ত্রিপুরায় সর্বাধিক পরীক্ষা ও সর্বজনীন টিকাদানের দাবি
universal vaccination in Tripura

ত্রিপুরায় ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস করোনা ভেরিয়েশন নিয়ে, টিকা নিয়ে, মৃত্যু নিয়ে তথ্য গোপন করে ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে গণসংক্রমণ এলাকা চিহ্নিত করে সর্বাধিক পরীক্ষা ও টিকাদান যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। এই দাবি তুলেছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন।

রাজ্যে বিপদজনক ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাস করোনা প্রজাতির সংক্রমণ নিয়ে গত ১৩ জুলাই সিকিম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বিশেষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা শোনা যায়নি। গতানুগতিক সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণের কথাই বলা হয়েছে। আর দোষ চাপানো হয়েছে জনগণের কাঁধে। দেশে ৭৩টি জেলায় সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ। তারমধ্যে ৪৬ শতাংশ ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও সিকিমে। ত্রিপুরায় সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নীচে নামছেনা। আগরতলা পুর এলাকায় তা গড়ে ১০ শতাংশ। শুধু জুন মাসে মৃত্যু হয় ১৬৩ জনের। ১২ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ৭১৪ জনের। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুয়াত। ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস দুটোই ভয়ঙ্কর সংক্রামক ও ধ্বংসকারী। করোনা তার আলফা ভেরিয়েশন থেকে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাসে উন্নীত হয়েছে। সঙ্গে আছে কাপ্পা প্রজাতি। আর এর সংক্রমণ ত্রিপুরায় ছড়িয়ে পড়েছে ছয় জেলায়। এই সংক্রমণ আটকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অথচ এখনো এরজন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেই। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস সংক্রমণ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্য সরকার তা অনুসরণ করবে। আজ প্রধানমন্ত্রীও কোনও দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেননি।

কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের এই উদাসীনতা দেখে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন গভীর চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আমাদের দাবি –

(১) রাজ্যে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থা হিসাবে গণসংক্রমণের এলাকা চিহ্নিত করে এলাকাগুলিকে ঘেরাও করে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং সহ যুদ্ধকালীন তৎপরতার সাথে সর্বাধিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি করছে। যাতে যে কোনো প্রকারে এর উৎস খুঁজে বের করা এবং সংক্রমণকে আটকানো যায়। সংক্রমণের হারকে টেনে নীচে নামানো যায়। এরসাথে সর্বাধিক টিকাদান করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারণ জুলাই মাসে পরীক্ষা ও টিকাদান দুটোই মারাত্মকভাবে কমেছে। জুনে গড়ে দৈনিক পরীক্ষা ছিল ১৫ হাজার। জুলাই মাসে পরীক্ষা ৪ হাজারের কম আর দৈনিক টিকাদান জুলাই মাসে ১০ হাজারের কম। জুন মাসে তা অনেক বেশি ছিল। ৮৪ দিন পার হয়েছে এমন তিন লক্ষ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। অথচ জুলাই মাসের প্রাথম ১১ দিনে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৪,২০৯ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না মানুষ। ১৮-৪৪ বয়সের গ্রুপে ৬ লক্ষের বেশি মানুষ এখনো প্রথম ডোজ পাননি। যেখানে ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাস প্রজাতির সংক্রমণ ঘটে গেছে।

(২) এখনই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রাথমিক ইউনিট পর্যন্ত পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ গ্রামে ও প্রত্যন্ত এডিসি এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু ছড়িয়ে পড়েছে।

(৩) ভেরিয়েশন বিতর্কে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ লুকানোর চেষ্টা ও দায়সারা মনোভাব স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীরও কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

(৪) টিকা নিয়ে, কোভিডে মৃত্যু নিয়ে, মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে উচ্চ আদালতে ত্রিপুরা সরকারের তথ্য গোপন করার প্রয়াস প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই সরকার তথ্য গোপন করে তার ব্যর্থতাকে ঢাকতে পারবেনা। বরং সাহসের সাথে সঠিক তথ্য প্রকাশ করলে দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটে।

(৫) কোভিডে মৃতদের পরিবারকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পোস্ট কোভিড মৃতদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(৬) রেশনে মাথাপিছু দশ কেজি করে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, মশালা দিতে হবে। ভর্তুকি প্রত্যাহার করে মূল্যবৃদ্ধি করা চলবে না।

(৭) রেগা ও টুয়েপ প্রকল্পে মাসে ১৭ দিন করে কাজ ও দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৩৪০ টাকা করতে হবে।

(৮) আয়কর আওতাভুক্ত নয় এমন পরিবারকে আগামী ছ’মাস প্রতি মাসে ৭,৫০০ টাকা নগদ সহায়তা করতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-26