সাম্প্রদায়িক সহিংসতা : বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব
Concerns and Proposals

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও নোয়াখালীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন ও নিন্দনীয়। এই ভয়াবহ অমানবিক ঘটনায় আমরা ভীষণ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে ‘কোরআন রাখার’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ঘটার পর প্রশাসন আরও সতর্ক হলে হাজীগঞ্জসহ অন্যত্র এর পুনরাবৃত্তি ঘটত না।

‘কোরআন অবমাননার’ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে আমাদের সন্দেহ। কোনো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য এই ঘটনা সাজিয়ে থাকতে পারে। ঘটনা সাজিয়ে তারা সহিংসতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কিছু মানুষ ষড়যন্ত্রীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। জনগন সচেতন হলে ষড়যন্ত্রীরা কোনোভাবেই তাদের ষড়যন্ত্র সফল করতে পারত না। জনগণকে সচেতন করা, তাদের মননকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার দায় রাষ্ট্রের। কুমিল্লার ঘটনায় আমরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এমন সহিংসতায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধ করা আবশ্যক। এব্যাপারে আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি। সাম্প্রদায়িকতা একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে ধারাবাহিক জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা যেতে পারে। দেশের শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, আলেম, পুরোহিতসহ সব ধর্মের নেতাদের নিয়ে, সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে, আলোচনা করে এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল চিহ্নিত করা যেতে পারে। আমরা এমন একটি জাতীয় সংলাপ কামনা করি, যার মধ্য দিয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিবৃতিদাতা: ইমতিয়ার শামীম, শাহনাজ মুন্নী, আহমাদ মোস্তফা কামাল, কবির হুমায়ূন, শামীম রেজা, আলফ্রেড খোকন, চঞ্চল আশরাফ, টোকন ঠাকুর, রাজীব নূর, শাহেদ কায়েস, শোয়াইব জিবরান, ওবায়েদ আকাশ, জোবায়দা নাসরিন, রুমা মোদক, পাপড়ি রহমান, লোপা মমতাজ, ভাগ্যধন বড়ুয়া, হেনরী স্বপন, সাইমন জাকারিয়া, আফরোজা সোমা, রেজা ঘটক, মতিন রায়হান, বিধান রিবেরু, মোজাফ্ফর হোসেন, পিয়াস মজিদ, মামুন খান, মনিরুজ্জামান মিন্টু, অঞ্জন আচার্য, অরবিন্দ চক্রবর্তী, সরকার আমিন, স্বকৃত নোমান।

বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের আট দফা দাবি

১) এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা।

২) রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী ও রংপুরে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও প্রতিটি ঘটনার বিচার করা। এবং অতীতে সাম্প্রদায়িক হামলার হোতা অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকাশ্যে কর্মরত দেখা যায়। তাদেরকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও বিচার করা।

৩) ফেসবুক, ইউটিউব সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ধর্মসভা তথা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক ও নারীববিদ্বেষী বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া।

৪) স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।

৫) বহু জাতি এবং ধর্মসম্প্রদায়ের এই দেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করা।

৬) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা।

৭) সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের সংস্কৃতিচর্চার (নাটক, গান, নৃত্য, যাত্রাপালা, পালাগান, বাউলগান) প্রসার ঘটানো। পাশাপাশি স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় প্রাণিত করা।

৮) দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।

- সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ, ঢাকা

খণ্ড-28
সংখ্যা-37