ঘটনা ও প্রবণতা : দেশে ৩৩ লাখ শিশু অপুষ্ট
33 lakh children

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়”। দেশের ক্ষুধা সূচক নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশ পেল চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেখানে রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশের অন্তত ৩৩ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার। করোনা আবহে সেই সংখ্যাটা অনেকখানি বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

অপুষ্টিতে ভুগছে দেশের ৩৩ লাখেরও বেশি শিশু। তথ্য জানার অধিকার আইনে এক আবেদনের উত্তরে এমন তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকই। শুধু তাই নয়, এই ৩৩ লাখের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি গুরুতর অপুষ্টির কবলে পড়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র, বিহার এবং গুজরাট।

গত দেড় বছর ধরে চলতে থাকা করোনা অতিমারী পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে ঘা দিয়েছে যথেষ্ট। এদিনও মন্ত্রকের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, অতিমারীতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির আকাল গরিবদের মধ্যে আরও বাড়তে পারে। তথ্য জানার অধিকার আইনে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের করা এক আবেদনের উত্তরে মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে গুরুতর অপুষ্টির শিকার প্রায় ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২টি শিশু (সিভিয়ারলি অ্যাকিউট ম্যালনারিশড বা ‘স্যাম’) এবং মাঝারি তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে প্রায় ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৪২০টি শিশু (মডারেটলি অ্যাকিউট ম্যালনারিশড বা ‘ম্যাম’)। সব মিলিয়ে ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংখ্যাটা ৩৩ লাখ ২৩ হাজার ৩২২। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পোষণ’ ট্র্যাকার অ্যাপেই ধরা পড়েছে এই তথ্য।

এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট ভীতিপ্রদ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা (‘স্যাম’) শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯১ শতাংশ! যেখানে গতবার সংখ্যাটা ছিল ৯ লাখ ২৭ হাজার ৬০৬ জন, সেখানে এবারে তা বেড়ে ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় মাপকাঠিতে কিছুটা বদল করা হয়েছে। গত বছর সব মিলিয়ে ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ছ’মাস থেকে ছ’বছরের তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রকে। এবার পোষণ ট্র্যাকারের মাধ্যমে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করেছে কেন্দ্র, নির্দিষ্ট করা হয়নি শিশুদের বয়সও।

‘স্যাম’এর অর্থ, তাদের উচ্চতা অনুযায়ী শারীরিক ওজন খুবই কম থাকে এই শিশুদের। তাদের শরীরের ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা খুবই কম হওয়ায় যে কোনও রোগে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ৯ গুণ বেশি। যে শিশুরা ‘ম্যাম’এ ভুগছে, তাদেরও অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুর আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। অপুষ্টিতে ভোগা ওই শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে বলেই মনে করছেন এক বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক।

এই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, কিশোরী এবং তরুণীদের জন্য পোষণ অভিযান প্রকল্পও শুরু করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তা যে বিশেষ কাজে আসেনি, তা জানান দিচ্ছে কেন্দ্রের তথ্যই। ‘চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ’ সংস্থার সিইও এবিষয়ে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অতিমারি আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে এমন তীব্র আঘাত হেনেছে যে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে গত এক দশকে যতটা উন্নতি করা গিয়েছিল, তার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় মিড-ডে মিলও আর পাচ্ছে না দরিদ্র শিশুরা। এরফলে তাদের খাদ্য সঙ্কট আরও বেড়েছে।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে এমনিতেই নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের চেয়েও নীচে রয়েছে ভারত। ২০২০ সালে ভারত ছিল ৯৪তম স্থানে, সেখানে ২০২১তে ভারত নেমে গিয়েছে ১০১তম স্থানে।

- এই সময়, ৮ নভেম্বর ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-39