মিহির রায়চৌধুরী স্মরণসভা
Memorial

“জেগে আছি আমরা, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও”

নকশালবাড়ি আন্দোলনের সহযোদ্ধা আজীবন কমিউনিস্ট বিপ্লবী প্রয়াত কমরেড মিহির রায়চৌধুরীর স্মরণসভা এবং তাঁর নামাঙ্কিত পাঠাগার ও অবৈতনিক কোচিং সেন্টারের উদ্বোধন হল গত ২২ আগস্ট বেহালা সরশুনা ব্যানার্জী পাড়া বাইলেনের এক কামড়ার ঘরে। বক্তব্য রাখেন ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর নীহার ভক্ত, মিহির রায়চৌধুরীর ভাই অশোক রায়চোধুরী, সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য জয়তু দেশমুখ, এপিডিআর প্রতিনিধি মদনমোহন হালদার, সিপিআই(এমএল) বেহালা লোকাল কমিটির পক্ষে শুক্লা সেন, অশোকনগর লোকাল কমিটি সম্পাদক অজয় বসাক, আইসা বেহালা জোনাল সহ-সম্পাদক অত্রি, জোনাল সভাপতি শুভদীপ, সিপিআই(এমএল) কলকাতা জেলা সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের রাজ্য সম্পাদক নীতীশ রায়। কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার কর্মসূচি শেষ হয়। পাঠাগার উদ্বোধনের ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন দেখা যায়, তারা শুভকামনা করেন।

 

মিহির রায়চৌধুরী স্মারক লাইব্রেরী : এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস

স্মৃতি বেঁচে থাকবে সমকালের মাঝে
“হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়।
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।”
- শঙ্খ ঘোষ

বলা যায় অসাধ্যসাধন! ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্বার্থসর্বস্ব আজকের এই সময়কালে কারও ঘরবাড়িকে সংগঠনের আওতায় নিয়ে আসা খুব একটা সহজ কাজ নয়! কিন্তু এই কঠিন কাজটা সম্ভব হয়ে উঠলো দুই প্রজন্মের মূল্যবোধ আর স্পর্ধিত উদ্যমের সমন্বয়ে। একদিকে প্রয়াত কমরেড মিহির রায় চৌধুরী। যিনি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কলকাতার বেহালা এলাকার সরশুনায় তাঁর এক কামরার ফ্ল্যাটে উদ্বোধন করা হল স্মারক লাইব্রেরি ও কোচিং সেন্টার। না, মিহিরদা কোনও দানপত্র বা লিখিত কাগজপত্র দিয়ে যাননি। চলে যাওয়ার আগে সেই সুযোগটুকুও পাননি। সহায়তা করলেন উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে তাঁর আদি নিবাসে বসবাসকারী মিহিরদার পরিবার। আজকের দিনে যা সত্যিই বিরলতম। ৭০ দশকে নকশালবাড়ির আদর্শে দাদার আত্মত্যাগ, আজীবন কমিউনিষ্ট মূল্যবোধ ও সক্রিয়তার প্রতি মিহিরদার একমাত্র উত্তরাধিকারী তাঁর ভাই ও সমগ্র পরিবারের মধ্যে রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা। এখান থেকে গড়ে ওঠে তাঁদের দায়বদ্ধতা। মিহিরদার স্মৃতি জাগরুক করে রাখার লক্ষ্যে তাঁর ঘরটিকে লাইব্রেরি হিসাবে ব্যবহারে পরিবারের দ্বিধাহীন অনুমোদন পাওয়া গেল। বোঝা গেল স্বপ্নের পাখীগুলো সব মরে যায়নি!

অপর দিকে রয়েছে বেহালা সরশুনা এলাকায় এগিয়ে আসা আইসার এক ঝাঁক উজ্জ্বল ছাত্র যুবরা, যারা মিহিরদার সাথে ঘনিষ্ঠতায় তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল প্রকৃত কমিউনিস্টের তাৎপর্য, তাঁর জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছিল ওদের রোল মডেল। মিহিরদা ছিলেন একাধারে ছাত্রযুবদের বন্ধু এবং আদর্শগত শিক্ষক। তাই মিহিরদাকে অন্তর থেকে ভালোবেসে ছাত্র যুবদের নাছোড়বান্দা প্রচেষ্টা আর উদ্যমে শুরু হল লাইব্রেরী আর কোচিং সেন্টার। গঠনমূলক সামাজিক কর্মকান্ডের পথে চলা। এভাবেই বিপ্লবী সংগ্রাম তথা অনুশীলনের আলোর মশাল অথবা দীর্ঘস্থায়ী অভিযানের ব্যাটন চলে আসে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের হাতে।

এলাকার কিছু মানুষ নানা অজুহাতে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু সর্বস্তরের মানুষের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়ে মিহিরদা এলাকার জনজীবনে যে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে গেছেন এবং পাড়ার নবীন প্রজন্মের ছাত্ররা যেভাবে প্রত্যয়ের সাথে এগিয়ে এসেছে, সেই জোড়ালো প্রত্যুত্তরের মুখে অচিরেই সমস্ত বাধা দূর হয়ে যায়। লাইব্রেরি চালু হয়। এভাবেই মিহিরদার স্মৃতি অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। তাঁর আকাঙ্খিত আটটা নটার সূর্যরা নিয়ে আসবে নতুন বসন্ত। এই বিশ্বাস সঞ্চারিত করতে সার্থক হবে সরশুনার ব্যানার্জী পাড়া লেনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তাঁর স্মৃতিচিহ্ন। আজীবন বিপ্লবী কমিউনিস্ট কমরেড মিহির রায়চৌধুরী লাল সেলাম।

- জয়তু দেশমুখ

খণ্ড-28
সংখ্যা-32