খবরা-খবর
আফগান জনতার লড়াইয়ের সংহতিতে প্রচার ও প্রতিবাদ
campaign and protesting

সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, দশ থেকে দশ হাজার, ফেমিনিস্টস ইন রেসিস্টেন্স, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, উমেন ফর উমেন, দুর্বার, ডব্লিউএসএস, এনএফআইডব্লিউ’র ডাকে, ২৩ আগস্ট কলকাতার মৌলালী মোড়ে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আফগান জনগণের সংহতিতে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ এবং তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত হয়।

২০২০’র ফেব্রুয়ারীতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা তালিবানদের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে আফগান দেশের সরকার, জনপ্রতিনিধি বা আফগান নারীদের উপস্থিতি ছাড়াই (যে কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশিকা অনুযায়ী মহিলাদের উপস্থিতি আবশ্যক)। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী কূটনীতির ফলাফল হিসাবে আফগানিস্তানের শাসন ব্যবস্থার হস্তান্তর হল মৌলবাদী তালিবানদের হাতে। ক্ষমতায় এসেই তারা ঘোষণা করেছেন নারীর অধিকার সীমাবদ্ধ থাকবে তাদের স্থির করা ধর্মীয় আইনের লক্ষণরেখার মধ্যে। ক্ষমতায় আসার পর নারী, সাংবাদিক ও তালিবানদের বিরুদ্ধে মুখর যেকোনো মানুষকে চুপ করাতে চলছে নির্মম দমন। তালিবানি শাসন থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টায় দুইজন আফগান যুব জাতীয় ফুটবলার ও ডাক্তার মারা গেছেন। তালিবানরা আফগান মেয়েদের সংবাদ পরিচালনার কাছ থেকে বলপূর্বক সরিয়ে পুরুষদের নিয়ে আসছে। মতপ্রকাশের যেকোনো প্রয়াসকে স্তব্ধ করে দিতে বেপরোয়া মৌলবাদী তালিবানরা। এর বিরুদ্ধে আফগান মানুষেরা নিজেদের জান বাজি রেখে, জাতীয় পতাকা কাঁধে তালিবানদের ক্ষমতা দখলকে অস্বীকার করছেন এবং সাংবিধানিক ভাবে নির্বাচনের দাবি করছেন। অকুতোভয় আফগান মেয়েদের দেখা যাচ্ছে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে জনগণের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে।

পাশাপাশি আমাদের দেশে আরএসএস, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি আফগানিস্তানের পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘৃণ্য কর্মসূচিতে নেমে পড়েছে। ধর্মীয় বৈষম্যের ভিত্তিতে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের মধ্যে শুধুমাত্র হিন্দু ও শিখদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী মানসিকতার নির্লজ্জ পরিচয় দিয়েছে।

আফগানিস্তানের কুইয়্যার-নারী গণতন্ত্রকামী মানুষের স্বাধীনতার লড়াইয়ের পাশে সংহতির বার্তা নিয়ে ও তালিবানের ছুতোয় ভারতে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলা আরএসএস বিজেপিকে রুখে দিতে, সারা দেশের সাথে মৌলালি সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদী সভা অনুষ্ঠিত হয়। মৌলালির সভায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন।

২৩ আগষ্ট সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ গ্রামাঞ্চলে এবং বাখরাহাটে “স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আফগান জনগনের পাশে দাঁড়ান, সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ এবং তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে একত্রিত হোন” আহ্বানে কর্মসূচি সংগঠিত হয়। বাখরাহাটের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদিকা কাজল দত্ত সহ মহিলা সমিতির সদস্যরা। সারা ভারত কিষাণ মহাসভার জেলা সম্পাদক দিলীপ পাল ছাড়াও লোকাল কমিটির সম্পাদক নিখিলেশ পাল, কমিটির সদস্য সন্দীপ ধাড়া, নেত্রী পূর্ণিমা হালদার সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন ও সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে সভা শেষ হয়। বজবজ গ্রামাঞ্চলে দেবযানী গোস্বামী, অঞ্জনা মালের নেতৃত্বে কর্মসূচি সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লোকাল সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দত্ত, কমিটির সদস্য শ্যামসুন্দর গোস্বামী সহ মহিলা সমিতির সদস্যা এবং ছাত্রী কমরেডরা।

অশোকনগরে আফগানিস্তানে আমেরিকার মদতপুষ্ট তালিবান বাহিনীর নারী, শিশু সহ নাগরিকদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে এবং এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অপচেষ্টা প্রতিহত করতে ২৩ আগস্ট সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির অশোকনগর শাখার পক্ষ থেকে বিক্ষোভসভা করা হয়। বক্তব্য রাখেন সমিতির আঞ্চলিক নেত্রী জয়শ্রী দাস ও রীনা মজুমদার সহ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী অনির্বাণ দাস ও সিপিআই (এম-এল) এরিয়া সম্পাদক অজয় বসাক। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ছাত্রী মেঘনা মজুমদার।

এছাড়াও আইপোয়ার একক উদ্যোগে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগর, বেলঘরিয়া, খড়দহ, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর, বাকরাহাট ইত্যাদি অঞ্চলে আফগানিস্তানের মানুষদের লড়াইয়ে পাশে থাকার বার্তা নিয়ে পথসভা ও পোস্টারিং হয়। বক্তব্য রাখেন আইপোয়ার জেলা নেতৃত্ব ও অন্যান্যরা।

খণ্ড-28
সংখ্যা-32