প্রতিবেদন
সিদ্দিক কাপ্পান গ্রেপ্তারের এক বছর – ভারতের গণতন্ত্রের ওপর বড় আঘাত
blow to India's democracy

সিদ্দিক কাপ্পানের গ্রেপ্তার ভারতের মাটিতে সাংবিধানিক অধিকারের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। দমনকারী আইনের অপব্যবহার, সংখ্যালঘুদের অধিকারের ওপর আক্রমণ এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের মতো বিজেপি সরকারের একের পর এক অগণতান্ত্রিক প্রবণতা এই একটি ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে। সিদ্দিক কাপ্পানের ওপর আক্রমণকে মানবাধিকার ও দেশের মানুষের বুনিয়াদি স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ হিসেবে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।

সিদ্দিক কাপ্পান কেরালার একজন সাংবাদিক। তিনি হাথরাসে ভয়াবহ ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকতা সূত্রে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছান। হাথরাসে পৌঁছানোর আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতা, হিংসার উস্কানি, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং সন্ত্রাসবাদী হওয়ার অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিট উদ্ভট। কাপ্পান নাকি সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেখাতে চান ভারতের মুসলমানরা আক্রান্ত! কিন্তু সত্যিই তো সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কাপ্পানের করা দাঙ্গার রিপোর্টিংগুলি নাকি সাম্প্রদায়িক! আক্রান্ত সম্প্রদায়ের কথা বললে সাম্প্রদায়িক! তাঁর লেখা নাকি পিএফআই নামক একটি সংগঠনকে সমর্থন করে! তাঁর কিছু লেখা নাকি কমিউনিস্ট এবং মাওবাদীদেরও সমর্থন করে। কিন্তু এগুলো কীভাবে অপরাধ হতে পারে?

এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও তারসাথে দমনকারী আইনগুলোর প্রয়োগ করে বিজেপি সরকারের পুলিশ দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চাইছে। তারা চায় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মানুষ যাতে একটিও কথা না বলে। দেশের বড় মিডিয়া তো ওদেরই দোসর, বাকি সকলকে ভয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা বিজেপি’র দেশের মসনদে টিকে থাকার এক অন্যতম অস্ত্র। সিদ্দিক কাপ্পানকে গ্রেপ্তার করে দেশের মিডিয়া এবং সংখ্যালঘু মানুষকে বিজেপি সরকার হুমকি দিতে চাইছে।

সিদ্দিক কাপ্পানের গ্রেপ্তারের এক বছর পূর্ণ হওয়ায় ‘দিল্লী ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস’, ‘প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘কেরালা ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস’ নামক সংগঠনগুলি দিল্লীর বুকে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে। প্রেস ক্লাব অফ ইণ্ডিয়ার সভাপতি উমাকান্ত লাখেরা জানান, “সিদ্দিক হাথরাসে পৌঁছানোর আগেই তাকে গ্রপ্তার করা হয়। অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ার পরেও এবং গ্রেপ্তারের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ না করা হলেও তাঁকে কোর্ট জামিন দেয়নি”। আমাদের বিচার ব্যবস্থাও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের রক্ষা করতে পারছে না। দেশের বিচার ব্যবস্থার দেউলিয়াপনা আমাদের দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক।

‘দিল্লী ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্ট’এর সুজাতা মাধক জানান যে, সিদ্দিক কাপ্পানের কেস সংবাদ মাধ্যমের ওপর আক্রমণ। তিনি বলেন, পরিকল্পনা করে প্রত্যন্ত এলাকায় কেস ফাইল করা হয় দিল্লীর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং অন্য রাজ্যের পুলিশ আসে প্রেপ্তার করতে, যেমন বিনোদ দুয়ার কেসে হয়েছিল। টুইটের জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেস ফাইল করা হচ্ছে, যেমন রাজদীপ সারদেশাই, মৃণাল পান্ডে এবং অন্যান্যদের ক্ষেত্রে হয়েছে। স্ক্রোলের সুপ্রিয়া শর্মার ওপর কেস করা হয়েছে কারণ তিনি বেনারসের ক্ষুধার্ত মানুষদের ওপর একটি আর্টিক্ল প্রকাশ করেছিলেন। নেহা দীক্ষিতের ওপর অনেকগুলি কেস চলছে কারণ তিনি শিশু পাচার নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন, রানা আয়ুবের ওপর কেস করা হয়েছে কারণ তিনি কোভিড পীড়িতদের ত্রাণ সরবরাহ করছিলেন। ইউএপিএ, এনএসএ এবং রাজদ্রোহ ইত্যাদি অপ-আইন সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা রোধ করার জন্য যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি সরকার।

দেশের সংবাদ মাধ্যমকে এই ভয়ের বাতাবরণ থেকে বের করে আনার জন্যে মানুষের প্রতিরোধ প্রয়োজন। বিচারব্যবস্থার দ্বারা সরকারের পদলেহনের বিরুদ্ধে সমস্ত স্তরের মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। সিদ্দিক কাপ্পানের মুক্তির লড়াই এই দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর লড়াই।

- প্রত্যুষ নন্দী

খণ্ড-28
সংখ্যা-37