কমরেড মুকুল চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবসান
Comrade Mukul Chatterjee

Chatterjee passed awayনদীয়া জেলায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রথম সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন তিনি। প্রয়াত কমরেড মুকুল চট্টোপাধ্যায় পলাশীপাড়ায় এক সুশিক্ষিত বামপন্থী পরিবারে এবং পরিমন্ডলে বড় হয়ে কৈশোর জীবনেই বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। বহু বিশিষ্ট ধরনের গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তিনি। নদীয়া জেলার বুকে খেলাধুলায় তাঁর বিরাট নামডাক ছিল। এছাড়া ছবি আঁকা, সঙ্গীত, তবলা বাদন প্রভৃতিতে ছিলেন খুবই পারদর্শী। তাঁর ছিল বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী অনুগামী। উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ববান ও শিক্ষিত যুবক মুকুল চট্টোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে সংশোধনবাদের সাথে রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে নদীয়া জেলায় বিপ্লবী মতাদর্শের ভিত্তিতে গঠিত ‘বলশেভিক কোর’এর সদস্য হন। তারপর সিপিআই(এমএল)-এর গঠনকাল থেকেই তারসাথে যুক্ত হন। ঘরবাড়ি ক্যারিয়ার ত্যাগ করে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকদের সাথে একাত্ম হওয়ার প্রক্রিয়ায় গ্রামে চলে যান। শোনা যায় সে সময় কৃষকদের সাথে মাঠে কৃষিকাজ করতে গিয়ে অনভ্যস্ত চেহারায় ক্ষতচিহ্ন বহন করেও তিনি নাকাশীপাড়া-চাপড়ার গ্রামাঞ্চলে সর্দার পাড়া বা সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলার কাজ করেছিলেন। অচিরেই তিনি গ্রামের জোতদারদের নজরে পড়ে যান, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৭২ সালে জেল থেকে ছাড়া পান। পরবর্তীতে তিনি এলাকার একটি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। এবিষয়ে তৎকালীন রাজ্য সরকার প্রবল বাধা সৃষ্টি করেছিলো, কিন্তু এলাকার ব্যাপক মানুষ তাঁর পক্ষে দাঁড়ায়। ১৯৭৯ সালে গণফ্রন্টের নদীয়া জেলা সভাপতি হন তার দাদা মনু চ্যাটার্জী। সেই সূত্রে সিপিআই(এমএল)-এর গণকার্যকলাপের প্রতি তাঁর নৈতিক সমর্থন ছিল। পরবর্তী জীবনে তিনি বামপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতেন। আজীবন সংস্কারমুক্ত মনন সম্পন্ন এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষ ছিলেন তিনি। গত ১৭ অক্টোবর তিনি নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। নদীয়া জেলায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মুকুল চট্টোপাধ্যায় লাল সেলাম।

খণ্ড-28
সংখ্যা-37