উপনির্বাচনের বার্তা: মোদী শাসনের বিরুদ্ধে বাড়ছে গণক্ষোভ
bypoll-pointers-anger

সামনের বছরের শুরুতে হতে চলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনগুলির প্রাক্কালে ১৩টি রাজ‍্যের ও কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলির মোট ৩টি লোকসভা ও ২৯টি বিধানসভা আসনে ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের ফলাফল ভারতের রাজনৈতিক আবহে এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত তুলে ধরল। সাধারণত উপনির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই যায়। কিন্তু এই উপনির্বাচন বিস্ময়কর কিছু ফলাফল সামনে এনেছে। সবচেয়ে অবাক করা ফল দেখা গেল বিজেপি শাসিত হিমাচল প্রদেশে। সেখানকার একমাত্র লোকসভা আসনটি এবং উপনির্বাচনের তিনটি বিধানসভা আসনই কংগ্রেস জিতে নিয়েছে। বিজেপি’র পক্ষে সবচেয়ে উল্লেখযোগ‍্য লাভ এসেছে তেলেঙ্গানায় যেখানে টিআরএস থেকে দলবদল করে আসা একজন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে বিজেপি।

অন‍্য যে রাজ‍্যে বিজেপি বিপুল লাভ করেছে তা হল আসাম। সেখানে বিজেপি ও তার জোটসঙ্গী ইউপিপিএল উপনির্বাচনের পাঁচটি আসনই জিতেছে। এই পাঁচটির মধ‍্যে চারটি আসনে এই বছরের গোড়াতেই সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস ও তার জোটসঙ্গী এআইইউডিএফ এবং বিপিএফ জিতেছিল। আসাম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের মত বিপুল জনবৈচিত্র‍্য ও সাংস্কৃতিক বহুত্ব সম্পন্ন এলাকায় বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধি শান্তি, সামাজিক সংহতি ও মানবাধিকারের পক্ষে ভীষণ বিপজ্জনক। আসামের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে পশ্চিমবাংলায় বিজেপি চারটি আসনেই বিপুল ভোটে পরাস্ত হয়েছে। এর মধ‍্যে দুটি আসনে তারা গত বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিল। বিজেপি দ্বিতীয় অবস্থান বজায় রেখেছে বটে তবে ভোট শতাংশের হিসেবে এবার বাম ভোটে সামান্য অগ্রগতি চোখে পড়েছে।

মূলধারার গণমাধ‍্যমের বিশ্লেষকেরা বিজেপি’র পরাজয় ও বিহারে তাদের জোটসঙ্গী জেডিইউ’র কোনোক্রমে জয় পাওয়াকে প্রয়াত নেতাদের প্রতি সহানুভূতির কারণ দেখিয়ে ব‍্যাখ‍্যা করছেন। কিন্তু হিমাচল, হরিয়ানা ও রাজস্থানে বিজেপি’র পরাজয় থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মোদী সরকার তথা বিজেপি’র বিপর্যয়কর নীতি ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কাজ করেছে। এমনকি কর্ণাটকেও বিজেপিকে একটি আসনে হারতে হয়েছে নতুন মুখ‍্যমন্ত্রীর নিজস্ব এলাকায়। রকেট গতিতে নিত‍্য প্রয়োজনীয় দ্রব‍্যের মূল্যবৃদ্ধি, উধাও হয়ে যাওয়া স্থায়ী কাজ ও কমতে থাকা আয় — এই মারাত্মক ত্রিবিধ সমাহারের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত গণক্ষোভ এই উপনির্বাচনগুলিতে জনগণের বড় অংশের মনে স্পষ্টতই যথেষ্ট ছাপ ফেলেছে। কৃষক আন্দোলনকে চূর্ণ করতে ও প্রতিবাদী কৃষকদের বদনাম করতে মোদী-যোগী-খাট্টার শাসন যা করে চলেছে তা এই ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বিজেপি’র বিরুদ্ধে এই ক্রমবর্ধমান গণক্ষোভ ও ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে দেওয়ার দৃঢ় সংকল্পের সাধারণ বার্তা এই উপনির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই গণক্ষোভকে শক্তিশালী গণসংগ্রামে চালিত করা ও তাকে নির্বাচনী ময়দানের কার্যকরী বিরোধীপক্ষ হিসেবে বদলে দেওয়াই ২০২২এ আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনগুলির আগে সবচেয়ে জরুরি কাজ হিসেবে থাকছে। আন্দোলনরত কৃষকদের সামনে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষক-বিরোধী মোদী সরকারকে শাস্তি দেওয়ার এবং সঙ্ঘ-বিজেপি বাহিনীর বিভাজনকামী বিপর্যয়কর রাজনীতিকে রুখে দেওয়ার এক চমৎকার সুযোগ। কার্যকরী বিরোধী ঐক‍্য অবশ্য এই প্রশ্নে আর এক চ‍্যালেঞ্জ। বিহারের জোট ভেঙে দুটি আসনে কংগ্রেস ও আরজেডি উভয়েরই প্রার্থী দেওয়াটা দুর্ভাগ‍্যজনক। আরজেডি যত ভোটে জেডিইউর কাছে হেরেছে কংগ্রেস যদিও তার থেকে কম ভোট পেয়েছে, কিন্তু জোটে এই ফাটল স্পষ্টতই ভুল বার্তা দিল।

(এমএল আপডেট সম্পাদকীয়, ২ নভেম্বর ২০২১)

খণ্ড-28
সংখ্যা-39