আবেদন
চিঠিপত্র
Letter

সম্পাদক সমীপেষু,
আজকের দেশব্রতী

১৯ আগস্ট ২০২১ তারিখের সম্পাদকীয় নিয়ে কয়েকটি কথা।

২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার ‘টুইন টাওয়ারস্’ ধ্বংসে, প্রায় চার হাজার অসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। আমেরিকা এই ধ্বংসলীলার জন্য আলকায়দা ও তার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার খবর অনুযায়ী বিন লাদেন সেই সময় আফগানিস্তানে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিবান সরকারের কাছে বিন লাদেনের হস্তান্তর দাবি করে। কিন্তু তালিবান সরকার হস্তান্তরে অস্বীকার করে।

৭ অক্টোবর ২০০১ পশ্চিমী জোট আফগানিস্তানে বোমা বর্ষণ শুরু করে। আমেরিকা এবং ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ‘নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’ নামে তালিবান বিরোধী একটা আফগান মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে তালিবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ১৩ নভেম্বর ২০০১ সালে কাবুলের পতন হয়। ‘আল কায়দা’ পাকিস্তান-আফগান সীমন্তে আশ্রয় নেয়। বেশ কয়েক বছর পর মার্কিন বাহিনী আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে।

আফগানিস্তানকে আক্রমণ করে আল কায়দাকে পরাজিত করা, তালিবানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার মার্কিন উদ্দেশ্য সফল হয়। এই অভিযানে ‘নারী স্বাধীনতা’ বা অন্য কোনও মহৎ উদ্দেশ্য ছিল না। যত দিন গেছে আফগানিস্তান আমেরিকার গলায় কাঁটা হিসাবেই ছিল। এখন সেই কাঁটা উপড়ে ফেলে দিতে চাইছে।

দেশব্রতী সম্পাদকীয় লিখেছে, “আফগানিস্তানে তালিবানদের আরেকবার ক্ষমতা দখল বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। উদ্বেগের কেন্দ্রে আছে নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন। ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সেনা অভিযান চালানোর অন্যতম যুক্তি হিসেবে ‘নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই’কে সামনে তুলে ধরেছিল। সেই সময়কার আফগান নারীকে তুলে ধরা হয়েছিল অধিকারহীনতার প্রতীক হিসেবে। নিদারুণ বাস্তবতা থেকে আফগান মহিলাদের মুক্ত করার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে মার্কিন মিলিটারি আগ্রাসন চালানো এক জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হয়েছিল।” (সম্পাদকীয়, দেশব্রতী, ১৯ আগস্ট ২০২১)

আমেরিকা “নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াইকে সামনে তুলে ধরেছিল।” আফগানিস্তান দখলের এই ‘মহান’ উদ্দেশ্য আগে আমরা জনতে পারিনি। মার্কিনীদের এতো মহান করে দেখাবার কারণ আমার এই ক্ষুদ্র মাথায় ঢোকেনি। একটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, যা শুনছি ও দেখছি প্রচারে সাম্রাজ্যবাদ ক্রমশ পিছনে চলে যাচ্ছে বা সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদকে একই বন্ধনীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। দেশব্রতী কি সেই আলোকেই সম্পাদকীয় লিখেছে? আমার মতো প্রবীণ সনাতনী বাম কর্মীর রজ্জুতে সর্পভ্রম হতে পারে, আমার ভুল শুধরে দিলে উপকৃত হব।

- নবেন্দু দাশগুপ্ত, বেলঘরিয়া

খণ্ড-28
সংখ্যা-32