বিবৃতি
জেল হেফাজতে ফাদার স্ট্যান স্বামীর হত্যার বিরুদ্ধে শোক ও প্রতিবাদে সোচ্চার হন
Fr Stan Swamy's Custodial Killing

৮৪ বছর বয়সী জেসুইট সমাজ সেবক ফাদার স্ট্যান স্বামীর হেফাজত-হত্যার বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ড সহ সমগ্র ভারতের দরিদ্র নিপীড়িত জনতার ক্ষোভ ও শোকের অংশীদার সিপিআই(এমএল)। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) মোদী-শাহ রাজের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। ‘ভীমা কোরেগাঁও মামলা’র পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশের যেসব অগ্রণী মানবাধিকার কর্মীরা, এনআইএ তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। এবং জামিন না দিয়ে অনির্দিষ্টকাল বিনা বিচারে কারাগারে ফেলে পচানোর জন্য কুখ্যাত ইউএপিএ ধারা চাপিয়েছে। ফাদার স্ট্যান স্বামীকেও এই মামলার সূত্রেই গ্রেপ্তার করেছিল ওরা।

এনআইএ এবং মোদী-শাহ রাজ খুব ভালো করেই জানে যে ভীমা কোরেগাঁওয়ের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা ভিত্তিহীন, হাস্যকর। ওরা ভালো করেই জানে যে শুনানি চললে শেষ পর্যন্ত সকল অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পাবে। কিন্তু ইউএপিএ ধারায় আটক করে তারা এই ‘বিচার প্রক্রিয়া’কেই হেফাজত-নির্যাতনের কাজে এমনকি মৃত্যুদণ্ডের কাজে লাগিয়ে নিতে চেয়েছে।

ফাদার স্ট্যান স্বামীর জামিনের শুনানিপর্ব ভারতের বিচারবিভাগের ইতিহাসে এক অত্যন্ত কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে গণ্য হবে। কুখ্যাত এডিএম জাবালপুর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একদা জরুরি অবস্থার হাত থেকে সাংবিধানিক স্বাধীনতা রক্ষা করতেও ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু স্ট্যান স্বামীর জামিন-শুনানি তার থেকেও হীন নজির স্থাপন করল। এই শুনানিগুলিতে বিচারকেরা দুটি গোটা মাস অতিবাহিত করে দিয়েছে শুধুমাত্র ফাদার স্ট্যান স্বামীর জল খাওয়ার অসুবিধা দূর করে একটা স্ট্র ব্যবহার করার অনুমতি দিতে। বৃথাই তিনি বারবার আবেদন জানিয়েছেন যে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না, জেলসঙ্গীরা চামচ দিয়ে খাইয়ে দিলে তবেই কেবল খেতে পারেন। এইসব আবেদন আদালত উড়িয়ে দিয়েছে ‘বার্ধক্যের লক্ষণ’ বলে। বিচারাধীন বন্দীর জামিন পাওয়ার কারণ হিসেবে এগুলো নাকি গ্রাহ্যই হবেনা। যে যে বিচারক ফাদার স্ট্যান স্বামীর জামিন নাকচ করেছেন তাঁদের সকলের হাতে এই হত্যার রক্ত লেগে থাকবে।

Rage and Mourn Fr Stan Swamy

 

যে তদন্তকারী সংস্থাগুলি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভূয়ো মামলা সাজিয়ে বিচারাধীন অবস্থাতেই জেলের ভেতর নির্যাতন এমনকি মৃত্যুর ব্যবস্থাপনা পাকা করেছিল সেই সব সংস্থারই মাথায় বসে আছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিহাসের বিষয় হল, এই অমিত শাহ আবার ২১ মাস চলা জরুরি অবস্থায় কীভাবে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ নেমেছিল তার বর্ণনা দিয়ে ধিক্কার জানিয়ে ইংরেজি দৈনিকপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছেন।

ফাদার স্ট্যান স্বামীর জন্য শোকদুঃখ প্রকাশ যথেষ্ট নয় – এই হেফাজত-হত্যার প্রতিবাদে গর্জে ওঠা জরুরি। ফাদার স্ট্যান স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের একমাত্র পথ হল ভারতের সবচেয়ে নিপীড়িত মানুষের জন্য সুবিচার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলা এবং যে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা আজ ভারত শাসন করছে তাদের প্রতিটি হামলার বিরুদ্ধে সাহসভরে রুখে দাঁড়ানো।

- সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটি

খণ্ড-28
সংখ্যা-25