উত্তরাখন্ডে জাতীয় সুরক্ষা আইন চাপালো ডবল ইঞ্জিনের সরকার
Double Engine Government

সাড়ে চার বছরে উত্তরাখন্ডে বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের সরকারের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি একটি কীর্তিকে বেশ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন — সারা উত্তরাখন্ডকে নিজের হোর্ডিং ও ব্যানারে মুড়ে দিয়েছেন। এরমধ্যে একটি হোর্ডিং-এ বেশ ফলাও করে বলা হয়েছে নীতি আয়োগের বিচারে উত্তরাখন্ড স্থায়ী উন্নতির সূচকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বপ্রথম নম্বরে আছে। ৪ অক্টোবরে যখন রাজ্যে জাতীয় সুরক্ষা আইন ৩ মাসের জন্য অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগু হলো তখন আমাদের ঐ হোর্ডিং-এর কথা স্মরণে এল। এটা অভাবনীয় এই কারণে যে, কোন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ হলেও এই আইন লাগু হয় না।

আদেশনামায় বলা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনার সম্ভাবনার জন্যই জাতীয় সুরক্ষা আইন চালু হল। তাই যদি হয় তাহলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য কিভাবে এক নম্বরে স্থান পেল। দু’টোই তো সত্যি হতে পারে না।

কারা তাহলে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে, যার জন্য এনএসএ লাগু হলো। সত্যি এটাই যে বিজেপির লোকেরা সাম্প্রদায়িক আবেগকে উস্কানি দিতে মগ্ন। যেদিন এনএসএ লাগু হলো সেদিনই বিজেপির দুষ্কৃতিরা ভাঙচুর চালায় ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটায় রুড়কির একটি গীর্জায়। দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা বরং গীর্জার পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠিন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। গীর্জার সিসিটিভি ক্যামেরা কেন বিজেপির লোকেরা ভাঙ্গলো এটা হলো প্রথম প্রশ্ন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কে তাদের দিয়েছে? গীর্জার মধ্যে যারা এই হিংসা ঘটালো তাদের বিরুদ্ধে কি মুখ্যমন্ত্রী এনএসএ লাগু করবেন?

সরকারি আদেশনামায় এনএসএ ১৯৮০ মোতাবেক ধারা-৩ এর উপধারা ৩ লাগু করার নিম্নলিখিত আদেশ দেওয়া হয়েছে।

১) যদি কোনও ব্যক্তি আইন অথবা প্রয়োজনীয় সামগ্রী অথবা পরিষেবায় বাধা দেয় তবে তাকে কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার গ্রেপ্তার করতে পারে।

২) রাজ্য সরকার যদি মনে করে এই ধরণের পরিস্থিতি রাজ্যের কোনও জেলায় ঘটতে পারে তাহলে সরকার ঐ জেলার জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনারকে এই ধারা প্রয়োগের অধিকার দিতে পারে।

উত্তরাখন্ডে এটাই ঘটেছে। সমস্ত জেলা শাসকদের তিনমাসের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কারণ প্রাথমিকভাবে ঐ রাজ্যে তিনমাসের জন্য এনএসএ লাগু হয়েছে।

প্রয়োজনীয় পরিষেবা আইনের অধীনে কালোবাজারি আটকানোর লক্ষ্যেই এনএসএ লাগু করা হয় কিন্তু মোদী সরকার কালোবাজারিদের ব্যাপক ছাড় দিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নই নেই।

এনএসএ’র অধীনে গ্রেপ্তার এবং অন্যান্য আইনে গ্রেপ্তারের পার্থক্য কোথায়? সাধারণভাবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রেপ্তারের কারণ জানানো হয়। কিন্তু এনএসএ’র অধীনে পাঁচ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তারীর কারণ জানানো হতে পারে এবং ব্যতিক্রমীভাবে পনের দিনের মধ্যে কারণ জানাতে হবে। এনএসএ’র ৫নং ধারা অনুযায়ী কোনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেআইনি, মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে না, যদি পরোয়ানাটি অস্পষ্ট বা অস্তিত্বহীন অথবা অপ্রাসঙ্গিক হয়। অর্থাৎ সরকার যে কোনও ব্যক্তিকে ভিত্তিহীন কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে।

সাধারণত সরকার কোনও ঘটনায় বা প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা লাগু করে যার অধীনে পাঁচজন বা ততোধিক ব্যক্তি কোনও একটি জায়গায় সমাবেশিত হতে না পারে। কিন্তু ১৪৪ ধারার বদলে এনএসএ লাগু করার অর্থ হলো ছুরির বদলে কামান দাগার মতো। উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে কে বোঝাবে ১৪৪ ধারা আর এনএসএ’র পার্থক্য !

এনএসএ লাগু যে অজ্ঞানতাপ্রসূত নয় এটা পরিষ্কার। জনগণের প্রতিবাদকে নির্মমভাবে দমন করার লক্ষ্যেই উত্তরাখন্ডের সরকার এই আইন লাগু করেছে। উত্তরাখন্ডের জনগণের ওপর উৎপীড়ন দ্বিগুণ করার জন্য ডবল ইঞ্জিন তৈরি।

- ইন্দ্রেশ মৈখুরী

খণ্ড-28
সংখ্যা-37