লখিমপুর খেরী থেকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন তথ্যানুসন্ধানী দলের রিপোর্ট
Report from Lakhimpur

কৃষক গণহত্যার বর্বর ঘটনার অব্যবহিত পরেই গত ৩ অক্টোবর সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তরপ্রদেশ ইউনিট থেকে ৬ সদস্যের এক তথ্যানুসন্ধানী দল লখিমপুর খেরির তিকোনিয়া পরিদর্শন করে। এই দলে ছিলেন সারা ভারত কিষাণ মহাসভা (এআইকেএম)-এর জাতীয় সম্পাদক ঈশ্বরী প্রসাদ কুশোয়াহা, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি (আইপোয়া)-র রাজ্য সভানেত্রী কৃষ্ণা অধিকারী, সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি (আয়ারলা)-র জাতীয় সভাপতি শ্রীরাম চৌধুরী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ওমপ্রকাশ সিং ও আফরোজ আলম এবং রাজ্য কমিটির সদস্য রাজেশ সাহানি।

লখিমপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত কষক নেতা তেজিন্দর সিং ভির্ক ও অন্যান্য আহত কৃষকদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে দলটি নিহত কৃষকদের মরদেহ নিয়ে চলতে থাকা প্রতিবাদ স্থলে যায়। দলের সদস্যরা শহীদ কৃষকদের শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদদের পরিবারের মানুষ, প্রতিবাদরত কৃষক জনতা ও স্থানীয় মানুষের সাথে দেখা করে কথা বলে ঘটনার বিশদ তথ্য সংগ্রহ করেন।

সকলেই তাঁদের জানান যে, ৩ অক্টোবর লখিমপুরে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য্য এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও লখিমপুরের সাংসদ অজয় কুমার মিশ্র টেনির একটি কর্মসূচি ছিল। এরপরে কেশব মৌর্য্যের যাওয়ার কথা ছিল টেনির পৈতৃক ভিটা লখিমপুর খেরির তিকোনিয়ায়। কৃষকরা এটা জানতে পেরে টেনির কৃষক-বিরোধী বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ও কালো পতাকা দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। এটা লক্ষ্যণীয় যে, টেনি হুমকির সুরে বলেছিল, “১০-১৫ জন ওখানে বসে আছে, এরপর যদি আমরাও যাই তাহলে পালানোর পথ পাবে না; আমরা তোমাদের ২ মিনিটে সোজা করে দেব, আমি নিছক একজন মন্ত্রী বা সাংসদ বা বিধায়ক নই। সাংসদ হবার আগে থেকে যারা আমাকে চেনে তারা জানে যে, আমি কোনো চ্যালেঞ্জ থেকে পালিয়ে যাই না। যেদিন আমি চ্যালেঞ্জটা নেব সেদিন তোমাদের কেবল পালিয়া নয়, ছাড়তে হবে লখিমপুরও ... এটা মনে রেখো”।

কৃষক ও স্থানীয় অধিবাসীরা তথ্যানুসন্ধানী দলকে জানান যে, অজয় কুমার মিশ্র টেনির অপরাধের ইতিহাস রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি খুনের মামলা রয়েছে যার বদলা নিতে সে ‘কৃষকদেরকে একটা শিক্ষা দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নেয় এবং এই গণহত্যার পরিকল্পনা সেই সিদ্ধান্তেরই অংশ।

Lakhimpur Kheri

 

ঘটনার বিবরণ

বড় সংখ্যক কৃষক ঐদিন তিকোনিয়া হেলিপ্যাডে কেশব মৌর্য্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টেনিকে কালো পতাকা দেখিয়ে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেন। ফলস্বরূপ কেশব মৌর্য্য তার যাত্রাপথ বদলাতে বাধ্য হয়। সেদিনের সফল প্রতিবাদ শেষে ফেরার সময়ে অজয় টেনির পুত্র আশীষ মিশ্র ওরফে মনু সেখানে সশস্ত্র গুণ্ডাবাহিনী বোঝাই একটি গাড়ির কনভয় নিয়ে পৌঁছায় এবং পিছন থেকে এসে নির্মমভাবে কৃষকদেরকে গাড়ি চাপা দিয়ে দেয়। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতা তেজিন্দর সিং ভির্ক সহ প্রায় ১২ জনের বেশি কৃষক গুরুতর জখম হন। একজন তরুণ কৃষক গুরবিন্দর সিং আক্রমণকারীদের একজনকে ধরে ফেলেন, সেইজন্য আশীষ মিশ্র তাঁর মাথায় গুলি করে। মোট ৪ জন নিহত কৃষকের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয় গাড়ি চাপা পড়ে এবং ১ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তথ্যানুসন্ধানী দলের সদস্যরা গুরবিন্দর সিংয়ের মাথার ডানদিকে গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানটিও দেখেন। তাঁদেরকে এটাও জানানো হয়েছে, যখন আক্রমণকারীদেরকে কৃষকরা ঘিরে ধরেন তখন একটি গাড়ি উল্টে গিয়ে ৩ জন আক্রমণকারী আহত হয়, যাদেরকে কৃষকরা ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে কৃষকরা জানতে পারেন যে, ঐ আক্রমণকারীরা মারা গিয়েছে। দলের সদস্যরা এটাও জানতে পেরেছেন যে, সাংবাদিক রমন কাশ্যপও আক্রমণকারীদের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান।

শহীদ কৃষকদের তালিকা

দলজিৎ সিং, নানাপাড়া, বাহরাইচ (৩৫), গুরবিন্দর সিং, দোহরানিয়া খামার (১৮), লাভপ্রীত সিং চৌখড়া (২০), নছত্তর সিং ধাউহারা, খিরি (৫৫)।

তথ্যানুসন্ধানী দলের সদস্যরা সেখানে প্রতিবাদরত মানুষদের উদ্দেশ্যে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার রাখা দাবিসমূহের পাশাপাশি তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অপসারণও দাবি করেন। এফআইআর দায়ের হওয়া পর্যন্ত দলের সদস্যরা সেখানে ছিলেন, এরপর শহীদ কৃষক পরিবারগুলির জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হয় এবং শহীদ কৃষকদের মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়।

খণ্ড-28
সংখ্যা-37