর্শ ও তিনি দিয়েছেন। একই পরামর্শ তাবড় তাবড় অর্থনীতিবিদেরা লাগাতার দিলেও মোদী সেসব কানে তুললেন না, উল্টে কোভিড অতিমারিকে সুযোগে পরিনত করতে একের পর এক স্টীমরোলার নামিয়েছে দেশবাসীর উপর।

সাধারণ সময়ে, অর্থনীতি যখন স্বাভাবিক ছন্দে চলে তখন, সকলের অগোচরে চোখের আড়ালেই থেকে যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রকৃত অবস্থা। এই সমস্ত লক্ষ কোটি অযুত নামহীন অবয়বহীন শ্রমজীবী মানুষদের নিত্যদিনের দুঃসহ দুর্দশা ও যন্ত্রণা শহুরে ভারতের চোখে প্রথম প্রতিভাত হয় কোভিড সৃষ্ট সংকটের ক্রান্তিলগ্নে। গতবছর মোদী যখন আচমকা দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলেন, তখন তাঁর চিন্তা ভাবনায় ছিল শুধু ব্যালকনি বা ছাদের উপরে উঠে থালা বাজানো উচ্চ মধ্যবিত্তের স্বচ্ছল শ্রেণিটি। দেশ ও রাষ্ট্রীয় কল্পনায় মোদীর ভারতে, ও রাষ্ট্রের কাছে এই অগণন অনুচ্চার, আড়ালে থাকা নীরবে সম্পদ সৃষ্টিকারী শ্রেণিটির কোনো ঠাঁই নেই। অথচ, সরকারের হিসাবে এঁরাই দেশের জিডিপিতে অবদান রাখেন ৫৭ শতাংশ! তাই, গত বছর ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের চোখে ধরা পড়লো না লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে নিজভূমে ফিরে আসার মরিয়া পথ চলা, সেই পরিব্রজনে প্রসব বেদনায় কাতর মায়েদের পথেই সন্তান প্রসবের অলৌকিক ঘটনা, পথক্লান্তিতে, চলন্ত ট্রেনের তলায় পিষে যাওয়া হত দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম বিপন্নতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিস্ময়ের সাথে এই প্রশ্ন করতে পারেন, “সরকার তো ওদের খাবার দিচ্ছে, তাহলে মজুরি কেন চাইছে?”

এদিকে, আমাদের দেশে রয়েছে এক কেন্দ্রীয় আইন “ইন্টার - স্টেট মাইগ্রেন্ট ওয়ার্ক্সমেন (১৯৭৯) অ্যাক্ট”। কোভিড সংকট এই অগনিত শ্রমিকদের সীমাহীন দুর্দশা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেওয়ার পরও মোদী সরকার সেই হিমঘরে পাঠানো শীতঘুমে চলে যাওয়া আইনকে আবার নতুন করে বাঁচিয়ে তাকে মজবুত করার বদলে সেটার আলাদা অস্তিত্ব বাতিল করে তার একটা অংশ মিশিয়ে দিল পেশাগত নিরাপত্তা স্বাস্থ্য কোড ও আরেকটা সামাজিক সুরক্ষা কোডের সাথে।

সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশক নীতি বা ডাইরেক্টিভ প্রিন্সিপাল নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে ভারতীয় রাষ্ট্র জীবনধারনের অধিকার, সমকাজে সমমজুরী, শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় আর্থিক কর্মকান্ডে ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষেত্রে নেমে আসা যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। যে কোনো শোষণ উৎপীড়নের বিরুদ্ধে ভারতীয় রাষ্ট্র তাকে নিরাপত্তা দেবে, এই অঙ্গীকার রয়েছে। কিন্তু, লকডাউনের পর পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নেমে আসা জীবন যন্ত্রণা সমস্ত মেকি আবরণকে নির্মম ভাবে ছিন্ন ভিন্ন করে কঠিন বাস্তবকে সামনে মেলে ধরল, সংবিধানের প্রতিশ্রুত নির্দেশাত্মক নীতির প্রহসনকেই বে-আব্রু করে দিল। এতো বড় একটা মানবিক ট্রাজেডি থেকেও কোন সরকারই এক রত্তি শিক্ষা নিল না। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে আবার সেই নিদারুণ যন্ত্রণা ফুটে উঠল, অবশ্য ভিন্ন মাত্রা নিয়ে। নতুন আইনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম সহ প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটির ডেটা বেস তৈরি করার আইনী নির্দেশ থাকলেও তা রূপায়িত হল না। নাম কা ওয়াস্তে হেল্প লাইন কিছু কিছু রাজ্য সরকার ঘোষণা করলেও তা অকার্যকর হয়েই পড়ে রয়েছে। শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই নয়, ২০১৭ সালে এমনকি সুপ্রিম কোর্ট ও বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, “ক্যাগ পর্যন্ত জানে না, নির্মাণ শ্রমিকদের সেস খাতে গচ্ছিত তহবিলের কত টাকা কোথায় ও কি উদ্দেশ্যে খরচ হয়েছে!” এমনকি, ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ আদালত রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করে সেস খাতে ২৬,০০০ কোটি টাকা নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণে খরচ না করার জন্য। কোভিড পরিস্থিতিতে ও এই তহবিল থেকে সর্বস্বান্ত নির্মাণ শ্রমিকদের দেওয়া হল না কোনো কানা কড়ি। রাজ্য সরকার ও এপ্রশ্নে চরম উদাসীন। দিল্লির রাজ্য সরকার নথিভুক্ত নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য এককালীন ৫,০০০টাকা আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছে। কেরল সরকার ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নিয়ে এসেছে কিছু প্যাকেজ। চা বাগিচার শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য এ বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, তা এই গভীর সংকটেও দেওয়া হল না চা শ্রমিকদের। মোদী সরকারের বহু বিজ্ঞাপিত “প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্নযোজনা” ঘোষিত হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে। তা পরে বাড়ানো হয় নভেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে পাঁচ কেজি করে বিনামূল্যে তাঁরাই রেশন পাবেন যাঁদের কাছে রয়েছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের কার্ড। কিন্তু মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষের কাছে এই কার্ড রয়েছে, ফলে বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ থেকে গেলেন এর বাইরে। বার বার অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন, উপচে পড়া এফসিআই-এর বিপুল শস্য ভান্ডার থেকে কোভিডের আপৎকালীন সময়ে সর্বজনীন রেশন কার্ড দেওয়া হোক। ১৩ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার যেন সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় রেশন দেয় আর তার জন্য কোনো পরিচয় পত্রের দরকার নেই। পাশাপাশি, দুবেলা বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহ করতে রসুই খানা চালু করার ও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশ ও কতটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এর মধ্যে মোদী সরকার নিয়ে এসেছে নতুন সামাজিক সুরক্ষা কোড। নতুন এই কোডের মধ্য দিয়ে নাকি সুরক্ষিত হবে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা। এই কোড দুটো পৃথক বর্গ তৈরি করেছে - প্রথমটা হল, কর্মীবৃন্দ আর দ্বিতীয়টা অসংগঠিত শ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিক। ফলে এরপর থেকে অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা পুরোপুরি নির্ভর হয়ে পড়ল প্রকল্পের ঘেরাটোপে।

এটা আগেকার শ্রম আইনের পর্বকালের থেকে বড় সড় এক পরিবর্তন। যেমন, আগে ছিল, বাগিচা আইন (প্ল্যানটেশন লেবার অ্যাক্ট) ১৯৫২, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য আইন, ১৯৯৬, আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের আইন, ১৯৭৯ ইত্যাদি, যেখানে সামাজিক সুরক্ষার দায়টা ছিল মূল নিয়োগকর্তার উপর। এখন, সরকারের কৃপার উপর থেকে যাবে এই সমস্ত সামাজিক সুরক্ষার ভবিষ্যৎ। তার থেকেও বড় কথা, যখনই এটা প্রকল্পের মোড়কে আসছে, তখন সামাজিক সুরক্ষা আইনী বাধ্যকতার বদলে সরকারের বাজেট বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

হাজারো সীমাবদ্ধতা এই সমস্ত প্রকল্পে থাকুক না কেন, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, যে গ্রুপগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে, তাঁদের নথি ভুক্তি। ১৯৭৯-র পরিযায়ী শ্রমিক আইন শ্রমিকদের নথিভুক্তি না করে মূল নিয়োগকর্তা ও ঠিকাদারের রেজিস্ট্রেশন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এবারে অবশ্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের সরাসরি নথিভুক্তির কথা আইনে বলা হয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে যে দু'টো পদক্ষেপ নিতে হবে, তা হল –

১) পোর্টালে পরিযায়ী শ্রমিকদের স্ব-নথিভুক্তিকরণের সুযোগ। এর মধ্যে দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম, তাঁরা কোন কোন সংস্থার অধীনে কর্মরত, নিয়োগকর্তার নাম-ঠিকানাই বা কি, তার তালিকা সরকারের কাছে থাকবে (গতবারের লকডাউনে সরকার এ প্রশ্নে অন্ধকারেই ছিল)। ফলে আইন লঙ্ঘনকারী নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সুবিধা হবে, আর

২) যে সমস্ত কন্ট্রাক্টর ও সংস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়োগ করা সত্ত্বেও আইন মোতাবেক নিজেদের নথিভুক্ত করায়নি তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কিন্তু ভারতের বিশাল শ্রম বাজারকে পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রণ করার প্রশ্নে সরকারের কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি নেই। একদিকে, প্রায় ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ, যারা সমস্ত ধরনের শ্রম আইনের বাইরে, তাঁদের জন্য রয়েছে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা যার রূপায়ণের পথে রয়েছে সহস্র বাধা, ঢিলেমি, সরকারী মেশিনারি যে প্রশ্নে চরম উদাসীন। বিপরীতে, সহজে ব্যবসা করার পরিমন্ডল তৈরি করার জন্য ও পুঁজির অবাধ বিনিয়োগের স্বার্থে শ্রম বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার যাবতীয় দায়দায়িত্ব থেকে সরকার নিজের হাত গুটিয়ে নিচ্ছে, শ্রম আইনের আওতা থেকে মুক্ত করছে নিয়োগকর্তাদের।

শ্রম কোড আসার পর আগের শ্রম আইন এখন অচল। আবার নিয়ম বিধি বা রুলস তৈরি না হওয়ায় নতুন কোড কার্যকর হতে পারছে না। সরকারগুলো যেন এখন অথৈ জলে।

এই ধরনের আইনী শূন্যতা স্বাধীন ভারতবর্ষ আগে কখনও দেখেনি।

– অতনু চক্রবর্তী 

খণ্ড-28
সংখ্যা-20